প্রতিবেদন : তৃতীয়বার মসনদে বসার পর থেকে শিক্ষাক্ষেত্রে একের পর এক বেনজির দুর্নীতিতে নাজেহাল মোদি সরকার। ডাক্তারিতে ভর্তি থেকে শুরু করে অধ্যাপক নিয়োগের সর্বভারতীয় গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাগুলি দুর্নীতির দায়ে কলঙ্কিত। পরীক্ষা বাতিলের চিত্রনাট্য শনিবারও অব্যাহত। শুক্রবার ইউজিসি সিএসআইআর-নেট পরীক্ষা বাতিলের পর শনিবার বাতিল করা হল নিট-পিজি। ডাক্তারি পাঠক্রমের স্নাতকোত্তরের পরীক্ষা হল এই নিট-পিজি। রবিবারই হওয়ার কথা ছিল এই পরীক্ষা। তার মাত্র কয়েকটা ঘণ্টা আগে শনিবার রাতে ঘোষণা করা হল পরীক্ষা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের আশঙ্কা, এই পরীক্ষাতেও বড়সড় দুর্নীতি হতে পারে। তাই আগেভাগে মুখরক্ষার খাতিরে পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত। এর ফলে অনিশ্চয়তায় পড়লেন প্রায় দেড়লক্ষ পরীক্ষার্থী। প্রশ্নফাঁস কেলেঙ্কারি ক্রমেই ফাঁসের মতো চেপে ধরছে কেন্দ্রকে।
আরও পড়ুন-প্রাক বাজেট বৈঠকে কেন্দ্রের বঞ্চনা নিয়ে চড়া সুরে প্রতিবাদ চন্দ্রিমার
শিক্ষাক্ষেত্রে এই নজিরবিহীন দুর্নীতি নিয়ে শুরু থেকেই পথে নেমেছে তৃণমূলের মতো বিজেপি-বিরোধী দলগুলি। বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে তৃণমূল। প্রতিবাদ-বিক্ষোভে উত্তাল গোটা দেশ। এসবের মধ্যেই নিজেদের পিঠ বাঁচাতে শনিবার এনটিএ-কর্তাকে বদলে ফেলল কেন্দ্র। সুবোধকুমার সিংকে সরিয়ে এনটিএ-র দায়িত্ব দেওয়া হল প্রদীপ খারোলাকে। সুবোধকুমার সিংকে কম্পালসারি ওয়েটিংয়ে পাঠানো হয়েছে। আসলে গোটা কেলেঙ্কারি জড়িয়ে আছে বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গিয়েছে। এই অবস্থায় আপাতত বলির পাঁঠা করা হল সুবোধকুমার সিংকে।
এবিষয়ে তৃণমূলের বক্তব্য, দেশের সব থেকে বড় শিক্ষা দূর্নীতি সামনে পড়ায় দেশ জুড়ে প্রতিবাদের আগুন জ্বলছে। সেই আগুনে জল ঢালতে এই ধরনের কিছু লোক দেখানো ঠুনকো পদক্ষেপ করা হচ্ছে। যাতে চিড়ে ভিজবে না। এভাবে এই মহাকেলেঙ্কারি ধামাচাপা দেওয়া যাবে না। দোষীদের খুঁজে বের করে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে, সঙ্গে মাথাদেরও জেলে ঢোকাতে হবে। শুক্রবার থেকে রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছে তৃণমূলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি। চাপের মুখে ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমে প্রশ্নফাঁস রুখতে নতুন আইন আনার ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। একই সঙ্গে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করার কথা জানিয়েছে শিক্ষামন্ত্রক। এই কমিটি এনটিএ-র কার্যক্রম এবং কাজের পদ্ধতি খতিয়ে দেখবে। এরই মধ্যে শুক্রবার আচমকাই স্থগিত করে দেওয়া হল ‘জয়েন্ট সিএসআইআর ইউজিসি-নেট জুন ২০২৪’ পরীক্ষা। পরীক্ষা স্থগিতের কোনও কারণ জানায়নি এনটিএ। যা নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক।
আরও পড়ুন-প্রোটেম স্পিকারের সহায়ক হবেন না সুদীপ
