প্রতিবেদন: মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধান। উত্তরপ্রদেশের হতভাগ্য তরুণী শাহজাদির পরে আরও দুই ভারতীয়র ফাঁসির সাজা কার্যকর করল সংযুক্ত আরব আমিরশাহি প্রশাসন। কেরলের (Kerala) দুই নাগরিকের ফাঁসি কার্যকর করার খবর গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বিদেশমন্ত্রককে দিয়েছে ইউএই প্রশাসন। দুই ব্যক্তিই খুনে অভিযুক্ত বলে জানানো হয়েছে। যদিও এদের বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন ভারতীয় দূতাবাসের তরফ থেকে বিচারে সবরকম সাহায্য করা হয়েছিল বলে জানানো হয়েছে।
কেরলের (Kerala) বাসিন্দা মুরলীধরন পেরামথট্ট ভালাপ্পিল দীর্ঘদিন আগে কাজের সন্ধানে আরব মুলুকে গিয়েছিলেন। ২০০৯ সাল থেকে তিনি খুনের অভিযোগে জেলবন্দি ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে এক ভারতীয়কে খুনের অভিযোগ ছিল। সেই মামলায় আরবের শীর্ষ আদালত মুরলীধরনকে দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসির সাজা ঘোষণা করে। এর পাশাপাশি কেরলের আরেক বাসিন্দা মহম্মদ রিনাশ আরাঙ্গিলট্টুর বিরুদ্ধেও খুনের মামলা চলছিল। তাঁর বিরুদ্ধে আরবের এক বাসিন্দাকে খুনের অভিযোগ ছিল। তাঁর ক্ষেত্রেও ফাঁসির সাজা কার্যকর করে ফেলেছে আরব আমিরশাহি।
আরও পড়ুন- কেন্দ্রের বঞ্চনা, কম্পোজিট গ্রান্টে অর্থ বরাদ্দ রাজ্যের
বিদেশমন্ত্রকের তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, দুটি ফাঁসির খবর ২৮ ফেব্রুয়ারি জানানো হয়েছে বিদেশমন্ত্রককে। চলতি বাজেট অধিবেশনে রাজ্যসভায় কেন্দ্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল যে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে সর্বাধিক সংখ্যক ভারতীয় ফাঁসির সাজা পেয়েছেন। যার মধ্যে উত্তরপ্রদেশের শাহজাদিকে নিয়ে মোট সংখ্যাটা ছিল ২৯। কেরলের দুই যুবকের ফাঁসির পর এখন মৃত্যুদণ্ডের জন্য অপেক্ষমাণের সংখ্যাটা দাঁড়াল ২৬। তবে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ছাড়া সৌদি আরবেও ফাঁসির অপেক্ষায় দিন গুনছেন করছেন ১২ ভারতীয়। বহু ক্ষেত্রেই শাস্তিপ্রাপকদের আত্মপক্ষ সমর্থনের যথাযথ সুযোগ মিলছে না বলে অভিযোগ। প্রশ্ন উঠছে, বিদেশের মাটিতে মুড়ি-মুড়কির মতো মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হচ্ছে ভারতীয়দের, অথচ কোনও হেলদোলই নেই মোদি সরকারের। আরব দেশগুলিতে আইনি সহায়তা আদৌ কতটা পাচ্ছেন অভিযোগবিদ্ধ ভারতীয়রা, সেই সংশয় তীব্র হচ্ছে।
যদিও ভারতীয় বিদেশমন্ত্রক জানিয়েছে, দূতাবাস ভারতীয় নাগরিকদের সম্ভাব্য সমস্ত কনস্যুলার এবং আইনি সহায়তা প্রদান করেছে, যার মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি সরকারের কাছে ক্ষমার আবেদন এবং ক্ষমা প্রার্থনার চিঠি প্রেরণ ছিল। বিদেশমন্ত্রকের বিবৃতি অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলিকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার খবর জানানো হয়েছে। দূতাবাস তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে এবং শেষকৃত্যে অংশগ্রহণে সহায়তা করছে। প্রসঙ্গত, গত মাসেই উত্তরপ্রদেশের ৩৩ বছর বয়সী যুবতী শাহজাদিকে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে তাঁর তত্ত্বাবধানে থাকা চারমাস বয়সী একটি শিশুকে হত্যার অভিযোগে শাহজাদি খানকে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি আবুধাবিতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। অথচ ঘটনা হল, নিয়মিত টিকাকরণের পর শিশুটি মারা যায় এবং তারপরই তার পরিচর্যাকারী হিসাবে নিযুক্ত শাহজাদির বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ আনা হয়। হতভাগ্য যুবতীর বাবা শাব্বির খান সম্প্রতি ভারতীয় সরকারের কাছে মেয়ের শেষকৃত্যের জন্য তাঁকে দুবাইতে পাঠানোর আর্জি জানান। কেন্দ্রের প্রতি তাঁর খেদোক্তি: আমার প্রতি অবিচার করা হয়েছে। তোমরা তো আমাকে আমার মেয়েকে জীবিত দিতে পারলে না, অন্তত তার মৃতদেহ দাও।