কাল অনাদি অনন্ত। কালের যাত্রাপথে সময়ের কোনও কোনও পর্ব এমন কিছু ছাপ ফেলে রাখে, যেগুলো কালের দুর্বার স্রোত খড়কুটোর মতো ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে না। ২০২৫ ঠিক তেমনই এক সময়খণ্ড। এই বছর আমাদের সামনে দাঁড় করিয়েছে প্রশ্ন আর সম্ভাবনার যুগলবন্দি— বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতি যেমন নতুন দিগন্ত খুলেছে, তেমনই সমাজ, রাজনীতি ও পরিবেশের পরতে পরতে উন্মোচিত হয়েছে জটিল বাস্তবতা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আলোয় আলোকিত হয়েছে দৈনন্দিন জীবন, আবার জলবায়ু সংকটের ছায়া দীর্ঘতর হয়েছে সভ্যতার আঙিনায়। আশার সঙ্গে সংশয়, অগ্রগতির সঙ্গে দায়বদ্ধতা— সব মিলিয়ে ২০২৫ ছিল আত্মসমালোচনারও বছর। এই ফিরে দেখা শুধু স্মৃতিচারণ নয়; এটি আমাদের ভাবনার মানচিত্র, যেখানে অতীতের অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতের পথচিহ্ন আঁকে।
আরও পড়ুন-ফরিদপুরের স্কুলে জেমসের অনুষ্ঠানে মৌলবাদীদের তাণ্ডব, বাতিল কনসার্ট
প্রয়াগ ও আকাশ—
শোকের দুই অধ্যায়
২০২৫ সালের ২৯ জানুয়ারি, মৌনি আমাবস্যার পুণ্যস্নানে প্রয়াগরাজের ত্রিবেণী সঙ্গমে উপচে পড়া জনসমুদ্রে ভয়াবহ পদদলনের ঘটনা ঘটে। ব্যারিকেড ভেঙে ও নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অন্তত ৩০ জনের মৃত্যু হয়, আহত হন বহু ভক্ত। পুণ্যের সন্ধানে আসা মানুষের ভিড় মুহূর্তে রূপ নেয় আর্তনাদের মিছিলে। এর কয়েক মাস পর, ১২ জুন ২০২৫, আকাশপথেও নেমে আসে গভীর শোক। আমেদাবাদ থেকে লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট-১৭১ উড্ডয়নের অল্পক্ষণের মধ্যেই ভেঙে পড়ে। বিমানে থাকা যাত্রীদের প্রায় সকলেই এবং মাটিতে থাকা আরও অনেকে— মোট ২৬০ জন প্রাণ হারান। বিশ্বাস ও প্রযুক্তির দুই ভিন্ন পরিসরে ঘটে যাওয়া এই বিপর্যয় আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, সামান্য অবহেলার মূল্য কত ভয়াবহ হতে পারে।
অপারেশন সিঁদুর : সীমান্তে কয়েক দিনের উত্তাপ
২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল, জম্মু ও কাশ্মীরের পাহালগাম-এ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যু দেশ জুড়ে তীব্র ক্ষোভ ও শোকের জন্ম দেয়। এই ঘটনার পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক আবারও প্রবল উত্তেজনার মুখে পড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় ৭ মে ২০২৫ ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে একটি লক্ষ্যভিত্তিক সামরিক অভিযান শুরু করে। ভারত দাবি করে, পাকিস্তান ও পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের একাধিক সন্ত্রাসী ঘাঁটি এই অভিযানের লক্ষ্য ছিল। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় সীমান্ত জুড়ে গোলাবর্ষণ ও সামরিক সতর্কতা বাড়ে, যা ৭ থেকে ১০ মে পর্যন্ত স্থায়ী হয়। কয়েক দিনের এই সশস্ত্র সংঘর্ষ পূর্ণমাত্রার যুদ্ধে রূপ না নিলেও, দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও উদ্বেগজনক অধ্যায় হয়ে থাকে— যেখানে সন্ত্রাস, প্রতিশোধ এবং কূটনৈতিক সংযম একইসঙ্গে ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নেয়।
সাংস্কৃতিক ও সামাজিক স্রোতে পশ্চিমবঙ্গ
