লোকটা কি সজ্ঞানে, জেনে-বুঝে এসব করে? নাকি অবিবেচকের মতো মশকরা করতে ওঁর ভাল লাগে, তাই এসব করে? নাকি ওঁর নিয়োগকর্তা দিল্লির বড়বাবুদের শেখানো পাঠ কিছুতেই ভুলতে পারছেন না এই আজব আদমি, সেজন্যই এসব অপকর্ম?
বিশ্বাস করুন, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালকে নিয়ে এই প্রশ্নগুলোই পুচ্ছ তুলে ঘুরপাক খাচ্ছে চারিদিকে।
রাজ্যপালের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ। এমন ঐতিহ্য এই বঙ্গে কস্মিনকালেও ছিল না। এখন এসেছে, এই রাজ্যপালের সৌজন্যে। নোংরা চরিত্রের একটা অসভ্য লোক, এই ভাষায় যদি কেউ তাঁকে চিহ্নিত করে, তবে সেই ব্যক্তিকে দোষ দেওয়া চলে না। কারণ, আনন্দবাবু নিজেই।
আরও পড়ুন-প্রশ্ন ফাঁস কেলেঙ্কারির তদন্তে গিয়ে বিজেপি শাসিত বিহারেই আক্রান্ত হল সিবিআই টিম
ঘটনাটি ২০২৩ সালের। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে এক নৃত্যশিল্পী অভিযোগ করেন, গত বছর জুন মাসে অনুষ্ঠানের কথা বলে তাঁকে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হয়। একটি পাঁচতারা হোটেলে তাঁকে রাখা হয়েছিল। আর সেখানেই রাজ্যপালের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলেছেন তিনি। সেসময়ই পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। কলকাতা পুলিশ তদন্ত রিপোর্ট নবান্নে পাঠিয়েছে। ফলে বিষয়টি সামনে আসে। তারপরেও লজ্জা নেই ওই বেহায়া লোকটার, বলছিল আমাদের বাড়ির কাজের মাসি। তাঁকে দোষ দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ, এই ধরনের অপকীর্তি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।
কয়েক দিন আগেই রাজ্যপালের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলেছিলেন রাজভবনেরই এক অস্থায়ী মহিলা কর্মী। হেয়ার স্ট্রিট থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। লোকসভা নির্বাচন চলাকালীন বাংলায় এই ঘটনায় শোরগোল পড়ে যায়। বোসের বিরুদ্ধে সরব হন নারীর সম্ভ্রমরক্ষার মূল্যবোধে যাঁদের আস্থা তাঁরা সবাই। এ-নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীও। রাজভবনের ৬ জন কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠানো হয় লালবাজারে। তাও কীচক নির্বিকার।
হ্যাঁ, উনি সিভি আনন্দ বোস নন, উনি কীচক। নামে না হলেও কাজে তো বটেই। ভীমের পেটানি না খেলে উনি শোধরাবেন না। বলছিলেন আমাদের চেনা মহাভারত-বিশেষজ্ঞ সিঙ্গী জেঠু। রান্নাঘরে দ্রৌপদীকে ডেকে আনাই তো কীচকদের স্বভাব। সংবিধান এই লোকটাকে ‘রক্ষাকবচ’ দিয়েছে। তাই এই মুহূর্তে তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রুজু করার কোনও আইনি পথ খোলা নেই কলকাতা পুলিশের কাছে। ফলে অভিযোগকারী মহিলা হেয়ার স্ট্রিট থানার দ্বারস্থ হওয়ার পরেও এখনও ওই ঘটনায় এফআইআর দায়ের হয়নি। তবে তদন্ত শুরু না হলেও ঘটনার অনুসন্ধান চালিয়ে যেতে কোনও বাধা নেই পুলিশের। আপাতত সে পথেই এগোচ্ছে কলকাতা পুলিশের বিশেষ অনুসন্ধান দল।
আরও পড়ুন-কাতারের মুন টাওয়ার এবার হুগলির জিরাটে
এক্ষেত্রে বলা দরকার, যাঁর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে, তিনি সংবিধানের ৩৬১ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুসারে সুরক্ষিত। যেখানে বলা হয়েছে, সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে ফৌজদারি বা দেওয়ানি কোনও মামলাই করতে পারবে না পুলিশ। তবে, যখন তিনি ওই পদে থাকবেন না, তখন তাঁকে আর রক্ষাকবচ দেবে না সংবিধান। সে কারণেই পুলিশ ঘটনার অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে। অভিজ্ঞ আইনজ্ঞদের বক্তব্য, ‘পুলিশ এক্ষেত্রে তাদের রিপোর্ট রাজ্য স্বরাষ্ট্র দপ্তরে জমা দিতে পারে।’ কলকাতা পুলিশের ডিসি (সেন্ট্রাল) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি স্পেশাল এনকোয়ারি টিম গঠন করেছে লালবাজার। সেই দলের তরফে রাজভবনের তিনজন এবং কলকাতা পুলিশের এক অফিসারকে ডাকা হয়। একই সঙ্গে রাজভবনের কাছে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজও চাওয়া হয়। সূত্রের খবর, রাজভবনের তিনজন পুলিশের ডাকে সাড়া দেননি।
