প্রতিবেদন : রাজ্য প্রশাসনের নজিরবিহীন নিরাপত্তা আয়োজন সত্ত্বেও রবিবার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের টেট পরীক্ষা বানচাল করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র সামনে এল। পর্ষদ সভাপতি গৌতম পাল শনিবার বিকেলে স্পষ্ট ভাষায় জানান, প্রশ্নপত্র বেরিয়ে যাওয়ার রটনা থেকে শুরু করে পরীক্ষার্থীরা যাতে পরীক্ষার নিয়ম না মানেন, সে নিয়ে নানারকম কথা হচ্ছে। পর্ষদ সতর্ক। সব রকমের পরিস্থিতির জন্য তৈরি। পর্ষদ সভাপতি যখন একথা বলছেন তখন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা প্রশ্নপত্র ফাঁসের ভুয়ো অভিযোগ তোলা শুরু করেছেন। যা শুনে তৃণমূল কংগ্রেস বলেছে, ৭ লক্ষ পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দেবেন। তাঁরা পরীক্ষা দেওয়ার আগে এমন ভুয়ো খবর কোনও সুস্থ মানুষ দিতে পারেন না। স্বচ্ছ ও ত্রুটিমুক্ত পরীক্ষার আয়োজন করতে ব্যবস্থা নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্যদ। কোনওরকম ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢোকা যাবে না। পরীক্ষাকেন্দ্রের আশেপাশে সকাল দশটা থেকে তিনটে পর্যন্ত কোনও ফটোকপির দোকান খোলা থাকবে না। এরপরও পরীক্ষায় বিঘ্ন ঘটানের চেষ্টার আশঙ্কা প্রকাশ করলেন পর্ষদ সভাপতি গৌতম পাল। তাঁর দাবি, পর্ষদ ও প্রশাসনের কাছে সুনির্দিষ্ট খবর আছে, কেউ কেউ এই পরীক্ষা ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটাতে চাইছেন। শনিবার সাংবাদিক বৈঠক করে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পাল বলেন, ‘পর্ষদের কাছে, প্রশাসনের কাছে খবর আছে। কেউ কেউ পরীক্ষা ব্যবস্থাকে বিঘ্নিত করার চেষ্টা করছেন। সেরকম হলে প্রশাসনের কাছে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করব।’ প্রোটোকল অনুযায়ী পরীক্ষা নেওয়া হবে বলে এদিন তিনি জানান। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে টেট পরীক্ষা কেন্দ্রগুলিতে। রাজ্য জুড়ে প্রায় দেড় হাজার কেন্দ্রে টেট পরীক্ষা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে সমস্ত জেলার জেলাশাসক ও অতিরিক্ত জেলাশাসককে নিরাপত্তার বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন-EXCLUSIVE সাক্ষাৎকারে বিস্ফোরক সাকেত গোখেল, মেঘালয়-গোয়া-ত্রিপুরায় দলের স্ট্র্যাটেজি জানতেই গ্রেফতার
কোন খবরের ভিত্তিতে পরীক্ষায় বিঘ্ন ঘটনোর চেষ্টা হবে বলে মনে করা হচ্ছে? পর্যদ সভাপতি গৌতম পাল বলেন, সেটা এখনই আপনাদের বলব না। তবে আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট খবর রয়েছে। ফের স্পষ্ট করে দিচ্ছি, পরীক্ষায় কোনওরকম বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা ঠেকাতে প্রশাসন অতি সতর্ক রয়েছে। প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রগুলির উপরে নজরদারি চালাতে ওয়াররুম তৈরি করা হয়েছে। অবশ্যই নিজের কোনও একটি ফটো-আইডেন্টিটি কার্ড যেমন আধার কার্ড বা ভোটার কার্ড বা প্যান কার্ড বা ড্রাইভিং লাইসেন্স— যা সঙ্গে আছে তা নিতে ভুলবেন না। ব্ল্যাক বলপয়েন্ট পেন একটি বা দুটি রাখা বাঞ্ছনীয়। ঘড়ি, গয়না পরে পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢোকা যাবে না। কোনও স্টেশনারি বস্তু, লিখিত বা ছাপানো অবস্থায় পরীক্ষাকেন্দ্রের ভিতরে নিয়ে যাওয়া যাবে না। ইনভিজিলেটরের অনুমতি ছাড়া কোনও পরীক্ষার্থী পরীক্ষার সময় শেষ না হওয়া পর্যন্ত আসন বা সেন্টার ছাড়তে পারবেন না।
