পেট্রোল ও ডিজেলের লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি ব্যাটারিচালিত একহাজার বাস আসছে কলকাতায়

Must read

প্রতিবেদন : পেট্রোল ও ডিজেলের লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধিতে উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে রাজ্যের পরিবহণ শিল্পকে বাঁচাতে ই-বাসকে বিকল্প হিসেবে তুলে ধরতে চায় নবান্ন। আগামী বছর জুন-জুলাই মাসে কলকাতায় আসছে ১ হাজার ব্যাটারিচালিত বাস। যার একটা বড় অংশ বেসরকারি মালিকানায় চালানোর অনুমতি দেবে রাজ্য। ই-বাস নামানোয় বাস মালিকদের উৎসাহ দিতে আকর্ষণীয় প্রস্তাবও দেবে রাজ্য।

আরও পড়ুন : টাকা না পাওয়ায় অক্সিজেন দিল না স্বাস্থ্যকর্মী, আইসিইউতে মৃত্যু ৪ বছরের শিশুর

নিত্যদিনই বেড়ে চলেছে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম। তার জেরে প্রায় সব রুটেই বাসভাড়া বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে অঘোষিতভাবেই। ১৫ টাকার ভাড়া কোথাও হয়েছে ২০, কোথাও ২৫, কোথাও বা ৩০ টাকা। একই সঙ্গে বাস হোক বা মিনিবাস নূন্যতম ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ১০ বা ১২ টাকা করে। এরপরেও রাস্তায় দেখা নেই বাসের। প্রতিদিন এখন যে হারে মানুষ রাস্তায় নামছেন, সেই হারে কিন্তু মোটেও বেসরকারি বাসের দেখা মিলছে না। আর তার জেরেই কার্যত বাদুড়ঝোলা ভিড়ের পাশাপাশি বাস না পাওয়ার জন্য নিত্যদিন ভোগান্তির মুখে পড়তে হচ্ছে নিত্যযাত্রীদের। তারপরেও বাসমালিকদের দাবি, এভাবে বাস চালানো সম্ভব নয়। এই অবস্থায় ভাঁইফোটার পরেই বাস-মালিকদের নিয়ে বৈঠকে বসতে চলেছেন রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। বিশেষ সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই বৈঠকেই রাজ্যের তরফে বাসমালিকদের ই-বাস নিয়ে প্রস্তাব দেওয়া হবে। সিএনজি নিয়েও আলোচনা হবে। বাসমালিকদের বক্তব্য, যে হারে নিত্যদিন জ্বালানির দর বেড়ে চলেছে তাতে করে রাজ্য সরকার বাস ভাড়া না বাড়ালে অচিরেই আরও বাস বন্ধ হয়ে যাবে। ২০১৮ সালের পর রাজ্যে আর বাসভাড়া বাড়েনি। ফলে অনেকেই লোকসানের বোঝা সামলাতে না পেরে তুলে নিয়েছেন বাস। রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী বাসমালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে তাঁদের সমস্যা এবং দাবিদাওয়া জেনে তা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানাতে চাইছেন। তারপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন মুখ্যমন্ত্রীই। তবে বাসভাড়া বাড়ানো হবে কিনা সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট ভাবে এখনও মেলেনি। তবে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে এই বৈঠকেই রাজ্যের তরফে বাসমালিকদের ডিজেলের পরিবর্তে সিএনজিতে বাস চালানোর কথা বলা হবে। তার জন্য বাসের ইঞ্জিন বদলাতে রাজ্য সরকার আর্থিক সাহায্য করার আশ্বাসও দিতে পারে। নবান্নের আধিকারিকদের দাবি, ১ লিটার ডিজেলে ১০ কিলোমিটার যেতে পারে একটি বাস। সিএনজি বা কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাসে তা যাবে ১২ কিলোমিটার। ফলে দূষণ তো কমবেই, জ্বালানিজনিত খরচও কমবে বাসমালিকদের। কেননা ডিজেলের দাম এখন রাজ্যে ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। সেখানে কলকাতায় সিএনজি গ্যাস বিক্রি হচ্ছে কেজি-প্রতি ৭০ টাকারও কম দরে। তাই বাসমালিকেরা যদি তাঁদের বাসের ইঞ্জিন বদলে ফেলেন তা হলে বাসমালিকদের জ্বালানিবাবদ খরচ প্রায় ৫০ শতাংশ কমে যাবে। এমনটাই মনে করছেন নবান্নের আধিকারিকেরা। তাই ফিরহাদের সঙ্গে বাসমালিকদের যে বৈঠক হবে সেখানে বাসমালিকদের কাছে রাজ্যের তরফে প্রস্তাব দেওয়া হবে বাসের ইঞ্জিন সিএনজিতে বদলে নেওয়ার। তার জন্য যা খরচ পড়বে তার একটা অংশ বহন করবে রাজ্য সরকার। বাকিটুকু দিতে হবে বাসমালিকদের। সেক্ষেত্রেও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে বাসমালিকদের সহজে ঋণ নেওয়ায় সাহায্য করবে নবান্ন। কিন্তু এর পাশাপাশি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে বিকল্প হিসেবে ই-বাস চালানোর উপরে।

আরও পড়ুন : উপনির্বাচন জয়ে শুভেচ্ছা এল গোয়া থেকে

এদিকে দেশে পেট্রোল-ডিজেলের দামে রাশ টানতে কোনওভাবেই উদ্যোগী নয় নরেন্দ্র মোদি সরকার। মঙ্গলবার প্রতি লিটার পেট্রোলের দাম বাড়ল ৩৫ পয়সা। দাম বাড়ার ফলে মঙ্গলবার কলকাতায় প্রতি লিটার পেট্রোলের দাম হয়েছে ১১০.৫০ টাকা। তবে এদিন ডিজেলের দাম অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। পেট্রোল-ডিজেলের দাম প্রতিদিনই বেড়ে চললেও কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার দাম নিয়ন্ত্রণে কোনও ভূমিকাই পালন করছে না। বরং সাধারণ মানুষকে বিপাকে ফেলতে পেট্রোপণ্যের উপর বিপুল পরিমাণে কর চাপিয়ে রেখেছে। পেট্রোল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম দুই থেকে তিন গুণ বেড়েছে। অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষকে চরম সমস্যায় ফেললেও মোদি সরকার নীরব দর্শক হয়ে বসে রয়েছে।

Latest article