প্রতিবেদন : কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার যতই দেশের আর্থিক বৈষম্য দূর করার কথা বলুক না কেন, বাস্তবে তার কোনও প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, দেশের মোট সম্পদের ৪০ শতাংশের বেশি মালিকানা রয়েছে মাত্র ১ শতাংশ ধনী মানুষের হাতে। অথচ দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের হাতে রয়েছে মাত্র ৩ শতাংশ সম্পদ। এই পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট হয়ে যায় মোদি সরকারের শাসনে দেশে কীভাবে আর্থিক বৈষম্য বেড়েছে।
আরও পড়ুন-মোদির উদ্বোধন করা প্রমোদতরী আটকে গেল মাঝগঙ্গায়
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সভার প্রথম দিনে সোমবার এই পরিসংখ্যান পেশ করা হয়। আন্তর্জাতিক সমাজসেবী সংগঠন অক্সফাম ইন্টারন্যাশনালের দাবি, শীর্ষ ১০০ জন ভারতীয় ধনকুবের যদি ২.৫ শতাংশ কর দেন বা দেশের মাত্র ১০টি ধনী পরিবার বা ব্যক্তি যদি পাঁচ শতাংশ হারে কর দেন তাহলে বাচ্চাদের স্কুলে ফিরিয়ে আনার জন্য যে অর্থের প্রয়োজন তার সবটাই পাওয়া যাবে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম যে সাপ্লিমেন্টারি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তাতে বলা হয়েছে, ভারতের অন্যতম সেরা ধনী ব্যক্তি গৌতম আদানি ২০১৭ থেকে ২০২১ এর মধ্যে যে অনাদায়ী লাভের উপর এককালীন কর হিসেবে ১.৭৯ লক্ষ কোটি টাকা দিতে পারেন। যা আগামী এক বছরের জন্য দেশে ৫০ লক্ষেরও বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের নিয়োগ করার জন্য যথেষ্ট। অন্যদিকে, ২০২১-২২ সালে গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স (জিএসটি) বাবদ আদায় হওয়া মোট ১৪.৮৩ লক্ষ কোটি টাকার প্রায় ৬৪ শতাংশ এসেছে জনসংখ্যার নিচের ৫০ শতাংশ মানুষের কাছ থেকে। জিএসটির মাত্র ৩ শতাংশ শীর্ষ ১০ শতাংশের থেকে এসেছে। এই পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে, জিএসটি আদায়ের ক্ষেত্রেও দেশের অসহায় ও দরিদ্র মানুষকে পিষে চলেছে মোদি সরকার।
আরও পড়ুন-ভোটের লক্ষ্যে কৌশল বিজেপির
সার্ভাইভাল অফ দ্য রিচেস্ট শিরোনামের ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ভারতের বিলিয়নিয়ারদের কাছ থেকে যদি তাদের মোট সম্পদের উপর একবার দুই শতাংশ হারে কর আদায় করা হয় তবে সেই টাকায় আগামী তিন বছরের জন্য দেশে অপুষ্টি দূর করতে প্রয়োজনীয় ৪০৪২৩ কোটি টাকা উঠে আসবে। দেশের ১০ জন ধনকুবেরের উপর মাত্র পাঁচ শতাংশ এককালীন কর (১.৩৭ লক্ষ কোটি টাকা) আদায় করা হলে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের জন্য প্রয়োজনীয় ৮৬২০০ কোটি টাকা এবং আয়ুষ মন্ত্রকের অনুমানিকৃত তহবিলের (৩০৫০ কোটি টাকার) চেয়ে ১.৫ গুণ বেশি টাকা আদায় হবে। ওই পরিসংখ্যানে দেশের লিঙ্গ বৈষম্যের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে। দাবি করা হয়েছে, দেশে একজন পুরুষ শ্রমিকের প্রতি এক টাকার তুলনায় একজন মহিলা শ্রমিক উপার্জন করেন মাত্র ৬৩ পয়সা। তফসিলি জাতি এবং গ্রামীণ কর্মীদের ক্ষেত্রে পার্থক্যটি আরও বেশি।