সংবাদদাতা, সিউড়ি : রবীন্দ্রনাথের পুণ্যভূমিতে তাঁর পাঠদানের ভাবনাকে পাথেয় করে বীরভূমের জেলাশাসক বিধান রায় প্রত্যন্ত গ্রামে খুদে পড়ুয়াদের মানসিক-শারীরিক-সাংস্কৃতিক বিকাশের লক্ষ্যে ‘আনন্দপাঠ’ শুরু করেন বছরখানেক আগে। খোলা আকাশের নিচে পাঠদানের দৃশ্য মন ছোঁয় সকলের।
আরও পড়ুন-রাহুল ও বুমরার ফর্ম স্বস্তি দিচ্ছে দ্রাবিড়কে
এবার স্কচ পুরস্কারে সম্মানিত হতে চলেছে তাঁর এই সৃষ্টি। এ কথা জানিয়ে জেলাশাসক বলেন, ‘শিশুমনে আনন্দ সহকারে শিক্ষাদান অত্যন্ত প্রয়োজন। পুঁথিগত বিদ্যার পাশাপাশি তাদের জীবনে খেলাধুলার প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের মানসিক বিকাশ তখনই ঘটে যখন খেলার ছলে খোলা আকাশের নিচে মুক্ত বাতাসে পাঠদান করানো সম্ভব হয়। আনন্দপাঠের মানে আমরা বোঝাতে চেয়েছি বিদ্যা কখনই ভয়ঙ্কর নয়। আনন্দের সঙ্গেই তা অর্জন করতে হয়। শিশুরা যাতে পড়াশোনার নামে আতঙ্কিত না হয় সেটা দেখা গুরুত্বপূর্ণ। শিশুরা চায় খেলতে। বড়দের দায়িত্ব খেলতে খেলতে তাদের মনে পাঠদানের বীজ বপন করা। এখানে উন্মুক্ত বাতাসে, বিশাল খেলার মাঠে সাংস্কৃতিক শিক্ষা দেওয়ার জন্য রয়েছেন কৃতী শিক্ষক-শিক্ষিকারা। খুদেদের ভবিষ্যৎ তৈরির কারিগরদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রশাসনের লক্ষ্য, পিছিয়ে পড়া গ্রাম বা পাড়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয় স্তরের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে মুক্ত প্রকৃতিতে খেলতে খেলতে, ছড়া বলতে বলতে, পাখির ডাক শুনতে শুনতে বন্ধুত্বের মাধ্যমে লেখাপড়ার অভ্যাস তৈরি করা।’
আরও পড়ুন-মানবতার মৃত্যু যোগীরাজ্যে, বেসরকারি হাসপাতালের বাইরে ফেলে দেওয়া হল রোগীকে
শুধু শিক্ষা নয়, শারীরিক সক্ষম করতে খোকো, হাডুডু, কিতকিত-সহ একাধিক খেলার ব্যবস্থা হয়েছে। দু’ভাগে আনন্দপাঠ দেওয়া হয়। সকাল সাতটা থেকে নটা আর বিকেল চারটে থেকে ছটা। আনন্দ পাঠদানে নিয়োগ করা হয়েছে পাড়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিউনিটি শিক্ষককে। সাংস্কৃতিক বিষয়ে শিশুদের মনোযোগ তৈরির জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। আনন্দপাঠে যে শিশুরা আসছে তারা যাতে সমস্ত সরকারি সুযোগসুবিধা পেতে পারে সেদিকেও জেলাশাসক নজর দিয়েছেন। এই ব্যবস্থাপনায় স্কুলে অনুপস্থিতির হার অনেকটাই কমানো সম্ভব হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। মাত্র এক বছর আগে তৈরি জেলাশাসকের এই উদ্যোগ অত্যন্ত সফলভাবে চলছে। এখনও পর্যন্ত ১২,৭১০ জন শিশুর অন্তর্ভুক্তি হয়েছে। প্রায় ১৪৬টি গ্রাম এর আওতায় এসেছে।