বিনয় বাদল দীনেশ, এক অনন্য বীরগাথা

২৬ জানুয়ারি মুক্তি পেয়েছে অরুণ রায় পরিচালিত ‘৮/১২ বিনয় বাদল দীনেশ’। স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষে তিন তরুণ বিপ্লবীর বীরগাথা বড় পর্দায় অনবদ্যভাবে তুলে ধরেছেন তিনি। ঐতিহাসিক রাইটার্স বিল্ডিং অ্যাটাক ও সিম্পসন হত্যা কাহিনিই ছবিটির মূল আধার। ইতিমধ্যেই দর্শক-সমালোচকের প্রশংসায় ঋদ্ধ ৮/১২। পরিচালকের সঙ্গে দীর্ঘ কথা বললেন প্রীতিকণা পালরায়

Must read

ইতিহাসভিত্তিক বিষয় নিয়ে আপনি কাজ করতে ভালবাসেন এ-কথা বারবারই বলে থাকেন। আপনার আগের ছবি ‘এগারো’ কিংবা ‘হীরালাল’ তার প্রমাণ। ‘৮/১২’ (8/12 Binoy Badal Dinesh) কি সেই ভাবনা থেকেই?

অরুণ : এ-কথা ঠিক যে ইতিহাস আমার প্রিয় বিষয়। বিশেষত আমাদের মানে বাঙালিদের ইতিহাসের প্রতি আমার বাড়তি ভালবাসা। কারণ আমাদের ভীষণ সমৃদ্ধশালী একটা ইতিহাস, পরম্পরা, সংস্কৃতি আছে। আমরা মনে রাখি বা ভুলে থাকি সেটা অন্য বিষয়! কিন্তু আছে। আর আমি তা নিয়ে নিয়মিত চর্চায় থাকি। আমার আগের ছবিগুলি তারই ফসল। কিন্তু ‘৮/১২’-র ব্যাপারটা একটু আলাদা রকম।

কীরকম?

অরুণ : ‘৮/১২’-র (8/12 Binoy Badal Dinesh) প্রাথমিক ভাবনাটা আমার ছিল না। প্রোডিউসার শুভেন দাস এরকম একটা ভাবনা ভাবেন। উনি আমার ‘হীরালাল’ দেখেছিলেন। ছবিটা দেখার পর ফোনে উনি জানান, বিনয়-বাদল-দীনেশ নিয়ে একটা ছবি ভাবা হচ্ছে আর এর জন্য প্রোডিউসারও আছে। আমি আগ্রহী কিনা। স্বাভাবিকভাবেই পিরিয়ড ড্রামা শুনে আমি আগ্রহ দেখাই। এরপর প্রযোজক কান সিং সোধার সঙ্গে শুভেনই আমার আলাপ করিয়ে দেন। পরবর্তী ভাবনা আমি এগিয়ে নিয়ে যাই।

তার মানে এক অর্থে এ ছবির সূত্রপাত ‘হীরালাল’-এর হাত ধরেই?

অরুণ : তা বলা যায়!

কিন্তু বিনয়, বাদল, দীনেশ মানে তো বিস্তৃত ইতিহাস, শুধু ‘৮/১২’-র ঘটনা নিয়েই ছবি হবে, এটাও প্রথম থেকেই কি ঠিক ছিল?

অরুণ : না, না। সেটা আমি ঠিক করি। আমি জানি দীনেশ গুপ্তর জীবনী নিয়ে একটা ছবি তৈরি হচ্ছে। তাই বিনয়-বাদল-দীনেশের বায়োপিক বানাতে চাইনি। আমার মনে হয়েছিল, ৮/১২-র ঘটনা অর্থাৎ রাইটার্স বিল্ডিং অ্যাটাক নিয়ে এগোনো যেতে পারে কারণ মানুষ বিনয়-বাদল-দীনেশ-এর নাম জানে, তিনজন রাইটার্স বিল্ডিং অ্যাটাক করেছিল, তা-ও জানে কিন্তু কেন করেছিল, পরিপ্রেক্ষিত কী ছিল, তা জানে না। আমার মনে হয়েছিল সেটা যদি সবার সামনে তুলে ধরা যায়।

কিন্তু একটি নির্দিষ্ট ঘটনাকে তুলে ধরতে গেলেও তো সমসাময়িক ঘটনাবলি দেখাতেই হবে? আর পিরিয়ড পিস মানেই তো বিরাট একটা দায়িত্বের ব্যাপার?

