প্রতিবেদন : নজিরবিহীন। দেশের ইতিহাসে প্রথমবার রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপালের স্বাক্ষর ছাড়াই পাশ হল দশটি আইন। সুপ্রিম কোর্টের সিলমোহরে তামিলনাড়ু সরকারের পাশ করা দশটি বিল আইনে পরিণত হল বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন। মোদি জমানায় রাজ্যপালদের রাজনৈতিক নেতা হিসাবে ব্যবহার করার যে রেওয়াজ তৈরি হয়েছে তাতে এই ঘটনা নতুন মাত্রা যোগ করল তাতে সন্দেহ নেই। বিশেষত দেশের শীর্ষ আদালত স্পষ্ট বলেছে, কোনও ব্যাখ্যা না দিয়ে মাসের পর মাস ইচ্ছেমতো গুরুত্বপূর্ণ বিল আটকে রাখা যায় না। এই কাজ বেআইনি এবং সংবিধানসম্মত নয়। অনুমোদন না দিলে বিল বাতিল করার কারণ জানাতে বাধ্য রাজ্যপালরা। রাজনৈতিক কারণে বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলির আনা বিলে অনুমোদন না দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ফেলে রাখার মতো যে অনৈতিক ও বেআইনি কাজ চালাচ্ছেন তামিলনাড়ু, বাংলা, কেরল সহ একাধিক বিরোধী শাসিত রাজ্যের রাজ্যপালরা, তাতে চরম ক্ষুব্ধ সুপ্রিম কোর্ট।
তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল আর এন রবি রাজ্য বিধানসভায় দু’বার পাশ হওয়া ১০টি বিল ২০২০ সাল থেকে আটকে রেখেছিলেন। রাজ্যপালের সম্মতি না পাওয়ায় সংশ্লিষ্ট বিলগুলি আইনে পরিণত করা যায়নি। সুপ্রিম কোর্টের কড়া পর্যবেক্ষণের পর রাজ্যপাল অথবা রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর ছাড়াই ১০টি বিলকে আইনে পরিণত করার কথা জানিয়েছে তামিলনাড়ু সরকার। দেশে প্রথম এই ঘটনা ঘটল। বিজেপির নির্দেশে চালিত হয়ে বিল আটকে রেখে মুখ পুড়ল তামিলনাড়ুর রাজ্যপালের।
আরও পড়ুন-ওয়াকফ নিয়ে বিভেদের বিষ ছড়াচ্ছে বিজেপি
প্রসঙ্গত, তামিলনাড়ু বিধানসভায় পাশ হওয়া ১০টি বিল রাজ্যপালের অনুমোদনের জন্য মাসের পর মাস আটকে ছিল। ২০২০ সাল থেকে অপেক্ষা করার পর সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় ডিএমকে সরকার। সেই মামলায় রাজ্যপালকে বিল পাশে নির্দিষ্ট নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। সেইসঙ্গে যে কোনও বিল আইন হওয়ার পথে রাষ্ট্রপতিকে সিদ্ধান্ত নেওয়ারও সময়সীমা বেঁধে দেয় শীর্ষ আদালত। দেশে প্রথমবার রাষ্ট্রপতিকে সময়সীমা বেঁধে দিয়ে রাজ্যের বিলে স্বাক্ষরের নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এর পাশাপাশি এই মামলার সূত্রেই তামিলনাড়ুর আটকে থাকা ১০টি বিলকে আইন বলে গণ্য করার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। সেই মতো তামিলনাড়ু সরকার নিজেদের প্রশাসনিক গেজেটে ১০টি বিলকে আইন হিসাবে ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি জারি করে। এর ফলে দেশের ইতিহাসে প্রথমবার কোনও আইন এমনভাবে পাশ হল যাতে রাজ্যপাল বা রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর নেই। এই আইনগুলির মধ্যে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ আইন রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে সংশোধনী আইনও রয়েছে। সব মিলিয়ে বিজেপির ক্যাডারের মতো আচরণ করে শীর্ষ আদালতের নির্দেশে এখন চূড়ান্ত ব্যাকফুটে তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল।