কলকাতা হাইকোর্টের বার লাইব্রেরির দ্বিশতবর্ষ উপলক্ষ্যে ন্যাশনাল জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমির একটি আলোচনাসভায় বিচার ব্যবস্থায় রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একমঞ্চে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। বাইপাসের ধারে একটি হোটেলের বলরুমে আয়োজিত জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমির আলোচনা চক্রে উপস্থিত ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমও। কলকাতা হাইকোর্টের ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরে তিনি জানান, বিচার ব্যবস্থা সচল রাখতে আদালত অবিরাম কাজ করে চলেছে। কোভিড কালেও এই কাজ থমকে যাইনি। পাশাপাশি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বক্তব্যের শুরুতেই ধন্যবাদ জানান সিজেআইকে (CJI Chandrachud)। তিনি বলেন, “দেশের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে একই মঞ্চে থাকতে পেরে আমি গর্বিত। বিচারপতি চন্দ্রচূড় খুবই জনপ্রিয়। তাঁর বাবাও দেশের বিচারব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতিদেরও ধন্যবাদ।”
এদিনের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আইন সংক্রান্ত নানা খুঁটিনাটি বিষয়ের কথা উল্লেখ করে রাজ্যের সহযোগিতার কথা জানান। বলেন, “বিচারব্যবস্থা আমাদের কাছে পবিত্র, মন্দির-মসজিদ-গির্জা-গুরুদ্বারের মতো। সরকার বিচারব্যবস্থার সঙ্গে আছে। যদি বিচারব্যবস্থা আমাদের সাহায্য না করে, তা হলে মানুষ কোথায় যাবে। যখন মানুষের জীবনে সমস্যা আসে, তখন মানুষের বিশ্বাস থাকে যে, দেশের বিচারব্যবস্থায় আমাদের রক্ষা করবে। বিচারপতি চন্দ্রচূড় দেশের বিচারব্যবস্থাকে উন্নত করতে সাহায্য করছেন। আমরা বিচারব্যবস্থাকে উন্নত করতে হাজার কোটি খরচ করেছি। ৭০ একর জমি দিয়েছি। রাজারহাটে নতুন হাই কোর্টের জায়গা দিয়েছি। ৮৮টি ফার্স্ট ট্র্যাক কোর্ট রয়েছে, যার মধ্যে ৫৫টি মহিলাদের জন্য। ৯৯টি মানবাধিকার কোর্ট রয়েছে।’’ মুখ্যমন্ত্রী জানান তিনি নিজেও আইনের লোক। তাঁর মতে, বিচারব্যবস্থায় কোনও রকম রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব কাম্য নয়। বিচারব্যবস্থার একদম বিশুদ্ধ এবং সৎ থাকা উচিত। গোপনীয়তা বজায় থাকা উচিত।
আরও পড়ুন- সংসদে নিট-বিতর্ক এড়াতে মরিয়া কেন্দ্র, প্রতিবাদে উত্তাল ঐক্যবদ্ধ ‘ইন্ডিয়া’
মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য পেশ করেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি। এদিন শুরু থেকেই তিনি সাংবিধানিক নৈতিকতা নিয়ে কথা বলেন। বিচারপতি চন্দ্রচূড় (CJI Chandrachud) জানান, একজন ভারতীয় যেমন চায় তেমন ভাবতে পারে, যা চায় তা বলতে পারে, যাকে চায় তাঁর পুজো করতে পারে, যাকে অনুসরণ করতে চায় করতে পারে, যা ইচ্ছে খেতে পারে এমনকি যাকে ইচ্ছে তাঁকেই বিয়ে করতে পারে। এটাই সাংবিধানিক নৈতিকতা। সিজেআই বলেন, “আমি মনে করি বিচারকরা মানুষের সেবক। বিচারকেরা বিচার করুন কিন্তু অন্যের সম্পর্কে আগেভাগে কোনও ধারণা তৈরি করে ফেলবেন না। সহানুভূতি রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের সামনে যাঁরা দাঁড়িয়ে থাকেন তাঁরা মানুষ।’’ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এদিন জানান ৫১ হাজারেরও বেশি রায় অন্য ভাষায় অনুবাদ করা হচ্ছে। বাংলা এবং ওড়িয়া-সহ সংবিধান যে ভাষাকেই স্বীকৃতি দেয় সেই সব ভাষায় অনুবাদ করা হয় রায়। শেষে বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেককে বৈচিত্র্যকে গ্রহণ করে সহনশীল হওয়ার পরামর্শ দেন ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়।