সংবাদদাতা, সুন্দরবন : ২৮ থেকে তিরিশ ঘণ্টা বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ঢেউয়ে ভেসে ছিলেন ওঁরা। কেউবা বাঘের জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছিলেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগের জেরে গত দু’দিনে বঙ্গোপসাগর থেকে ভারতীয় উপকূল রক্ষীবাহিনী ও ভারতীয় মৎস্যজীবীদের দল উদ্ধার করল ১০৪ জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘি, কাকদ্বীপ, মৈপীঠ উপকূল থানায় তোলা হয়েছে মৎস্যজীবীদের। এর মধ্যে হলদিয়াতেও তোলা হয়েছে ২৭ জনকে।
আরও পড়ুন-লক্ষ্যরা এগোলেন বিশ্ব ব্যাডমিন্টন
সর্বশেষ রবিবার রাতে ১৭ জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকে উদ্ধার করে আনা হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মৈপীঠ কোস্টাল থানা এলাকায়। রাতে উদ্ধার করে আনার পর সকলকে কুলতলি গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সুস্থ হয়ে গেলে ত্রাণ শিবিরে রাখা হবে। উদ্ধার হওয়া মৎস্যজীবীরা বাংলাদেশের বরগুনা জেলার বাসিন্দা। এঁরা ভাই ভাই নামে একটি ট্রলারের মৎস্যজীবী। গত ১৭ অগাস্ট ইলিশ ধরতে বেরিয়ে দুর্যোগের মুখে পড়ে ডুবে যায় ট্রলারটি। মোট ১৯ জন মৎস্যজীবী ছিলেন। দু’জনের এখনও কোনও খোঁজ নেই। এঁরা ৩৬ ঘণ্টা জলে ভেসে ছিলেন। পরে কালীর জঙ্গলে আশ্রয় নেন। বাঘের ভয়ে প্রত্যেকে গাছে আশ্রয় নিয়েছিলেন। মৈপীঠের একটি কাঁকড়া ধরার ডিঙি নৌকাকে গতকাল বিকেলে দেখতে পান। চিৎকার শুনে জঙ্গল থেকে ১৭ জনকে উদ্ধার করেছে।
আরও পড়ুন-ফের কার্লসেনকে হারালেন প্রজ্ঞানন্দ
উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশি মৎস্যজীবী দুঃসহ অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন। দুই সহকর্মী মৎস্যজীবীর মৃত্যু আরও ছাপ ফেলেছে ওঁদের মনে। উদ্ধার হওয়া ১০৪ জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবীর বেশ কয়েকজন এখনও জেলার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এছাড়া বেশিরভাগ মৎস্যজীবীকে জেলার বিভিন্ন ত্রাণ শিবিরে রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের পক্ষ থেকে উদ্ধার মৎস্যজীবীদের ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যোগাযোগ রাখা হয়েছে বাংলাদেশের মৎস্যজীবী সংগঠনগুলির সঙ্গে। এ বিষয়ে কাকদ্বীপের সুন্দরবন সামুদ্রিক মৎস্যজীবী শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক সতীনাথ পাত্র জানালেন, ‘‘আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে পোশাক ও খাবারের ব্যবস্থা করেছি। দ্রুত দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এখনও মৎস্যজীবী কেউ জঙ্গলে আশ্রয় নিয়ে আছেন কি না তাও ভারতীয় ট্রলার নজর রাখছে।’’