গেরুয়া রাজনীতি মানেই দেশবাসীর অধিকারে হস্তক্ষেপ!
কখনও মাছ-মাংস বিক্রি বন্ধ করে, কোথাও হিজাব পরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে, কখনও আবার দেশের সব প্রান্তে সরকারি প্রকল্প ও প্রতিষ্ঠানের গেরুয়াকরণের ফতোয়া জারি করে এই কাজটাই করে চলেছে মোদি-অমিত শাহের টিম। কিন্তু দেশবাসী কী পরবে, আর কী খাবে— একটি রাজনৈতিক দল কি তা ঠিক করে দিতে পারে? মানুষের মৌলিক অধিকারের ভিতের উপর দাঁড়িয়ে এই প্রশ্ন তোলার সময় এসে গিয়েছে।
জননেত্রী ঠিক বলেছেন। “মানুষ কী খাবে, কী পরবে, সেটা বিজেপি ঠিক করে দেবে না।” বিজেপি সেটা বুঝলে ভাল। নইলে ওদের সবক শেখাতে হবে। নির্বাচনই সেই শিক্ষাদানের হাতিয়ার।
মেট্রো স্টেশনের রং গেরুয়া করে দিচ্ছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির রং গেরুয়া করে দেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছে। শিলিগুড়ি সংলগ্ন সুকনাতেও কেন্দ্রীয় বাহিনীর বাড়িগুলিকে গেরুয়া রং করে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকটা জায়গায় শুধু বিজেপির লোগো লাগাতে হবে, আর ওদের ফতোয়া মতো রং করতে হবে। সিলেবাসে যা ইচ্ছে তাই ঢোকাবে। মানুষের স্বাধীনতা বলে কিছু থাকবে না। কে কী খাবে, কে কী পরবে, সেটাও ওরা ঠিক করে দেবে! মানুষের মগজ ধোলাইয়ের একটা পরিকল্পিত কৌশল। আমরা সেটা নিয়ে আওয়াজ তুলছি, তুলবও (2024 Lok Sabha Election)।
আর সেজন্য বাংলার (2024 Lok Sabha Election) বিরুদ্ধে কুৎসা চলছে। অথচ বাংলা কোনও অপরাধকে প্রশ্রয় দেয় না। যে তদন্তগুলো চলছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে পুরো তদন্ত শেষ হলেই সব বোঝা যাবে। তবে একটাই কথা, সেটা যেন নিরপেক্ষ হয়।
আমরা নই, বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক অনুপম হাজরা বলছেন, প্রতিষ্ঠিত চোরদের বিজেপি পদে বসিয়ে রেখেছে। ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘নিজের দলের মধ্যে বছরের পর বছর প্রতিষ্ঠিত চোর ও দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে রাখা হয়েছে।’ সুতরাং অন্য কাউকে চোর অপবাদ দেওয়ার কোনও নৈতিক অধিকার ওদের নেই। এই আবহে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে মা মাটি মানুষের সরকারের প্রশাসনিক সাফল্য তুলে ধরা দরকার।
খোলাবাজারের থেকে দামের ফারাক খুব বেশি নয়। তা সত্ত্বেও সরকারি উদ্যোগে ধান কেনার পরিমাণ বাড়ছে। ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ পর্যন্ত ৬ লক্ষ ৩০ হাজার টন ধান কিনেছে সরকার। নভেম্বরে ধান কেনার গতি মন্থর ছিল। ডিসেম্বর পড়তেই তা বাড়তে শুরু করেছে। ধানের ন্যূনতম সংগ্রহ মূল্য (এমএসপি) এবার কুইন্টাল প্রতি ২১৮৩ টাকা। স্থায়ী ক্রয় কেন্দ্রে (সিপিসি) গিয়ে ধান বিক্রি করলে কুইন্টালে আরও ২০ টাকা হারে ‘বোনাস’ পাওয়া যায়। সেখানে খোলাবাজারে এখনও পর্যন্ত ১৯৫০ টাকার আশপাশে স্বর্ণধান বিক্রি হচ্ছে। সরকারি উদ্যোগে এই স্বর্ণধান কেনা হয়। খাদ্য দফতরের আধিকারিকরা বলছেন, খোলাবাজারের থেকে এমএসপির দাম অনেকটা বেশি হলে সরকারি উদ্যোগে ধান কেনার পরিমাণ বেড়ে যায়। সাম্প্রতিক অতীতে কুইন্টাল প্রতি দামের পার্থক্য ৩০০-৪০০ টাকা বা তার থেকেও বেশি হয়েছে। এবার এখনও পর্যন্ত দামের ফারাক ততটা নয়। তা সত্ত্বেও ধান কেনার পরিমাণ সন্তোষজনক। ডিসেম্বর মাসে ১২ লক্ষ টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে খাদ্য দফতরের। এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি তাতে এই লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছনো যাবে বলে