মৌসুমি বর্ষায়, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর, সুন্দরবনের নদী-খাঁড়ির কোলে ফের ফিরে আসে সুন্দরবন ইলিশ উৎসব। ইলিশের স্বাদ, লোকজ সংস্কৃতি ও প্রকৃতির মেলবন্ধনে এই উৎসব শুধু খাদ্যরসিকতার নয়, বরং উপকূলবর্তী জীবনের ঐতিহ্য উদযাপনের এক আনন্দঘন উপলক্ষ হয়ে ওঠে। বলা ভাল, ২০২৫ সাল পশ্চিমবঙ্গের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে কিছু স্মরণীয় অধ্যায় যুক্ত করেছে। নভেম্বর মাসে কলকাতায় অনুষ্ঠিত হয় ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব প্যালিয়েটিভ কেয়ার-এর প্রথম পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্মেলন—WBIAPCON। চিকিৎসা ও মানবিকতার সংযোগস্থলে দাঁড়িয়ে এই সম্মেলন প্যালিয়েটিভ কেয়ারকে মূলধারার আলোচনায় আনার ক্ষেত্রে এক ঐতিহাসিক মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়। এদিকে, ইউনেস্কোর স্বীকৃতিকে সামনে রেখে পশ্চিমবঙ্গ সারা বছরই তার ঐতিহ্য পর্যটনকে নতুন করে তুলে ধরতে থাকে— ধর্মীয় স্থান, স্থাপত্য, লোকাচার ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ঘিরে রাজ্য নিজেকে বিশ্বমানচিত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। নাট্যমঞ্চেও ফিরে আসে স্মৃতির পুনর্জাগরণ। প্রায় ৫০ বছর পর, উৎপল দত্তের কালজয়ী নাটক ‘টিনের তলোয়ার’ নতুন করে মঞ্চস্থ হয়, পরিচালনায় সুমন মুখোপাধ্যায়। সময় বদলালেও নাটকের প্রশ্ন ও প্রতিবাদ আজও সমান প্রাসঙ্গিক— এ-কথা আবারও প্রমাণ করে বাংলা থিয়েটারের এই পুনরাগমন।
তবে সংস্কৃতির বিষয়টি এখানেই থেমে নেই। ২০২৫ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের মঞ্চে এক আবেগঘন ও স্মরণীয় মুহূর্ত তৈরি করে শাহরুখ খান ও রানি মুখার্জির সম্মাননা প্রাপ্তি। দীর্ঘ তিন দশকের অভিনয়জীবনে শাহরুখ খান প্রথমবারের মতো জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হন, যা কেবল তাঁর ব্যক্তিগত অর্জন নয়, বরং জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ও শিল্পসম্মত অভিনয়ের মধ্যেকার ব্যবধান ঘোচানোর এক প্রতীকী স্বীকৃতি।
অন্যদিকে রানি মুখার্জি তাঁর সংবেদনশীল, দৃঢ় ও মানবিক অভিনয়ের মাধ্যমে আবারও প্রমাণ করেন কেন তিনি সমসাময়িক ভারতীয় চলচ্চিত্রের অন্যতম শক্তিশালী অভিনেত্রী। এই দুই তারকার জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্তি ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়— যেখানে জনপ্রিয়তা, পরিশ্রম ও শিল্পমান একসঙ্গে সম্মানিত হয়। এই সব মিলিয়ে ২০২৫ হল স্মৃতি, সংস্কৃতি ও মানবিক চর্চার এক সংবেদনশীল ও দীপ্ত বছর।
আরও পড়ুন-অর্থনৈতিক অস্থিরতা পাকিস্তান ছেড়ে পালাচ্ছেন ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়াররা
মানব ও প্রকৃতির দ্বন্দ্ব
২০২৫ সাল প্রকৃতির অস্থিরতা এবং চরম আবহাওয়ার জন্য স্মরণীয় হয়ে আছে। জানুয়ারি ৭–৩১, গ্রেটার লস অ্যাঞ্জেলেস-এ নজিরবিহীন দাবানল ছড়িয়ে পড়ে। স্যান্টা অ্যানা বাতাস, দীর্ঘ খরা ও বজ্রপাতের সংমিশ্রণে হাজার হাজার বসতভিটে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কমপক্ষে ১৯ জন নিহত এবং প্রায় ১,০০,০০০ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরানো হয়। টেক্সাসে ৪ জুলাই, হঠাৎ নেমে আসা হড়পা বান নদী ও খালকে উন্মত্ত করে, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গ্রাম ও শহর প্লাবিত হয় এবং অন্তত ১২০ জনের মৃত্যু ঘটে। ভারতেও বর্ষাকালে পাহাড়ি অঞ্চলে ঘটে মারণ হড়পা বান, বহু গ্রাম বিচ্ছিন্ন হয়। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়, টাইফুন ও সাইক্লোন আঘাত হানে। টাইফুন রাগাসা, সাইক্লোন সেনিয়ার, ও হ্যারিকেন মেলিসার মতো ঝড়ে শতাধিক মানুষ প্রাণ হারায়, অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়।
