মাঝে দু-একদিন ঝরঝর ঝিমঝিম ঝরেছে। তবে সেটা যথেষ্ট নয়। এখনও মূল বর্ষার দেখা নেই। প্রচণ্ড দাবদাহের মধ্যে বাক্স প্যাঁটরা নিয়ে বাইরে বেরোনোর ঝুঁকি নিতে চাইছেন না অনেকেই। তাঁরা তাকিয়ে আকাশপানে। অপেক্ষায়, কবে আসবে কাঙ্ক্ষিত বর্ষা। বৃষ্টির মরশুমে বহু মানুষ বেড়াতে পছন্দ করেন। কেউ যান সমুদ্রে, কেউ জঙ্গলে, কেউ পাহাড়ে। দিন গুনছেন তাঁরা। কোথায় যাওয়া যায়, এখন থেকেই চলছে আলাপ-আলোচনা। ছোট্ট পরামর্শ, পাহাড় পছন্দের তালিকায় থাকলে বৃষ্টির মরশুমে ঘুরে আসতে পারেন ‘পারেন’ (Paren – Dooars) থেকে। অবশ্যই সপরিবারে।
সদা চঞ্চলা জলঢাকার ধারে অরণ্য পাহাড় ঘেরা এক নিরিবিলি গ্রাম পারেন। সবুজে মোড়া। উঁচুনিচু পাহাড়ের কোলে শান্ত এক জনপদ। উত্তরবঙ্গের নির্জন ডুয়ার্সের পশ্চিম অংশে অবস্থিত প্রকৃতির আশীর্বাদপ্রাপ্ত এই গ্রামটি। ভারতবর্ষের একেবারে শেষপ্রান্তে। এর পাশেই রয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভুটান। এখান থেকে চোখে পড়ে গগনচুম্বী ভুটান পাহাড়। পারেন গ্রামের চারপাশে আছে হিমালয়ের অরণ্য, হিমালয়ের পাহাড়ি পথ, রংবেরঙের ফুল আর বিস্তৃত তৃণভূমি। দেয় চোখের আরাম।
শিলিগুড়ি থেকে পারেনের দূরত্ব প্রায় ১২২ কিলোমিটার। এই জনপদে পায়ে হেঁটে ঘুরতে দারুণ লাগে। অনেকেই ট্রেকিং করেন। পারেন থেকে রাচেলা পাসের দিকে ট্রেকটি একটি আদর্শ ট্রেক, যেখানে পর্যটকরা নেওড়া ভ্যালি ফরেস্ট এবং বাংলা, সিকিম এবং ভুটানের সীমান্ত অঞ্চলের ট্রেকিংয়ের অ্যাডভেঞ্চার উপভোগ করতে পারেন। ট্রেকিং ছাড়াও, এই পথে পারেনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মনপ্রাণ ভরে উপভোগ করা যায়। জঙ্গলের মধ্য দিয়ে পায়ে হেঁটে যাওয়া যায় ডালগাঁও, গাইরিবাস এবং রঙ্গর দিকে। সবুজ বনাঞ্চলে ঘুরতে ঘুরতে চোখে পড়বে গৈরিবাস, রঙ্গর ভেষজ গাছের অরণ্য। এছাড়াও দেখতে পাওয়া যায় প্রচুর এলাচ গাছ। জঙ্গলে উড়ে বেড়ায় নানারকমের পাখি এবং প্রজাপতি। জলঢাকা নদীর তীরটিও বেশ মায়াবী, নিরিবিলি। তার ধারে ধীর পায়ে হেঁটে বেড়ানো যায়। বসে থেকে শোনা যায় জলের শব্দ। বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ সময় কাটালে মন ভাল হয়ে যাবে।
পারেন (Paren – Dooars) বেড়ানো যায় বছরের যে কোনও সময়েই। বর্ষায় গেলে শোনা যাবে বৃষ্টির জলতরঙ্গ। প্রকৃতি আরও সবুজ হয়ে ওঠে। সেজে ওঠে অন্যরকম সাজে। রাস্তাঘাট একটু কর্দমাক্ত হতে পারে। ওইটুকু মানিয়ে নিতে পারলে সফর আনন্দময় হয়ে উঠবে।
আরও পড়ুন- বাংলাদেশ: বৃষ্টি আর ধসে বিপন্ন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মৃত্যু
