প্রতিবেদন : সহানুভূতির নামে এ-যেন একেবারে ঘুরপথে কার্যত তোলা আদায় করা হয়েছে। কর্মপ্রার্থীদের কাছ থেকে আইনি সহায়তার নাম করে একশ্রেণির আইনজীবী কার্যত লুঠ চালিয়েছে। অসহায় দিশেহারা কর্মপ্রার্থীরা এই লুঠেরাদের খপ্পরে পড়ে নিজেদের ভবিষ্যৎকে আরও গভীর খাদে ঠেলে দিয়েছেন। নির্বাচনের আগেই এই ধরনের অভিযোগ উঠেছিল। এবার আরও সরাসরি তথ্যপ্রমাণ সহযোগে সামনে এল এই লুঠতরাজের দিনলিপি। বৃহস্পতিবার তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে একটি হোয়াসঅ্যাপ গ্রুপের চ্যাট সামনে আনা হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে ‘২০১৪ বঞ্চিত টেট পাশ হাওড়া’ এই গ্রুপে একের পর এক কর্মপ্রার্থী অভিযোগ করছেন একশ্রেণির আইনজীবী আইনি সহয়তার নাম করে তাঁদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। কেউ দিয়েছেন ৪০ হাজার, কেউ দিয়েছেন ২৫ হাজার টাকা। যথারীতি টাকা দিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি। এই বিস্ফোরক তথ্য সামনে আসতেই হইচই পড়ে গিয়েছে চারদিকে। এই কেলেঙ্কারির পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চায় তৃণমূল কংগ্রেস। দলের স্পষ্ট বক্তব্য, বাংলায় যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল সরকার যোগ্যদের চাকরি দেওয়ার চেষ্টা করছে, তখন বিরোধী দলের তরফে একাধিক মামলা করে এতে জটিলতা সৃষ্টির কাজ করা হচ্ছে। এর আগে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছিল, মামলা করে জটিলতা তৈরির জন্য টাকা নেওয়া হচ্ছে। সরকার চাইছে চাকরি দিতে আর এরা মামলা করে তাতে বাধা দিচ্ছে। এই বাধা দেওয়ার খেলায় পরীক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করে প্রতিপক্ষের আইনজীবীদের একাংশ বিপুল পরিমাণ ‘আন-অ্যাকাউন্টেড মানি’ কালেক্ট করছেন। হাওড়ার ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এক আইনজীবীর নাম করে বলা হয়েছে, তার কাছে গেলে, সে বলেছে ২৫ হাজার টাকা দাও হয়ে যাবে। গ্রুপের আর একজন বলছে, আমার কাছ থেকে ৪০ হাজার নিয়েছিল, পুরোটাই জলে গিয়েছে। প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ বৃহস্পতিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় এই কেলেঙ্কারির ঘটনা সামনে এনেছেন সমস্ত তথ্যপ্রমাণ সহকারে। এদিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কুণাল বলেন, চ্যাটে একজনের নাম রয়েছে ফিরদৌস। এই নামে অনেকেই হতে পারেন। কিন্তু গ্রুপে বলছে, ফিরদৌসের কাছে গিয়েছিলাম, বলেছে ২৫ হাজার টাকা দাও হয়ে যাবে। কে এই ফিরদৌস? এখানে নির্দিষ্ট কোনও পরিচয় দেওয়া নেই। কিন্তু এই নিয়ে আমরা তদন্ত চাইছি। এই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ এবং আগের সব অভিযোগ— তার থেকে প্রমাণিত হচ্ছে, চাকরি প্রার্থী বিভ্রান্ত করে আইনজীবীদের একাংশ বিপুল টাকা তুলছে। এটা আর-একটা মামলা কেলেঙ্কারি। কারণ এগুলি চাকরি ঠেকাতে করা হয়েছে, জটিলতা তৈরি করতে করা হয়েছে। তাঁর সংযোজন সিবিআই নাকি এই নিয়ে তদন্ত করছে, কিন্তু এগুলোও তো তদন্তের আওতায় আসতে হবে। শুধু যদি হাওড়ার গ্রুপেই এই হয়, তাহলে বাকি চারপাশে কী হয়েছে? বিরাট কেলেঙ্কারি। টাকা নিয়ে এক একজনের চালচলন বদলে গিয়েছে। এর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চাই, কে এই ফিরদৌস? কোন কোন আইনজীবী টাকা তুলেছেন? যে অনিয়ম করেছেন, যে দুর্নীতি করেছেন, তাঁদের যা যা শাস্তি হবে হোক। কিন্তু তাঁদের ভাগিয়ে উল্টোদিক থেকে যাঁরা টাকা তুলেছেন তাঁদেরও তদন্তের আওতায় আনতে হবে। এটাও তো আন-অ্যাকাউন্টেড মানি, ইডি কেন এটা দেখবে না?
শুধুমাত্র রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে একশ্রেণির নেতা ও আইনজীবী চাকরিপ্রার্থীদের ধরনামঞ্চে গিয়ে তাদের উসকেছেন। আবার তাদের যখন চাকরির ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার এরাই কোর্টে মামলা করে তা আটকে দিয়েছে। শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থে এই দুমোখোর দল চেয়েছে ধরনামঞ্চ থাকুক। চাকরিপ্রার্থীরা হাহাকার করে যাক। এতে ক্যামেরার সামনে ফুটেজ খেতে সুবিধা হবে এই রাজনীতির কারবারিদের। কিন্তু এ-জিনিস যে বেশিদিন চলতে পারে না এবার তা হাড়ে মজ্জায় টের পাচ্ছে এই দু’মুখরা।
আরও পড়ুন- কথা রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী, শুরু হল জেনকিন্স স্কুলের সংস্কারের কাজ