পশ্চিমবঙ্গে কলকাতায় ২৩ সেপ্টেম্বর ঘটে রেকর্ড ব্রেকিং আকাশভাঙা বৃষ্টি, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শহরের বিস্তীর্ণ অংশ জলমগ্ন হয়। নালার সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় রাস্তাঘাট ও পরিবহণ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়, কমপক্ষে ১২ জনের মৃত্যু হয়। এই সমস্ত ঘটনা একসঙ্গে প্রমাণ করে, জলবায়ু পরিবর্তন আর দূরের ভবিষ্যতের নয়— এটি বর্তমানে আমাদের জীবনের অঙ্গ। বারবার প্রকৃতি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, দাবানল, খরা, জলাবদ্ধতা, ঝড়— এইসব চরম প্রতিক্রিয়ার মোকাবিলায় প্রস্তুতি, সচেতনতা ও স্থায়ী পরিকল্পনার কোনও বিকল্প নেই।
নদীবন্ধন থেকে নবায়নযোগ্য শক্তি পর্যন্ত
২০২৫–’২৬ সালের পশ্চিমবঙ্গ বাজেটে ঘোষণা করা হয় ‘নদীবন্ধন’ স্কিম, যা নদীভাঙা প্রতিরোধ এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। এই স্কিমের মাধ্যমে নদীতীর মজবুত করা, প্রাকৃতিক জলাশয় সংযোগ এবং নদীভিত্তিক জীবিকা ও কৃষি উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দেওয়া হয়েছে, যার জন্য প্রাথমিকভাবে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের আওতায় দীর্ঘমেয়াদি নদী ব্যবস্থাপনা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য আরও ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারও ২০২৫ সালে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে; ৭ মে প্রকাশিত ক্লাইমেট ফাইন্যান্স ট্যাক্সোনমি ড্রাফট জলবায়ু-সঙ্গত বিনিয়োগের রূপরেখা নির্ধারণ করবে এবং ২৬ মে চালু ‘ভারত ফোর কাস্টিং সিস্টেম’ চরম আবহাওয়া, ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার পূর্বাভাসকে আরও শক্তিশালী করবে। এ ছাড়াও, নবায়নযোগ্য শক্তি সম্প্রসারণ এবং নিউক্লিয়ার এনার্জি মিশনে ২০,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা ছোট মডুলার রি-অ্যাক্টর ও গ্রিন হাইড্রোজেনের উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। নদীর তীর থেকে আকাশ পর্যন্ত, এই উদ্যোগগুলোই জলবায়ু সচেতনতা, পরিবেশ সুরক্ষা এবং স্থায়ী উন্নয়নের এক সুসংহত চিত্র ফুটিয়ে তোলে।
আরও পড়ুন-মাসিক বেতনে এগিয়ে বাংলা
ঐতিহ্য, ক্রীড়া ও মহাকাশের মিলনবিন্দু
২০২৫ সাল ভারতের জন্য ছিল এক অসাধারণ ও বৈচিত্র্যময় বছর। কলকাতার দুর্গাপুজো এবার শুধুই ধর্মীয় উৎসব নয়, দেশীয় পর্যটনের প্রধান আকর্ষণ হিসেবেও স্বীকৃতি পেল। সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৫৩% ভ্রমণপ্রিয় নাগরিক উৎসবটি দেখতে উদগ্রীব, যা প্রমাণ করে আমাদের সংস্কৃতির আন্তর্জাতিক আকর্ষণ কত গভীর।
ক্রীড়ার মঞ্চেও ভারত নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করল। কম্পাউন্ড আর্চারিকে ২০২৮ সালের লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকে অন্তর্ভুক্ত করা হল। ভারতীয় দলের শক্তিশালী অবস্থান এই সিদ্ধান্তকে আরও মর্যাদাপূর্ণ করে তুলেছে, যা দেশের ক্রীড়া প্রতিভাদের জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পথ সুগম করবে।
ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে, জুলাই ২০২৫-এ ব্রিটিশ শাসনকালে বিদেশে নেওয়া লর্ড বুদ্ধের পবিত্র প্রত্নসামগ্রী ফিরে এল। একই মাসে ‘মরাঠা মিলিটারি ল্যান্ডস্কেপস’কে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হল, যা ভারতের সমৃদ্ধ সামরিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসকে বিশ্বের সঙ্গে সংযুক্ত করল।