আশা করছে খাদ্য দফতর। নভেম্বর মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ লক্ষ টন। তার থেকে অনেক কম পরিমাণ ধান কেনা হয়েছে নভেম্বরে। তবে নভেম্বরে যেহেতু নতুন ধান খুব কম ওঠে, তাই সরকারি উদ্যোগে প্রতি বছরই ধান কম কেনা হয়। সব থেকে বেশি ধান কেনা হয় ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে। জানুয়ারিতে ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ২৪ লক্ষ টন। ধান কেনায় স্বচ্ছতা আনতে চাষিদের আধারের বায়োমেট্রিক যাচাই-সহ একগুচ্ছ নতুন ব্যবস্থা নিয়েছে খাদ্য দফতর। এখনও পর্যন্ত বড় কোনও অভিযোগ আসেনি দফতরে।
অন্যদিকে, পঞ্জাবের বড় কোম্পানির নাম ভাঁড়িয়ে ডবল ইঞ্জিন শাসিত উত্তরপ্রদেশে চলছে আলু বীজের কালোবাজারি। বস্তার উপর একই নাম। ঠিকানাও অবিকল। মনোগ্রামও হুবহু। কিন্তু, বস্তা খুললেই বেরিয়ে আসছে নিম্নমানের আলুবীজ। পাঞ্জাবের জলন্ধরের একটি নামী কোম্পানির নাম ব্যবহার করে যোগীরাজ্যে আলুবীজের কালোবাজারির অভিযোগ উঠেছে। উত্তরপ্রদেশ থেকে সেই নকল আলুবীজ লরি করে ঢুকছে বাংলাতেও। পাঞ্জাবের ওই কোম্পানির দাবি, এই ‘নকল’ আলুবীজ ‘আসল’ হিসেবে কিনে চরম লোকসানের মুখে পড়বেন চাষিরা। কারণ, এতে ফলন অনেকটাই কম হবে। এই নকল আলুবীজ ইস্যুতে গত শুক্রবারই পাঞ্জাবের ওই কোম্পানির তরফে পুলিসের কাছে লিখিত অভিযোগও দায়ের হয়েছে। অক্টোবরের মাঝমাঝি সময় থেকেই পাঞ্জাবের জলন্ধর থেকে বাংলায় আসে উন্নতমানের আলুবীজ। এবারও এসেছে। সম্প্রতি, বৃষ্টির ফলে বিভিন্ন জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আলু চাষ। অনেক চাষি নতুন করে আলু লাগাচ্ছেন। তার জন্য আলুবীজ আসছে। তবে, আগের চেয়ে দাম বেড়েছে ৫০০ থেকে হাজার টাকার কাছাকাছি। অভিযোগ, এই সুযোগই নিচ্ছে চোরাকারবারিরা। শুক্রবার শিলিগুড়ির ভক্তিনগর থানায় একটি অভিযোগ পাঠান পাঞ্জাবের জলন্ধরের এক নামী আলুবীজ কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর। তাতে তিনি উল্লেখ করেছেন নাম, ঠিকানা ও মনোগ্রাম-সহ তাঁদের কোম্পানির ব্র্যান্ড ব্যবহার করছে উত্তরপ্রদেশের এক ব্যক্তি। ইউপিতে এই কারবার যে চালাচ্ছে, তার নাম ও মোবাইল নম্বরও পুলিসকে দেওয়া হয়েছে। ম্যানেজিং ডিরেক্টরের অভিযোগ, তাঁদের কোম্পানির ব্র্যান্ড ব্যবহার করে শুক্রবার উত্তরপ্রদেশ থেকে এক লরি আলু শিলিগুড়িতে ঢুকেছে। যে লরিতে করে তা এসেছে, সেই গাড়ির নম্বর এবং ছবি দেওয়া হয়েছে পুলিশকে। আলুবীজ ব্যবসায়ীদের কথায়, এখন এক প্যাকেট আলুবীজ দুই থেকে আড়াই হাজার টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে। উত্তরপ্রদেশের ওই নিম্নমানের আলুর প্যাকেটের দাম কমবেশি ২৫০ টাকা। এক প্যাকেট আলুর পরিবহণ খরচ ৩০০ টাকা। অর্থাৎ, প্যাকেট প্রতি বিনিয়োগ মাত্র ৫৫০ টাকা। অথচ সেটা এখানে ‘উন্নতমানের বীজ’ হিসেবে বেচতে পারলেই দেড় থেকে দু’হাজার টাকা লাভ। আসলে, চাষিদের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে এই ধরনের চক্র প্রায়ই গজিয়ে ওঠে। নিম্নমানের আলুবীজ তারা চড়া দামেই বেচে। আমরা চাই, চাষিরা প্রকৃতই উন্নতমানের বীজ নায্য দামে সংগ্রহ করুন। এই ধরনের দুষ্টচক্র রুখতে পুলিস ও প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ জরুরি। আর সেটাই অমিল ডবল ইঞ্জিন শাসিত উত্তরপ্রদেশে।
২০২৪-এ (2024 Lok Sabha Election) এদের জবাব দিন। আর বাড়তে দেবেন না ওদের। বিজেপিকে বলব, বাংলার নামে কুৎসা না করে, আয়নায় একবার নিজেদের মুখটা দেখে নিন, প্লিজ।
আরও পড়ুন-বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস থেকে সব মামলা সরানোর আবেদন বারের