রথযাত্রার ১১ দিনে ১৪ লক্ষ পুণ্যার্থীর সমাগম ঘটেছে দিঘার জগন্নাথধামে, এক হাঁড়ি রসগোল্লা দিয়ে গর্ভগৃহে ঢুকলেন প্রভু

মঙ্গলবার তৃতীয় দিনে অনুষ্ঠিত হল নীলাদ্রি বিজয়। সেখানেও ঘটে এক আশ্চর্যজনক ঘটনা। ভাগ্যক্রমে ভালয় ভালয় মন্দিরে প্রবেশ করেন বলরাম ও সুভদ্রা।

Must read

তুহিনশুভ্র আগুয়ান, দিঘা: এ যেন দাম্পত্যের এক মধুর রসের সাক্ষী থাকলেন জগন্নাথভক্তেরা। ত্রিভুবনের অতুল ঐশ্বর্যের অধিকারিণী মা লক্ষ্মীর মানভঞ্জন করে একহাঁড়ি রসগোল্লা ও শাড়ি উপহার দিয়ে তিন দিন বাইরে থাকার পর অবশেষে গর্ভগৃহে প্রবেশ করলেন রাজাধিরাজ জগন্নাথদেব। মঙ্গলবার বিকেলে দিঘার জগন্নাথধামে নীলাদ্রি বিজয় উৎসবের অন্যতম উল্লেখযোগ্য ‘রসগোল্লা উৎসব’ দেখতে ভিড় জমালেন হাজার হাজার ভক্তেরা। রসগোল্লা বাংলার নিজস্ব সংস্কৃতির স্মারক। যা জগন্নাথের কৃপায় আধ্যাত্মিকতার মেলবন্ধনে শুধুমাত্র খাদ্যবস্তু নয়, হয়ে উঠল মানভঞ্জনের উপকরণও। জগন্নাথের সুমধুর এই দাম্পত্য লীলা দেখতে মঙ্গলবার সকাল থেকে দিঘা জগন্নাথধাম চত্বরে ভক্তেরা প্রহর গুনতে থাকেন। বিকেল পাঁচটার পর নীলাদ্রি বিজয়ের মাধ্যমে মন্দিরের ভেতর প্রবেশ করেন রাজাধিরাজ জগন্নাথ। জানা গিয়েছে, আষাঢ় মাসের শুক্লা দ্বিতীয়ায় রত্নবেদি ছেড়ে জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রা তিন ভাইবোনে মাসির বাড়ি গুন্ডিচা মন্দিরে চলে যান। এদিকে লক্ষ্মীর অনুমতি না নিয়ে চলে যাওয়ায় বেজায় ক্ষুব্ধ হন ধনসমৃদ্ধির দেবী। মাসির বাড়ি থেকে ফেরার পর জগন্নাথ রত্নবেদিতে প্রবেশ করতে গেলেই শুরু হয় গোলমাল। সদর দরজা আটকে দাঁড়িয়ে থাকেন স্বয়ং মা লক্ষ্মী। ফলে তিন দিন রথেই অপেক্ষা করতে হয় জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রাকে। মাঝে উল্টোরথের পরের দিন স্বর্ণবেশে দেখা দেন জগন্নাথ। মঙ্গলবার তৃতীয় দিনে অনুষ্ঠিত হল নীলাদ্রি বিজয়। সেখানেও ঘটে এক আশ্চর্যজনক ঘটনা। ভাগ্যক্রমে ভালয় ভালয় মন্দিরে প্রবেশ করেন বলরাম ও সুভদ্রা।

আরও পড়ুন-ইউনিয়ন রুম খোলা নিয়ে কড়া সিদ্ধান্ত শিক্ষামন্ত্রীর

কিন্তু জগন্নাথ প্রবেশ করতে গেলেই মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দেন দেবী লক্ষ্মী। স্ত্রীর মানভঞ্জনের জন্য এক হাঁড়ি রসগোল্লা নিয়ে আসেন জগন্নাথ। সঙ্গে ছিল একটি শাড়ি। রসগোল্লা এবং শাড়ি পেয়ে মান ভাঙে লক্ষ্মীর। মন্দিরে প্রবেশের অনুমতি পান জগন্নাথ। দিঘার জগন্নাথধামে প্রথমবারের এই মানভঞ্জন উৎসব দেখতে ভক্তদের উদ্দীপনা ছিল স্পষ্ট। বিকেল তিনটের পর মন্দিরের দরজা খুলে যেতেই লাইন দিয়ে হাজার হাজার ভক্ত প্রবেশ করেন মূল মন্দিরে। সেখানেই প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চলে দাম্পত্যলীলা। সন্ধ্যা নাগাদ জগন্নাথ প্রবেশ করেন গর্ভগৃহে। সেখানে পরে তাঁকে ভোগ অর্পণ করে চলে পুজোপাঠ। ভক্তদের মধ্যেও রসগোল্লা বিলি করা হয় মন্দির কর্তৃপক্ষের তরফে। জগন্নাথধাম ট্রাস্টের সদস্য রাধারমণ দাস বলেন, জগন্নাথের স্ত্রী দেবী লক্ষ্মীর অভিমানে এতদিন জগন্নাথ গর্ভগৃহে প্রবেশ করতে পারেননি। আজ নীলাদ্রি বিজয়ের মাধ্যমে রসগোল্লা উৎসব পালিত হল। রসগোল্লা এবং শাড়ি দিয়ে দেবী লক্ষ্মীর মানভঞ্জন করা হয়। এরপরই গর্ভগৃহে প্রবেশ করেন জগন্নাথ। এদিন জগন্নাথধামের পরিচালন কমিটির তরফে জানানো হয়, এবারের এই ১১ দিনের রথযাত্রা উপলক্ষে প্রায় ১৪ লক্ষ ভক্তের সমাগম হয়
দিঘার জগন্নাথধামে।

Latest article