আরও পড়ুন-জনসংযোগ যাত্রা মন্ত্রী উদয়নের
স্কুল শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি মামলা আর তদন্তের মধ্যেই রাজ্যে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের টেট পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। রাজ্যের ১৪৫৩টি কেন্দ্রে ৬ লক্ষ ৯০ হাজারের বেশি পরীক্ষার্থী এই পরীক্ষায় বসতে চলেছেন। একদিকে স্বচ্ছ কারচুপি মুক্ত পরীক্ষার আয়োজন, অন্যদিকে পরীক্ষার্থীদের নির্ঝঞ্ঝাটে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে তৎপর রাজ্য সরকার। প্রশ্ন ফাঁস রুখতে কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম থেকে নজরদারি চলবে। পরীক্ষা কেন্দ্রে ফোন বা যে কোনও রকম ইলেকট্রনিক গেজেটের পাশাপাশি ব্যাগ, জলের বোতল ঘড়ির ওপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। মেটাল ডিটেক্টর-এর মাধ্যমে প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে তল্লাশি করা হবে।
আরও পড়ুন-বীরবাহার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে দেখান
এদিকে রাজ্য সরকারের অনুমান পরীক্ষার্থী, অভিভাবক ও কর্মী মিলিয়ে ১০ লক্ষ মানুষ পথে নামবেন। তাঁদের যাতায়াত মসৃণ করতে সার্বিকভাবে গণ-পরিবহণ ব্যবস্থাকে মসৃণ রাখার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। সরকারি সমস্ত বাস পথে নামবে। প্রতি চার মিনিট অন্তর সব রুটের বেসরকারি বাস চলবে বলে আশ্বাস মিলেছে। পরীক্ষার্থীদের সুবিধার্থে পূর্ব রেল ১৬ জোড়া অতিরিক্ত ট্রেন চালাবে। অতিরিক্ত ট্রেন চালাবে মেট্রো রেলও। দমদম থেকে নিউ গড়িয়া রুটে ৭ মিনিট অন্তর মেট্রো চালানো হবে। পরীক্ষা সংক্রান্ত কোনও সমস্যা হলে প্রার্থীদের সাহায্য করার জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ইতিমধ্যে হেল্পলাইন নম্বর প্রকাশ করা হয়েছে পর্ষদের তরফে। ৬২৯২২-৭৮৪৩৮ নম্বরে যোগাযোগ করে পরীক্ষার্থীরা নিজেদের সমস্যার কথা জানতে পারবেন।
এক নজরে
* পরীক্ষার্থীরা প্রশ্নপত্র ও বুকলেট বাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন।
* স্বচ্ছতার জন্য ওএমআর শিটের কপি থাকবে দুটো। অরিজিনাল কপি বোর্ড নিয়ে নেবে এবং পরীক্ষার্থী অপর একটি কপি বাড়ি নিয়ে যাবেন।
* প্রশ্নপত্র ও ওএমআর শিটের সিল খুলবে পরীক্ষার্থীরা।
* ১১.৪৫-এর পর প্রার্থীরা এই ওএমআর শিট খুলতে পারবেন।
* পর্ষদের সুনির্দিষ্ট প্রোটোকল, গাইডলাইনস সমস্ত পরীক্ষার্থীকে অক্ষরে অক্ষরে মানতে হবে।
* বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশনের পরই ক্লাসরুমে ঢোকার সুযোগ পাওয়া যাবে।
* সিসি টিভি ক্যামেরায় নজরদারি
* পরীক্ষাকেন্দ্রে ফোন-সহ ইলেকট্রনিক্স গ্যাজেট নিয়ে ঢোকায় নিষেধাজ্ঞা
* নেওয়া যাবে না ব্যাগ, জলের বোতল
* হেল্পলাইন নম্বর ৬২৯২২-৭৮৪৩৮