প্রতিবেদন : রেলের গাফিলতিতেই বালেশ্বরের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। প্রাথমিক ভাবে এমনই প্রমাণ মিলেছে। রেলের তরফে যে তদন্ত হয়েছে তাতেও ‘হিউম্যান এরর’-এর কথাই বলা হয়েছে। কিন্তু গোটা ঘটনার পিছনে রেলের গাফিলতির প্রমাণ ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। ঘটনা নিয়ে দুই রেলকর্তার কথোপকথনের একটি অডিয়ো ক্লিপ সামনে এসেছে। সেই কথোপকথনও রেলের গাফিলতিতে সিলমোহর দিচ্ছে। ওই অডিয়ো ক্লিপে শোনা গিয়েছে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের জন্য মেন লাইনে সিগন্যাল থাকলেও পয়েন্ট ছিল লুপ লাইনে।
আরও পড়ুন-ছোট্ট-ছোট্ট গল্প থেকে ভালবাসা সৃষ্টি হয়…
এখন প্রশ্ন হল, এটা কীভাবে সম্ভব হল? সবমিলিয়ে রেল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির তত্ত্বই উঠে আসছে। এখনও পর্যন্ত এই গাফিলতির বলি ৩২৩ জন যাত্রী। এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া খবরে জানা যাচ্ছে, যে লাইন দিয়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেস যাওয়ার কথা ছিল সেই লাইনে কিছু কাজ চলছিল। তার জন্য লুপ লাইনে পয়েন্ট দেওয়া ছিল। যাঁরা কাজ করছিলেন তাঁদের ধারণা ছিল ট্রেন আসার আগে কাজ শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু এরই মধ্যে ট্রেন কাছাকাছি চলে আসে। তখন মেন লাইনে ঢোকার জন্য করমণ্ডল এক্সপ্রেসকে সিগন্যাল দেওয়া হয়। কিন্তু আগে থেকে লুপ লাইনে দেওয়া পয়েন্ট আর তোলা হয়নি। তা দেখেই চালক ট্রেনটিকে লুপ লাইনে ঢুকিয়ে দেন।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
সেখানে আগে থেকেই দাঁড়িয়ে ছিল মালগাড়ি। ১২৭ কিমি বেগে আসা করমণ্ডল এক্সেপ্রেস গিয়ে সজোরে ধাক্কা মারে মালগাড়িতে। সেই ধাক্কার জেরে করমণ্ডলের সব বগিগুলিই লাইনচ্যুত হয়ে উল্টে যায়। ঠিক তখনই পাশের লাইন দিয়ে হামসফর এক্সেপ্রেস আসছিল। করমণ্ডলের পিছনের কয়েকটি বগি উল্টে গিয়ে ওই ট্রেন ধাক্কা মারে। সেই ধাক্কায় ওই ট্রেনের চারটি বগি লাইনচ্যুত হয়। গোটা ঘটনায় গাফিলতির দায় কোনও ভাবেই এড়াতে পারে না রেল।
আরও পড়ুন-হাওড়ায় যাত্রীরা পেলেন শুশ্রূষা, রাজ্যের সহায়তা
ঘটনার পরই শনিবার সকালে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। তারপরই যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বেলার দিকে আসেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক। দুপুরের পর আসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। রাত থেকেই শুরু হয় উদ্ধার কাজ।
বালেশ্বরে প্রতিনিধি দল : মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে উদ্ধারকাজে নেমে পড়ে টিম বাংলা। ঘটনার পর রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় রাজ্যের প্রতিনিধিদল। ওই দলে ছিলেন মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া ও সাংসদ দোলা সেন। চোখের সামনে মৃত্যুমিছিল দেখে বিহ্বল তাঁরা। দোলা সেনের কথায়, এই ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার অভিঘাত এভাবে চাক্ষুষ করার পরও বিশ্বাস হচ্ছে না এমন হতে পারে! মানস ভুঁইয়া আহতদের উদ্ধার ও চিকিৎসার কাজে তদারকি করেন। আহতদের চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে সর্বতোভাবে ওড়িশা সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলা।
মেডিক্যাল টিম ও অ্যাম্বুল্যান্স : রাজ্যের তরফে এখনও পর্যন্ত ৭০টি অ্যাম্বুল্যান্স বালেশ্বরে পৌঁছে গিয়েছে। শুক্রবার রাতেই ২৪টি রওনা হয়। তারপর শনিবার আরও ৪৬টি গিয়েছে। ১০টি বড় প্যাসেঞ্জার বাস ও ২০টি ৪০৭ গাড়িও পাঠানো হয়েছে। ৪০ জন চিকিৎসকের একটি মেডিক্যাল টিম ও দু’টি কুইক রেসপন্স টিমও বালেশ্বরে গিয়েছে।
আরও পড়ুন-রাজনৈতিক শিষ্টাচারের প্রতীক, রাজনৈতিক কর্মসূচি বাতিল করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়
আনা হচ্ছে আহতদের : এখনও পর্যন্ত সাতশোরও বেশি যাত্রীকে নিরাপদে রাজ্যে ফেরানে হয়েছে। ১২০ জন আহতকে রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে। মৃতদেহ বহনের ব্যাগও পাঠানো হয়েছে। দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত রাজ্যের ৩১ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে প্রশাসন।
স্বজাগ কন্ট্রোলরুম : শুক্রবার রাত থেকেই খোলা হয়েছে ২৪ ঘণ্টার কন্ট্রোল রুম। সেখানে রয়েছেন ৪ সিনিয়র আইএএস অফিসার, ৪ ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ১ এসডিপিও। দুশো জন রক্তদাতাকে তৈরি রাখা হয়েছে। দরকারে রক্ত পাঠানোর সমস্যা না হয়। খড়্গপুর, হাওড়া, সাঁতরাগাছি— তিন জায়গায় রেসকিউ পয়েন্ট করা হয়েছে। সেখানে তৈরি আছে অ্যাম্বুল্যান্সও। গুরুতর আহতদের গ্রিন করিডোর করে হাসপাতালে ভর্তি করাতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়ে রেখেছে স্বাস্থ্য ভবন। এদিন সন্ধে সাডে় সাতটার পর বিশেষ ট্রেনের বেশ কয়েকজন যাত্রীকে নিয়ে আসা হয়েছে।