প্রতিবেদন : ১ জুলাই থেকে গোটা দেশে নতুন তিন ফৌজদারি আইন কার্যকর করতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। লোকসভা ভোটের আগে বিরোধীশূন্য সংসদের দুই কক্ষে একতরফাভাবে পাশ করা হয়েছে ওই তিন বিল। বিরোধীদের লাগাতার আপত্তি অগ্রাহ্য করে তা আইনে পরিণত হয়েছে। সেই আইন দেশে কার্যকর হওয়ার আগে নৈতিকতা এবং বাস্তবতার মাটিতে দাঁড়িয়ে আইন তিনটি পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি দিয়ে ভারতীয় দণ্ডসংহিতা-সহ সংশ্লিষ্ট তিনটি আইন এখনই কার্যকর না করার দাবি জানিয়েছেন তিনি। এই তিন আইন নিয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনার দাবিও জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রধানমন্ত্রীকে তিনি লিখেছেন, সংসদের আগামী অধিবেশনে তিনটি আইন নিয়ে বিশদে আলোচনা করা হোক। সেজন্য আইন রূপায়ণের পূর্ব-নির্ধারিত সূচিও পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন নেত্রী। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, নতুন তিন আইন আমজনতার স্বার্থের পরিপন্থী। তিনি মনে করেন, যেভাবে গায়ের জোরে এই তিন আইন পাশ করানো হয়েছে তা গণতন্ত্রের পক্ষে কালো দিন হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
আরও পড়ুন-ট্রলার ডুবি বঙ্গোপসাগরে, উদ্ধার ১৮ জন মৎস্যজীবী
গত বছর ১১ অগাস্ট সংসদের বাদল অধিবেশনের শেষ দিনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ লোকসভায় নতুন তিন ফৌজদারি বিল পেশ করেন। ব্রিটিশ যুগের ‘ইন্ডিয়ান পেনাল কোড’ বদলের নাম করে যে আইন আনা হয়েছে তাতে দমনপীড়ন আরও বাড়বে। ভারতীয় দণ্ডবিধি, অপরাধ আইন এবং সাক্ষ্য আইন পরিবর্তন করে আনা হয়েছে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা ও ভারতীয় সাক্ষ অধিনিয়ম। ১৮৯৮ সালের ‘ক্রিমিনাল প্রসিডিওর অ্যাক্ট’ বাতিল করতে ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা নামের নতুন আইন আনা হয়। একইসঙ্গে ১৮৭২ সালের ‘ইন্ডিয়ান এভিডেন্স অ্যাক্ট’ বা সাক্ষ্য আইনের পরিবর্তে নতুন সাক্ষ্য বিল পেশ করা হয়। তার পরেই বিল তিনটি সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ওই তিন বিলের খসড়া প্রকাশ্যে আসার পরেই প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী (Mamata Banerjee)।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেও নিজের আপত্তির কথা জানিয়ে একাধিক চিঠি দেন মুখ্যমন্ত্রী। অন্যান্য বিরোধী দল এবং গণসংগঠনও আপত্তি তোলে। তা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে শতাধিক বিরোধী সাংসদকে বহিষ্কার করে প্রায় বিরোধীশূন্য সংসদের দুই কক্ষে কোনও আলোচনা ছাড়াই ধ্বনিভোটে মোদি সরকার গায়ের জোরে পাশ করিয়ে নেয় তিনটি বিল। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু তাতে অনুমোদন দিয়ে সই করেন। এর পর সেই তিন আইন— ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা এবং ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম ১ জুলাই থেকে কার্যকরের সরকারি বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়। এদিন, প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে সেকথা স্মরণ করিয়ে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, গত ডিসেম্বরে সংসদের দুই কক্ষের ১৪৬ জন সাংসদকে বহিষ্কারের পর যে স্বৈরাচারী পদ্ধতিতে ওই তিনটি বিল পাশ করানো হয়েছিল, তা ভারতীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে একটি কালো দাগ। এখন তা পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, বিদায়ী লোকসভায় যেভাবে কোনও আলোচনা ছাড়াই দ্রুত বিল তিনটি পাশ করানো হয়েছিল, তা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং মূল্যবোধের পরিপন্থী। স্বচ্ছতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতার কথা ভেবে নবনির্বাচিত লোকসভার সদস্যদের তাঁদের আমলে কার্যকর হওয়া আইন নিয়ে বিতর্কে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত। এ-প্রসঙ্গে তাঁর আরও অভিযোগ, কেন্দ্রীয় আইন এবং বিচার মন্ত্রক নতুন আইন কার্যকর করার জন্য গত ১৬ জুন কলকাতায় যে কর্মশালার আয়োজন করেছিল রাজ্য সরকারকে সে সম্পর্কেও সম্পূর্ণ অন্ধকারে রাখা হয়েছিল। যা একেবারেই অনৈতিক।