নয়াদিল্লি: মার্কিন শুল্কের ফাঁসে ক্ষতির মুখে ভারতের বাণিজ্য ও অর্থনীতি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর পর ভারতের একাধিক শিল্প ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। তার মধ্যে হিরে-সহ গয়না শিল্প যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে পোশাক শিল্পও। এতদিন মার্কিন বহু ব্র্যান্ডের পোশাক ভারতে তৈরি হয়ে আমেরিকায় গিয়ে শুধুমাত্র লোগো লাগিয়ে আবার ভারতে এসে বিক্রি করে মুনাফা লুটত মার্কিন পোশাক বিক্রেতারা। তবে তাতে পরোক্ষভাবে দক্ষিণ ভারতের একাধিক শহরের বহু ছোটবড় কারখানা ও পোশাক শিল্পের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিক, কর্মী, মালিকদের স্থায়ী রোজগারের দিশা মিলত। এই ছবিটাই বদলে গিয়েছে মাত্র দেড় মাসে। তামিলনাড়ুর তিরুপুরের মতো শহরে পোশাক শিল্পের সঙ্গে যুক্ত অন্তত ৬ লক্ষ কর্মী কাজ হারিয়েছেন ট্রাম্পের শুল্কনীতির ধাক্কায়। কাজ হারিয়ে দেওয়ালির মুখে পরিযায়ী শ্রমিকরা এখন বাধ্য হয়ে ফিরে যাচ্ছেন নিজেদের রাজ্যে।
আরও পড়ুন-দিল্লিতে সাংসদদের আবাসনে আগুন
তামিলনাড়ুর তিরুপুর পুরোপুরিভাবে পোশাক তৈরির হাব। এখানে তৈরি পোশাক ওয়ালমার্ট, টার্গেট থেকে হফম্যানের মতো নামী ব্র্যান্ডের কাছে বিক্রি হয়। ফলে কর্মীদের এখানে রোজগার হয় ডলারে। যে কারণে এই শহরকে ডলারের শহর বলেও অভিহিত করা হয়। শহরের বছরে সর্বমোট রোজগার আনুমানিক ৩২ হাজার কোটি। গত অগাস্টে ট্রাম্প ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার পর গোটা ছবিটাই এখন বদলে গিয়েছে। দক্ষিণ ভারতের এই শহরে উৎপাদন কমে গিয়েছে ২৫ শতাংশ। তিরুপুরে পোশাক শিল্পে কাজ করতে স্থানীয় মানুষের পাশাপাশি ভিন রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকরাও যোগ দেন। তবে স্থানীয় বা পরিযায়ী, কোনও শ্রমিকের সঙ্গেই কোনও চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয় না। কার্যত অসংগঠিত শ্রমিক হিসাবেই তাঁরা কাজ করেন। তবু তাতে মাসে প্রায় ২০ হাজার টাকা রোজগার হত শ্রমিকদের। কিন্তু মার্কিন শুল্ক আরোপ হওয়ার পরে মালিকপক্ষ একধাক্কায় কাজের সময় কমিয়ে দিয়েছেন। সেইসঙ্গে কমেছে মজুরিও। তাঁদের দাবি, এভাবে ব্যয় সংকোচন না করলে তাঁরা ব্যবসায় টিকে থাকতে পারবেন না। অন্যদিকে প্রতিটি পোশাকে কাজের উপর রোজগার করতেন শ্রমিকরা। কাজের সময় কমিয়ে দেওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই রোজগারও কমেছে। গত দেড়মাসে ২০ হাজার টাকার রোজগার কমে প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। কর্মসংস্থানের বেহাল পরিস্থিতিতে আর্থিক চাপ নিয়েও বহু শ্রমিক এখনও কাজে টিকে রয়েছেন। তারপরেও দুরবস্থা প্রায় ৬ লক্ষ শ্রমিকের। যাদের কোনও নোটিশ না দিয়েই কাজ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মালিকপক্ষ দাবি করছে, কর্মীছাঁটাই না করলে এই পরিস্থিতিতে লাভ তো দূরের কথা, ব্যবসা টিকিয়ে রাখা দায় হবে। এমনকী তাঁরা পরিকল্পনা করেই ফেলেছেন, আমেরিকায় রফতানির জন্য যে পোশাক তাঁরা বানাতেন, সেই পোশাকের পরিমাণ ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দেবেন। তবেই কোম্পানিগুলির আয় ও ব্যয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখা যাবে। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যে শ্রমিকরা আচমকাই কাজ হারালেন, তাঁরা সেই মূল্যের তো বটেই, ন্যূনতম মজুরির কাজও পাচ্ছেন না। পোশাক শিল্প তো দূরের কথা, তাঁদের রাজমিস্ত্রির কাজ করতে হচ্ছে। এক-একটি ইউনিটে একসঙ্গে ৬০ জন করে শ্রমিকেরও কাজ গিয়েছে এই পরিস্থিতিতে। এই পরিস্থিতিতে সরকার শ্রমিকদের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না, অভিযোগ শ্রমিকদের। এমনকী মালিক পক্ষও অভিযোগের আঙুল তুলছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের দিকে। প্রায় দেড় মাস ধরে লাগাতার অস্তিত্ব সংকট কাটাতে চাওয়া শিল্পের জন্য এখনও কোনও ভাবনাচিন্তা করে উঠতে পারেনি কেন্দ্রের বিজেপি সরকার।