প্রতিবেদন: রাজ্যসভায় তৃণমূলের তীব্র আক্রমণের মুখে পড়ল নরেন্দ্র মোদির কেন্দ্র। সোমবার একের পর এক যুক্তি এবং তথ্য দিয়ে প্রবীণ তৃণমূল সাংসদ জহর সরকার (Jawhar Sircar) চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে কেন্দ্রের নিদারুণ ব্যর্থতা। অপরাধ সংক্রান্ত ৩টি নতুন আইন কেন্দ্র এদিন দেশজুড়ে লাগু করায় সোমবার ১ জুলাই দিনটিকে কালাদিবস হিসেবে অভিহিত করেন তিনি। বাংলার প্রতি বিজেপি এবং কেন্দ্রের প্রতিহিংসা, বঞ্চনা— প্রতিটি বিষয়ই উঠে এল তাঁর ভাষণে। একইসঙ্গে নারী ক্ষমতায়নের প্রশ্নে বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রশংসনীয় ভূমিকার কথাও বিশেষভাবে উল্লেখ করেন রাজ্যসভার সাংসদ জহর সরকার। রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপরে সংসদে তৃণমূলের সমালোচনার এদিন সূচনা করলেন জহর সরকারই। ১জুলাই দিনটিকে কেন কালাদিবস হিসেবে অভিহিত করলেন তৃণমূল সাংসদ? তাঁর যুক্তি, সংসদে ৩টি নতুন বিল আইনে পরিণত করার দিন অগণতান্ত্রিকভাবে সাসপেন্ড করা হয়েছিল ১৪৬ জন সাংসদকে। কার্যত বিরোধীশূন্য অধিবেশনেই লোকসভায় পাশ করানো হয়েছিল এই আইন। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হল নতুন আইনে গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই যে কাউকে গ্রেফতার এবং ৯০ দিন হেফাজতে রাখার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে পুলিশকে। এভাবেই সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে ক্ষমতা অপব্যবহারের। রাজনৈতিক কারণে অনশন, জমায়েত এবং প্রতিবাদেও নিষেধাজ্ঞা। ঘৃণাভাষণে কারাদণ্ডের কথা বলা থাকলেও মোদির মঙ্গলসূত্র এবং মুসলিম বিদ্বেষমূলক ভাষণ এর আওতায় আসবে কি? বাংলার প্রতি কেন্দ্রের বিমাতৃসুলভ এবং বিদ্বেষমূলক আচরণের তীব্র নিন্দা করেন প্রবীণ সাংসদ। জহরবাবুর (Jawhar Sircar) অভিযোগ, অর্থনৈতিক অবরোধ করে বাংলার প্রতি প্রতিহিংসা চরিতার্থ করছে কেন্দ্র। প্রশ্ন তুলেছেন, বাংলার প্রাপ্য ১.৭২ লক্ষ কোটি টাকা কেন্দ্র আটকে রেখেছে কোন অধিকারে? কোন যুক্তিতে আটকে রেখেছে ১০০ দিনের টাকা, আবাস যোজনার টাকা, স্বাস্থ্যক্ষেত্র-সহ বিভিন্ন খাতে বিভিন্ন খাতে পাওনা টাকা? আসলে বাংলার মানুষ বিজেপির সাম্প্রদায়িকতা, জাতপাতের রাজনীতি এবং মহিলাদের প্রতি দমননীতি কখনওই মেনে নিতে পারেন না বলে বাংলার প্রতি বিজেপির এই বিদ্বেষ। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মনে করিয়ে দেন বাংলা মহিলাদের বিশেষ সম্মান দেয়। তৃণমূল কংগ্রেসই একমাত্র দল যাদের রাজ্যসভা এবং লোকসভার সাংসদদের মধ্যে ৩৮ শতাংশই মহিলা। অন্য কোনও দলেরই এই রেকর্ড নেই। আরও একটি যুক্তিসঙ্গত প্রসঙ্গ তুলেছেন জহর সরকার। রাষ্ট্রপতির ভাষণে গুরুত্ব পেয়েছে সুশাসন। কিন্তু বিশ্বব্যাঙ্কের তালিকায় এই নিরিখে ভারতের স্থান ৬৬। উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশেরও নীচে। এই তো সুশাসনের নমুনা। জিডিপি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকেও একহাত নিয়েছেন তিনি। ২০২৪ এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী জিডিপি ৫ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে তা ৪ ট্রিলিয়ন ডলারেও পৌঁছয়নি। দেখা যাচ্ছে, ধনী আরও ধনী হয়েছে, গরিব হয়েছে আরও গরিব। টেলিকম আইনেরও তীব্র সমালোচনা করেছেন তিনি। সবমিলিয়ে রাজ্যসভায় মোদির বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় তুলেছেন জহর সরকার।
আরও পড়ুন- বিবর্ণ ফুটবলেও শেষ আটে ফ্রান্স