অরুণ : একদমই তাই। আমার ছবি শুরু হয়েছে ১৮ এপ্রিল ১৯৩০-এর চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন দিয়ে। শেষ হয়েছে ৮/১২-র ঘটনা দিয়ে। দুটি ইনসিডেন্টের মধ্যে একটা যোগসূত্র আছে। একই সঙ্গে এই ছ-সাত মাসে বাংলায় উল্লেখযোগ্য যা যা হয়েছিল তা আমি দেখিয়েছি আমার ছবিতে। স্ক্রিপ্ট আমি করলেও রিসার্চের দায়িত্বে ছিলেন রুদ্ররূপ মুখার্জি। এ-ছাড়া ১৯৩০-এর কলকাতা দেখানো এখন রিয়েল লোকেশনে সম্ভব নয়। বেশিটাই ভিএফএক্স। সেটা করেছেন ইন্দ্রনীল রায়। ক্যামেরায় গোপী ভগত আর আর্ট ডিরেকশনে তন্ময় চক্রবর্তী ও কস্টিউমে সাবর্ণী দাস। পুরোটাই হয়েছে একটা টিম হিসেবে কাজ করে।

আরও পড়ুন-একটু ভাল সংগীতসম্রাজ্ঞী

আরও একটা গুরূত্বপুর্ণ পার্ট বোধহয় বাদ পড়ল, সেটা কাস্টিং। এ-ধরনের চরিত্রে যথাযথ শিল্পী নির্বাচনও তো ভীষণ দায়িত্বপূর্ণ। সে কাজটা কীভাবে হয়েছিল?

অরুণ : দেখুন অর্ণ, কিঞ্জল এরা থিয়েটারের স্টার। ওদের আমি আগেই চিনতাম। রেমোও খুব ভাল। বিশেষত অ্যাকশন দৃশ্যগুলো খুব ভাল করেছে। তিনজনকে সিলেক্ট করতে আমায় খুব বেগ পেতে হয়নি। আর আমার মনে হয়েছিল, মানুষের মনে তিন বিপ্লবীর যে ছবি গাঁথা আছে, তার সঙ্গে এই তিনজনের অনেকটাই সাদৃশ্য পাওয়া যাচ্ছে। বাকি শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, শঙ্কর দেবনাথ, খরাজ মুখার্জি এঁদের কথা নতুন করে বলার মানে হয় না। আরও একজনের কথা বলতেই হয় সে গুলশনারা খাতুন। আসলে আলাদা করে নাম করছি বলে শুধু এঁরা নন, প্রত্যেকে তাঁদের সেরাটা দিয়ে চরিত্রগুলো করেছেন। কোথাও কোনও খামতি এরপরেও থেকে গেলে তা আমার ওদের নয়।

কিন্তু একে পিরিয়ড পিস, তার ওপর সেই অর্থে স্টার কাস্ট নেই, আজকাল তো ইতিহাস-নির্ভর ছবি হলেও চেহারায় মিল থাকুক বা না থাকুক স্টার কাস্ট করাটা দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে, ছবির প্রমোশনের কথা ভেবে ভয় হয়নি?

অরুণ : দেখুন এই ভয় সবার প্রথমে যদি কারও হওয়ার কথা তা প্রোডিউসারের। কিন্তু অনেক বিগ শট প্রযোজকের চেয়ে কান জি’র সেই বুকের পাটা আছে কারণ ছবি যদি শুধু ব্যবসার কথা ভেবেই বানানো হয় তাহলে শিল্প, ইতিহাস তার প্রাপ্য মর্যাদা পায় না। আজকাল ইতিহাস বিকৃত করে ছবি তো কম বানানো হচ্ছে না! বাকি আমার কথা বলি, এই যে বছরে আমি চারটে-পাঁচটা করে ছবি বানাতে পাই না তার কারণ ছবি শুরুর প্রথম শর্তই দিই, কাস্টিং নিয়ে আমি কারও সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করব না। এটা বেশিরভাগ প্রোডিউসারই মানতে চান না। যাঁরা মানেন না, তিনি যত বড় প্রযোজকই হন আমি তাঁদের সঙ্গে ছবি করি না। ছবি ভাল হলে মানুষ ছবি দেখবেনই এ-বিশ্বাস আমার আছে।

Latest article