পারেনের আশেপাশে আছে বেশকিছু বেড়ানোর জায়গা। ঘুরে আসা যায় ঝালং থেকে। এটা জলঢাকা নদীর পাশে তুলনামূলকভাবে বড় জনপদ। জলঢাকা উপত্যকায় প্রবেশের পর প্রথম বড় গ্রাম। প্রচুর দোকান এবং ছোট-বাজেটের হোটেল রয়েছে। পারেন থেকে গাড়ি ভাড়া করে ঘুরে আসা যায় বিন্দু। এখানে জলঢাকার উপর একটি খুব পুরানো বাঁধ রয়েছে। এই বাঁধটি বিন্দু ড্যাম নামে পরিচিত এবং এটি স্বাধীন ভারতে নির্মিত প্রথম বাঁধ। এ ছাড়াও আছে বিন্দু হাইডেল পাওয়ার স্টেশন। সময় বেঁধে চললে সবকিছু ঘুরে দেখা যায়। আরওটোডে এবং টাংটা কাছাকাছি দুটি ছোট গ্রাম। নেওড়া ভ্যালি ন্যাশনাল পার্ক এলাকায় বিন্দুর সামনে অবস্থিত। এলাচ উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। গ্রাম দুটি ধীরে ধীরে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠছে। তৈরি হচ্ছে থাকার জায়গা।
এ ছাড়াও ঘুরে দেখা যায় আশেপাশের অন্যান্য জনপদ। পারেনের কাছেই গোদাক নামে এক ছবির মতো সুন্দর গ্রাম আছে। সেখানেও সময় কাটিয়ে আসা যায়। বলে রাখা ভাল, গরুমারা এখান থেকে খুব দূরে নয়। হাতে সময় নিয়ে ঘুরে আসা যায়। গরুমারার ঘন সবুজ জঙ্গলের মধ্যে রয়েছে অজস্র বন্য জীবজন্তু এবং কিছু হিংস্র প্রাণী। হাতি, গন্ডার, বাইসন প্রভৃতি এখানে অবাধ বিচরণ করে। নানারকম গাছপালা, পাখি, প্রজাপতি দেখতে পাওয়া যায়। চাঁদনি রাতে বন বাংলোয় রাত কাটানো এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। আছে আরও কিছু বেড়ানোর জায়গা। সবমিলিয়ে বৃষ্টির মরশুমে পারেন (Paren – Dooars) ভ্রমণ মনের মধ্যে আনন্দের ঢেউ তুলবে।
কীভাবে যাবেন?
আকাশপথে যেতে চাইলে নামতে হবে বাগডোগরা বিমানবন্দরে। সেখান থেকে পারেনের দূরত্ব আনুমানিক ১১৫ কিলোমিটার। ক্যাব পেয়ে যাবেন। বিমানবন্দর থেকে পারেন পৌঁছতে ঘণ্টা চারেক সময় লাগে। নিকটতম রেলস্টেশন হল নিউ জলপাইগুড়ি জংশন। ওদলাবাড়ি, মালবাজার কিংবা চালসা থেকেও পারেন পৌঁছোনো যায়। লাটাগুড়ি হয়ে গেলে তিন ঘণ্টার মতো সময় লাগবে। চাইলে শিলিগুড়ি থেকে সরাসরি ক্যাবে করেও পারেন পৌঁছতে পারেন।
কোথায় থাকবেন?
পারেনে আছে সরকারি রিসর্ট। ওয়েস্ট বেঙ্গল ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট কর্পোরেশন-এর। পারেন নেচার রিসর্ট— থাকার জন্য একটি অসাধারণ অপশন। প্রকৃতির কোলে অবস্থিত এই রিসর্টে আছে ৪টি কটেজ। রিসর্টের ঠিক পাশেই পাবেন প্রবাহিত জলের স্রোতের শব্দ। রাতে থাকার মজাই আলাদা। তবে সরকারি রিসর্টেও থাকতে গেলে আগে থেকে বুক করতে হবে। এছাড়াও পারেনে আছে কয়েকটি হোমস্টে। থাকা-খাওয়া নিয়ে দৈনিক জনপিছু খরচ মোটামুটি ১২০০-১৫০০ টাকা। হোমস্টেগুলোতে রুম সার্ভিস, অ্যাটাচ ওয়েস্টার্ন বাথরুম, গিজার, প্রশস্ত রুম ইত্যাদি প্রাথমিক সুবিধা পাওয়া যায়।