১ লক্ষ কোটি টাকা, পুজো অর্থনীতিতে বাংলার রেকর্ড

বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী। যাঁরা বলেন বাঙালি ব্যবসায়ে পারদর্শী নয়, তাঁদেরকে বোকা বানিয়ে ছাড়লেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Must read

অভিজিৎ ঘোষ: বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী। যাঁরা বলেন বাঙালি ব্যবসায়ে পারদর্শী নয়, তাঁদেরকে বোকা বানিয়ে ছাড়লেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার সেরা উৎসব দুর্গোৎসবকে সাজাতে সাজাতে, নানা সুযোগ বৃদ্ধি করে, পরিকল্পনা করে বিগত এক দশকে দেশের সেরা উৎসবে পরিণত করেছেন। বিদেশিরাও বিরাট আগ্রহ নিয়ে এই উৎসবে শামিল হচ্ছেন, এমন চিত্র আগে দেখা যায়নি। আন্তর্জাতিক সম্মান যুক্ত হয়েছে আমাদের পুজোর সঙ্গে। দুর্গোৎসবের বিশ্বায়ন। আর যার নিটফল ২০২৫-এর পুজোর অর্থনীতি ছাড়াল ১ লক্ষ কোটি। কীভাবে প্রসারিত হচ্ছে পুজো-অর্থনীতি?

আরও পড়ুন-বিহারের চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় বাদ ৪৭ লক্ষ

শিল্পীরা কী বলছেন : ভবতোষ সুতার কিংবা পরিমল পালের মতো শিল্পীরা বলছেন, বিদেশে প্রতিমার বরাত বৃদ্ধি পেয়েছে। দাম আগের চেয়ে বেড়েছে। বিদেশিরা কলকাতায় পুজোর সময়ে আগের চেয়ে বেশি আসছেন। পুজোর আর্ট ফর্ম দেখে নানা ধরনের অর্ডার দিচ্ছেন। ভিন রাজ্য থেকেও আসছে বরাত। ব্যবসা ক্রমশ ছড়াচ্ছে, বিস্তৃত হচ্ছে। এর পিছনে মুখ্যমন্ত্রীর পরিকল্পনাকেই সর্বাগ্রে রাখছেন শিল্পীরা।
পোশাক শিল্পে জোয়ার : পোশাক শিল্পের ব্র্যান্ডেড কোম্পানিগুলির এখন ফার্স্ট চয়েজ বেঙ্গল। না, কোনও কথার কথা নয়, সংস্থাগুলি বিগত পাঁচ বছরে তাদের শাখা বাড়িয়েছে নয় নয় করে ৪২ শতাংশের বেশি। এবং লক্ষণীয় হল একটি সংস্থাও তাদের শাখা বন্ধ তো করেইনি, পরবর্তী শাখা কোথায় খোলা যায়, সেই ভাবনায় ব্যস্ত। সারা বছর বিক্রি তো আছেই, পুজোয় তা লাফিয়ে বেড়ে যায়। গতবারের তুলনায় তা বেড়েছে ১৫%। আয় বেড়েছে নয় নয় করে ১০ হাজার কোটির বেশি। প্রায় ৫ কোটি মানুষের পরোক্ষে আয় বাড়বে।
রমরমা হস্তশিল্পীদের : বর্ধমান, বাঁকুড়া, বীরভূম, মেদিনীপুর, নদিয়া থেকে শুরু করে উত্তরের জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ারেও ঘরে বসে শিল্পীদের তৈরি করা গয়না-হস্তশিল্প এবারের পুজোর বাজারে সাড়া ফেলে দিয়েছে, বেড়েছে বিক্রি। বাড়তি রোজগার করছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও কুটির শিল্পের সঙ্গে যুক্ত দেড় কোটির বেশি শ্রমিক-নারী। বণিকসভাগুলির তথ্য বলছে, এ-বছরও নতুন করে পুজোকেন্দ্রিক নানা শিল্পে হাজার হাজার যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থান হচ্ছে। প্রতিমার অঙ্গে শোলা বা ডাকের সাজের পরিবর্তে এখন আর্ট কলেজের ছাত্রদের ইমিটেশন বা ফেব্রিকের গয়না ও হস্তশিল্পের সামগ্রী বাংলার ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পকে স্বাবলম্বী করেছে। দেশ-বিদেশের অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলার কুটিরশিল্প বা হস্তশিল্পে বিপ্লব এসেছে পুজোকে কেন্দ্র করেই। রাজ্য সরকারের স্বনির্ভর গোষ্ঠী এই কাজে আরও ইন্ধন জুগিয়েছে। তাদের কাজের জিনিস অধিকাংশ কিনে নিচ্ছে। তারপর যাচ্ছে বাজারে। ফলে একদিকে গোষ্ঠীগুলিকে বিক্রির কথা ভাবতে হচ্ছে না, অন্যদিকে বাজারেও ব্যাপক বৈচিত্র্য যা চাহিদা তৈরি করছে প্রতিবারের বাজারে।
চাঙ্গা গ্রামের অর্থনীতি : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিকল্পনার জেরে চাঙ্গা গ্রামীণ অর্থনীতি। একদিকে একাধিক জনহিতকর প্রকল্প, অন্যদিকে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী, যুবশ্রী-সহ ৮০টির বেশি প্রকল্পের জেরে মানুষের হাতে অর্থ এসেছে। গ্রামের বাজার চাঙ্গা হয়েছে। কেনাকাটা বেড়েছে। গ্রামীণ মুক্ত অর্থনীতিতে জোয়ার এসেছে। বাংলার নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, হাতে অর্থ এসেছে। বাংলার অর্থনীতি পাল্টাচ্ছে। বিশেষত গ্রামের।
পুজো অনুদান : পুজো অনুদান পুজোর অর্থনীতিকে আমূল বদলে দিয়েছে। পুজোর সংখ্যা লাফিয়ে বেড়েছে ২৫%। অনুদান কয়েক বছরে তিন-চারগুণ হয়েছে। পুজোর সঙ্গে জড়িত ডেকরেটর্স, থিম শিল্পী, জরি-থার্মোকলের শিল্পী, ছোট ব্যবসায়ী, লাইট, মাইক ব্যবসায়ীদের চাহিদা তুঙ্গে।
এই যে অর্থনীতির টান এটা একদিনে হয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিকল্পনা করে ধীরে ধীরে এই পরিস্থিতি তৈরি করেছেন। যার জেরে ২০২৪-এ যে পুজো-অর্থনীতির পরিমাণ ছিল ৭৫-৮০ হাজার কোটি টাকা, তা ২০২৫-এ বেড়ে এখনই ১ লক্ষ কোটি টাকা পেরিয়ে গিয়েছে। এটা একটা মাইলস্টোন। উৎসবকে কেন্দ্র করে অর্থনীতিতে বিপ্লবের পথ দেখালেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর সুচারু পরিকল্পনাতেই পুজো অর্থনীতি এবার ছাড়াচ্ছে এক লক্ষ কোটি টাকা।

Latest article