বার্বাডোজ, ২৮ জুন : স্যার গারফিল্ড সোবার্সের নিশ্চয়ই এখন হাত নিশপিশ করে। কখনও কুড়ির ক্রিকেট খেলেননি বলে। কুড়ি কেন, পঞ্চাশ ওভারেও স্যার গ্যারির খেলার সুযোগ হয়নি। তবু অদ্ভুত ভালবাসা আর আবেগ নিয়ে প্রায় অশক্ত শরীরে কেনসিংটন ওভালে আসেন। শনিবারও আসবেন। এটা তাঁর মাঠ। সবাই জানে বার্বাডোজ মানেই সোবার্স।
না, বোধহয় ভুল হল। রোহিতরা ব্রিজ টাউনে পা রাখার পর থেকে এই শহর এখন তাঁদের। প্রচুর প্রবাসী ভারতীয় টিম ইন্ডিয়ার সঙ্গে ঘুরছেন। ভারতীয় দল চার্টার্ড বিমানে এখানে পৌঁছনোর পর অনেকেই বিমানবন্দরে এসেছিলেন তাঁদের স্বাগত জানাতে। শুভেচ্ছা? না, তার থেকেও বেশি। টুর্নামেন্টে এখনও অপরাজিত ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকাও। তাই শনিবারের ক্ল্যাস অফ টাইটানসের আগে সমর্থকদের দাবি, আর অপেক্ষা করতে পারছি না। কাপ এবার চাই ।
আরও পড়ুন-কথা রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী, জেনকিন্স স্কুল, সংস্কারে পেল ২৯ লক্ষ আর্থিক অনুমোদন
বার্বাডোজ মানে একসময় ছিল হাড়হিম করা ফাস্ট বোলারদের স্বর্গ। সানি গাভাসকর টের পেয়েছেন। তখন নিচু কাঠের গ্যালারি। ক্রিকেট মানেই উপচে পড়ত রংচঙে জামাপরা মানুষজনের। ক্যালিপসোর সুরে ড্রাম বাজত সারাক্ষণ। লর্ড রিলেটর ক্যারিবিয়ান দ্বীপের খুব নামী কবি, সুরকার। ’৭১-এর একুশ বর্ষীয় গাভাসকরকে দেখে গান লিখেছিলেন, …লিটল মাস্টার….আমরা ওকে আউট করতে পারিনি…। অভিষেকে চার টেস্টে ৭৭৪ রান করা গাভাসকর কমেন্ট্রি টিমের সঙ্গেই আছেন। রোহিতরা আজকের মেগা ফাইনালের আগে সানি-বচনে উদ্বুদ্ধ হতেই পারেন।
ভারত আর দক্ষিণ আফ্রিকা দুটো দলই এক অদ্ভুত সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। ২০০৭-এ দক্ষিণ আফ্রিকায় যোগিন্দর সিংয়ের হাত ধরে প্রথম টি-২০ বিশ্বকাপ জয়ের পর থেকে আর ট্রফিতে হাত দেওয়া যায়নি। ২০১১-তে পঞ্চাশ ওভারের ট্রফি এসেছে। ২০১৩-তে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত। তারপর থেকে শুধুই শূন্যতা। মার্করামদের অবস্থা আরও খারাপ। কখনও তাঁরা আইসিসি টুর্নামেন্ট জেতেননি। এটাই প্রথম ফাইনাল। দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক ফাইনালের আগে বলেছেন, ইতিহাস গড়তে চান। একই কথা রোহিতও বলবেন।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
ইংল্যান্ডকে ৬৮ রানে উড়িয়ে ফাইনালে এসেছে ভারত। জস বাটলার বলেছেন, বুমরাদের সামনে তাঁরা স্রেফ উড়ে গিয়েছেন। একদম দাঁড়াতে পারেননি। এই ভারতীয় দল কিন্তু অপ্রতিরোধ্য গতিতেই ফাইনালে উঠে এসেছে। ব্যাটে রোহিত, সূর্য, হার্দিক। বোলিংয়ে বুমরা, অর্শদীপ, অক্ষর, কুলদীপ। কুলদীপকে ক্যারিবিয়ানে পা রাখার পর থেকে এগারোজনে আনা হয়েছে। এটা মাস্টার স্ট্রোক। এখানে সব উইকেটে বল টার্ন করছে। কুলদীপের মতো রিস্ট স্পিনাররা বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন। আদিল রশিদও যেমন ভারতের বিরুদ্ধে ভাল বল করেছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকাও বড় বড় দলকে হারিয়ে এই জায়গায় এসেছে। সেমিফাইনালে জেনসেন, রাবাডা, নরখিয়ারা একেবারে স্টিম রোলার চালিয়ে দিয়েছিলেন আফগান ম্যাচে। ত্রিনিদাদের সেই অ্যাডভান্টেজ অবশ্য এখানে তাঁরা পাবেন না। বার্বাডোজ ফাস্ট বোলারদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। বরং বাঁহাতি তাবরিজ সামসি শক্ত চ্যালেঞ্জ হতে পারেন। গোটা টুর্নামেন্টে তিনি ভাল বল করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার সমস্যা অবশ্য ব্যাটিং। মার্করাম ছন্দে নেই। ডি’কক, ক্লাসেনের ব্যাটে ধারাবাহিকতা নেই। বুমরার সামনে তাদের টপ অর্ডার আজ আরও একবার পরীক্ষার মুখে পড়বে।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
ফাইনালের আগে ভারতের একমাত্র চিন্তা বিরাট কোহলির ফর্ম। ইংল্যান্ড ম্যাচে যেভাবে উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে এসেছেন, সেটাও দুশ্চিন্তার কারণ। রোহিত বলেছেন যে কারও এমন হতে পারে। বিরাটের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। তিনি কেন, সবাই এটা বলবে। শুধু বাস্তব হল বিরাট রান না পাওয়ায় টপ অর্ডার ব্যাটিং জমছে না। মাঝখানে চাপ এসে যাচ্ছে। রোহিতের ফর্ম আজ বিরাট পেয়ে গেলে কেনসিংটন ওভালে আফ্রিকান সাফারি বন্ধ থাকবে।
এদিকে, বার্বাডোজে শনিবার ৭৫ শতাংশ বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। এই ম্যাচে রিজার্ভ ডে থাকলেও তাতেও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। রোহিতরা এদিন বার্বাডোডে পৌঁছে নিজেদের হোটেলবন্দি রেখেছিলেন। প্র্যাকটিসের কথা শোনা গেলেও কেউ কেনসিংটন ওভালে যাননি।