আনন্দ কীচক বোস ঘটা করে সিসিটিভির ফুটেজ জনগণকে দেখানোর কথা বলেন। কিন্তু বাস্তব অন্য কথা বলছে। সিসিটিভি ফুটেজ পুলিশ আর মুখ্যমন্ত্রী ছাড়া আর সবাইকে দেখানোর পর অভিযোগকারিণী বলেন, ‘রাজ্যপাল মহাশয় নিজে এ রকম একটা কুরুচিকর কাজ করলেন! এখন আবার নিজের দোষ ঢাকতে হাস্যকর নাটক মঞ্চস্থ করলেন। সেটা করতে গিয়ে উনি আমার অনুমতি ছাড়া আমার ফুটেজ প্রকাশ্যে আনলেন। আমি জানতাম ভারতীয় আইন অনুযায়ী, অভিযোগকারিণীর পরিচয় গোপন রাখা উচিত। উনি প্রথম থেকেই এই তদন্তে অসহযোগিতা করছেন। এর আগেও উনি অপরাধ করেছেন। এখন আবার আমার অনুমতি ছাড়া ফুটেজ ভাইরাল করে নতুন করে অপরাধ করলেন। আমি এ নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব।’
আরও পড়ুন-নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে ময়দানে নেমে পড়েছেন মুকুটমণি
যে সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করা হয়েছ, তাতে শুধুমাত্র অভিযোগকারিণীর গতিবিধিই চোখে পড়েছে। দুটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজই সামনে আনা হয়েছে। একটি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, হন্তদন্ত হয়ে ওই তরুণী প্রথমে রাজভবনের ওসি-র ঘরে যাচ্ছেন, সেখান থেকে বেরিয়ে পের আবার অ্যাডিশনাল ওসি-র ঘরে ঢুকছেন। তবে যে কনফারেন্স রুমে শ্লীলতাহানি করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছিলেন ওই তরুণী, সেখানকার ফুটেজ দেখা যায়নি এদিন। করিডরের ফুটেজও দেখানো হয়নি। হেয়ার স্ট্রিট থানার পুলিশের রাজভবনে ঢোকার দৃশ্যও চোখে পড়েনি সিসিটিভি ফুটেজে। তবে অভিযোগকারিণী যে অভিযোগ করেছেন, যে দুদিন তাঁর শ্লীলতাহানি করেছেন রাজ্যপাল, রাজভবনের যে ঘরে তাঁকে ডাকা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন, সেখানকার কোনও সিসিটিভি ফুটেজ সামনে আনেননি রাজভবন। সেখানে আদৌ কোনও সিসিটিভি রয়েছে কি না, তাও জানা যায়নি এখনও পর্যন্ত। দুদিন যে নির্দিষ্ট সময়ে শ্লীলতাহানি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ওই তরুণী, সেই সময়কার কোনও ফুটেজও সামনে আসেনি।
এই অসভ্য বদমায়েশ ব্যক্তি এখন বিধানসভার গরিমা ও মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করার খেলায় নেমেছে। ২৬ জুন বেলা ১২টার সময় বরানগর এবং ভগবানগোলার উপনির্বাচনে জয়ী বিধায়কদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান পর্ব স্থির করেছিল রাজভবন। কিন্তু দুই বিধায়ক রাজভবনে গিয়ে শপথ নিচ্ছেন না। কারণ, বিধানসভাকে স্রেফ এড়িয়ে গিয়ে এই অনুষ্ঠানসূচি স্থির করা হয়েছে। আর তাই রাজভবনকে এই ইস্যুতে বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল। কে শপথবাক্য পাঠ করাবেন, তার উল্লেখ রাজভবনের চিঠিতে নেই। এটা অসম্মানজনক। সাধারণত মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথগ্রহণ হয় রাজভবনে। আর বিধায়কদের বিধানসভায়। কিন্তু এবার এই রীতির বাইরে যাচ্ছে রাজভবন। সবচেয়ে বড় কথা, এই প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণ এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে বিধানসভাকে। রাজ্যপাল নিজের পদকে কলুষিত করছেন।
সার্কাসের অক্ষম জোকার এই পদ্মপাল।