প্রথমে নিট দুর্নীতির পর্দাফাঁস। তারপর প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে বাতিল করা হয় সর্বভারতীয় নেট পরীক্ষা। দুটি পরীক্ষাতেই টাকার বিনিময়ে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। দেশের লক্ষ লক্ষ মেধাবী পড়ুয়ার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে মোদি সরকার। এই অভিযোগ তুলে দেশ জুডে় শুরু হয়েছে বিরোধীদের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ। শনিবারও তা জারি আছে। চাপের মুখে ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমে এদিন কেন্দ্রীয় সরকার প্রশ্নফাঁস রুখতে নতুন আইন জারি করার কথা ঘোষণা করেছে। এর পাশাপাশি একটি কমিটিও গঠন করল শিক্ষামন্ত্রক। ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সির যাবতীয় কার্যক্রম এবং কাজের পদ্ধতি খতিয়ে দেখবে এই কমিটি। নিট, নেট-সহ যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় স্বচ্ছতা আনতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবে কমিটির সদস্যরা।
শনিবার নেট-নিট দুর্নীতি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছে তৃণমূল। তৃণমূলের সাফ কথা, গোটা ঘটনায় কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন এজেন্সিগুলি জড়িত। সেখানে সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় এজেন্সি দিয়ে কীভাবে নিরপেক্ষ তদন্ত সম্ভব? তাই কেন্দ্রীয় এজেন্সি নয়, বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে তাঁরা। সুপ্রিম কোর্টের কোনও বিচারপতির নেতৃত্বে এই তদন্ত করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলির কর্তাদের হেফাজতে নিয়ে তদন্ত চালাতে হবে। নাহলে তথ্যপ্রমাণ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। সিবিআইকে দিয়ে কোনও ভাবে তদন্ত ধামাচাপা দেওয়া চলবে না।
আরও পড়ুন-হলং ঘুরে বৈঠক বনমন্ত্রীর, জমা পড়ল প্রাথমিক রিপোর্ট
শনিবার গ্রেটার নয়ডা থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসকাণ্ডে মূল পান্ডা রবি আত্রিকে গ্রেপ্তার করেছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। এ-ছাড়াও ঝাড়খণ্ড থেকে এই কাণ্ডের মূল সন্দেহভাজন সিকান্দার যাদবেন্দ্র-সহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নিটের প্রশ্নপত্র ফাঁস-কাণ্ডে আগেই ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। শুক্রবার দেওঘর থেকে সিকান্দার এবং আরও ৪ জনকে গ্রেফতার করে বিহার পুলিশ। নিট কেলেঙ্কারিতে এই নিয়ে গ্রেফতারির সংখ্যা বেড়ে হল ১৮।
নিট ও নেট দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুক্রবার থেকেই পথে নেমেছে তৃণমূলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি। শুক্রবার সকাল থেকে দিনভর রাজ্যের প্রায় সব কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পড়ুয়ারা ব্যানার, ফেস্টুন হাতে প্রতিবাদ-বিক্ষোভে শামিল হন। শুক্রবারের পর শনিবারও টিএমসিপির প্রতিবাদ-কর্মসূচি জারি আছে। এদিন দুপুরে কলকাতার সুরেন্দ্রনাথ কলেজ, জয়পুরিয়া কলেজ, আশুতোষ কলেজের মতো আরও কয়েকটি কলেজের সামনে বিক্ষোভ দেখায় সংগঠনের কর্মী-সমর্থকেরা। গোপীবল্লভপুর ও সাঁকরাইল ব্লক তৃণমূল ছাত্র পরিষদের তরফেও এদিন প্রতিবাদ-বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়। বিক্ষোভ থেকে মেডিক্যাল এন্ট্রান্স রাজ্যের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি তোলে টিএমসিপি। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ ও ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি বা এনটিএ-র ডিরেক্টরের পদত্যাগেরও দাবি উঠে। সবমিলিয়ে শিক্ষাক্ষেত্রের এই পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতি নিয়ে মোদি সরকারের ওপর চাপ ক্রমেই বাড়ছে।