প্রতিবেদন : ১৩ তারিখ বিজেপির নবান্ন অভিযান। প্রাথমিকভাবে ঠিক হয়েছিল ৭ সেপ্টেম্বর এই কর্মসূচি হবে। কিন্তু লোকজন না হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় রাজ্য নেতৃত্ব লজ্জার মাথা খেয়ে কর্মসূচির নির্ধারিত দিন ঠিক করে ১৩ সেপ্টেম্বর। এবার দিনক্ষণ বাতিল করলে রাজ্য থেকে দলটাকেই তুলে দিতে হবে। তাই নবান্ন অভিযানে লোক জড়ো করতে মরিয়া সুকান্ত-শুভেন্দুরা। এর জন্য বিরাট টাকা খরচ করা হচ্ছে, যা শুনলে সাধারণ মানুষের চোখ কপালে উঠতে বাধ্য। বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের এক প্রথম সারির নেতা শনিবার জানিয়েছেন, সত্যি কথা বলতে কী এটাকে রাজসূয় যজ্ঞ বললে কম বলা হবে। কর্মসূচি সফল করতে কার্যত টাকার শ্রাদ্ধ হচ্ছে। দিল্লি থেকে যে অর্থ এসেছে তা নামমাত্র কাজে লেগেছে। কিছু দলবদলু নেতার নেতৃত্বে প্রচুর অর্থ উঠেছে। এবং সমস্ত খরচ হিসেব করলে টাকার অঙ্কটা ১১ কোটি পেরিয়ে যাবে। রাজ্য কমিটির ওই নেতা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, মনে রাখবেন ১০ দিন আগেই বৈদিক ভিলেজের সাংগঠনিক কর্মসূচিতে আমরা ৩ কোটি টাকা খরচা করে ফেলেছি। স্বভাবতই রাজনৈতিক মহল বিজেপির এই এলাহি খরচে বিস্মিত। দলের মধ্যেই একটু র্যাডিক্যাল চিন্তা-ভাবনা যাঁরা করেন তাঁরা বলছেন, এত টাকা নিয়ে হরির লুঠ খেলা হচ্ছে। মানুষের কাছে কীভাবে জবাব দেব?
আরও পড়ুন-টানা তল্লাশি, উদ্ধার বিপুল টাকা, বাংলায় ব্যবসা বন্ধ করে দিতে চাইছে ইডি : ফিরহাদ
নবান্ন অভিযানে জেনেই ৭টি ট্রেন ভাড়া করে ফেলেছে বিজেপি। যার খরচ প্রায় ২ কোটি ৮৪ লক্ষ টাকা। বাস, ট্রাক, ম্যাটাডর, গাড়ির খরচ আরও প্রায় ২ কোটি টাকা। খাওয়া-দাওয়া এবং হোটেল খরচ শুনলে চমকে উঠতে হবে। প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা। পোস্টার-ব্যানার, ফেস্টুনে খরচ ৪০ লক্ষ ছাড়িয়েছে। কিন্তু এরপরেই রয়েছে আসল খরচ। লোক হবে না এটা বুঝে যাওয়ার পর জেলায় জেলায় টাকা বিলিয়েছেন বিজেপি নেতারা। স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, যারা আসবেন তাদের প্রত্যেক জনের হাতে দিতে হবে ১,২০০ টাকা। এটা গ্রামাঞ্চলের লোকেদের জন্য। শহরতলির লোকজনকে ১,৮০০ টাকা পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে খরচ হচ্ছে ৬৬ লক্ষ টাকা।
আরও পড়ুন-ঐতিহাসিক চা-বাগান কর্মী সম্মেলন, আজ অভিষেকের সভা
কিন্তু এতেও মোটেই নিশ্চিত নন রাজ্য বিজেপির নেতারা। তাই কোনও রকম রিস্ক না নিয়ে তারা ঝাড়খন্ড, বিহার, ত্রিপুরা, অসম, দিল্লি থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে আসছে বলে বিজেপি সূত্রেই খবর। এই বাহিনী সাদা পোশাকে মিছিলে থাকবে। তাতে জনসমাগম না হলেও মুখরক্ষা হবে। এমনকি অন্য রাজ্য থেকে বিভিন্ন বাহিনীর কর্মীদের আনার পরিকল্পনাও ফাইনাল। তারাও ভিড় বাড়াবে। এইখাতে খরচ প্রায় ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা।
আরও পড়ুন-নিরামিষ দেবতা
রাজ্যে কোনও কিছু ঘটলেই তাড়স্বরে চিৎকার জুড়ে দেয় বিজেপি নেতারা। কিন্তু নবান্ন অভিযানের নামে যে পরিমাণ অর্থ খরচ হচ্ছে এবং তার ১০ দিন সাংগঠনিক কর্মসূচির নামে বৈদিক ভিলেজে যে এলাহি ব্যবস্থা করা হয়েছিল, টাকার অঙ্ক যোগ করলে দেখা যাবে প্রায় ১৫ কোটি খরচ হচ্ছে মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে। প্রশ্ন হল, এই অর্থ কোথা থেকে আসছে? সব কি ট্যাক্স দেওয়া? নাকি জিএসটি দেওয়া হচ্ছে। এই হিসেব কে পেশ করবে? বিজেপির কেন্দ্রীয় স্তরের এক বাংলার নেতা ঠোঁট কাটা বলেই পরিচিত। তিনি বলছেন, ১১ কোটিতেই যে শেষ হবে তা হলফ করে বলা যায় না। তার কারণ, কারণে-অকারণে নেতৃত্ব টাকা খরচ করছে। আমরা অবাক হয়ে দেখছি আর ভাবছি— এতো টাকা আসছে কোথা থেকে?