মহাকাশের ক্ষেত্রেও ভারত নতুন ইতিহাস রচনা করল। জুনে গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা আক্ষরিক অর্থে পৃথিবীর কক্ষপথ ছাড়িয়ে মহাকাশে দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে পৌঁছলেন। রাকেশ শর্মার ১৯৮৪ সালের পদচারণার পর এটি দেশের মহাকাশ গবেষণার নতুন অধ্যায়ের সূচনা। সংক্ষিপ্তভাবে, ২০২৫ সাল ছিল সেই বছর যা ঐতিহ্য, ক্রীড়া ও প্রযুক্তির মিলনে ভারতের গ্লোবাল উপস্থিতিকে দৃঢ় করল। সংস্কৃতি, প্রতিভা ও উচ্চাকাঙ্ক্ষার সমন্বয়ে এই বছর ভারতের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রযাত্রা
২০২৫ বিশ্ব জুড়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে এক অনন্য বছর হিসেবে ধরা পড়ল। ৩০ জুলাই, নাসা ও ইসরোর যৌথ উদ্যোগে নিসার স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ সম্পন্ন হয়। এটি ডুয়াল-ফ্রিকোয়েন্সি সিনথেটিক অ্যাপারচার রাডার নিয়ে ভূ-পর্যবেক্ষণে নতুন দিগন্ত খুলেছে, যা বন্যা, ভূমি অবক্ষয়, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশ গবেষণায় নির্ভুল ও আধুনিক তথ্য সরবরাহ করবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রেও ২০২৫ স্মরণীয়। বিশ্বে এজেন্টিক এআই–এর অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো। এ এমন এক সিস্টেম যা স্বায়ত্তশাসিতভাবে সিদ্ধান্ত নিতে, পরিকল্পনা করতে এবং লক্ষ্যভিত্তিক কাজ সম্পাদন করতে সক্ষম। ভারতের এনআইআইটি-এর উদ্যোগ এ ধরনের এআই ইঞ্জিনিয়ার তৈরি করতে প্রশিক্ষণ চালু করেছে, যা দেশের এআই গবেষণা ও শিল্পক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখবে।
তবে জীববিজ্ঞানে এবছর বড় দাপট দেখিয়েছে কলোজাল বায়োসায়েন্সেস (Colossal Biosciences), যা ‘ডাইর উলফ’ বা এক বিশেষ প্রজাতির নেকড়ে পুনর্জন্ম-এ সফল হয়েছে। তিনটি ডাইর উলফ পাপ বা শাবক জন্ম নিয়েছে, যা ডি-এক্সটিঙ্কশন প্রক্রিয়ায় যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এ ধরনের উদ্যোগ ভবিষ্যতে বহু বিলুপ্ত প্রাণী পুনর্জীবিত করার সম্ভাবনা খুলে দিচ্ছে।
মহাকাশ অভিযানেও চমক আনল ফায়ারফ্লাই এয়ারোস্পেস, যাদের ব্লু ঘোস্ট মিশন ২ মার্চ চাঁদে প্রথম বাণিজ্যিক সফট ল্যান্ডিং সম্পন্ন করে। মারে ক্রিসিয়াম অঞ্চলে পৌঁছে এই ল্যান্ডার বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত ১০টি পেলোড নিয়ে চাঁদের ওপর গবেষণার পথ সুগম করেছে। এ ছাড়াও, ২০২৫-এ নবায়নযোগ্য শক্তি, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, জিনোম গবেষণা ও বায়োমেডিক্যাল প্রযুক্তি-তে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে। নদীর তীর থেকে চাঁদের পৃষ্ঠ পর্যন্ত, এই বছরটি প্রমাণ করল যে বিজ্ঞান, উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তি একসাথে মানবসমাজের জন্য নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলতে পারে।
বিদায় ২০২৫, স্বাগত ২০২৬
২০২৫ সাল ভারতের জন্য ছিল চমক ও চ্যালেঞ্জে ভরা— সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও মহাকাশে সাফল্যের স্মরণীয় মুহূর্ত এবং কিছু অপ্রত্যাশিত হতাশা। দুর্গাপুজোর আবহে দেশ জুড়ে উৎসব, অলিম্পিক ও মহাকাশ অভিযান আমাদের গর্বিত করল। ইতিহাস ফিরিয়ে আনা প্রত্নসামগ্রী ও ইউনেস্কো স্বীকৃতি আমাদের সাংস্কৃতিক আত্মবিশ্বাস বাড়াল। এবার বিদায় নিচ্ছে বছরটি, শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা ও আনন্দের মুহূর্ত রেখে। নতুন বছর ২০২৬ আসুক নতুন সম্ভাবনা, উদ্যম ও সাফল্যের সঙ্গে— দেশকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে।

