শুধু বাংলা (West Bengal) জয়ের লক্ষ্যেই তিনি ২৩ বার সফর করেছেন। এমন বিপুল ভোটপ্রচারের পরও সেই বাংলা তাঁকে বিমুখ করেছে। আরও একবার। ২০১৪ সাল থেকে ২০২৪— এই ১০ বছরে তিনটি লোকসভা এবং দুটি বিধানসভার সম্মুখসমরে নরেন্দ্র মোদি বারবার পরাস্ত হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। গোটা দেশে একমাত্র অপরাজেয় বলেই কি তৃণমূল কংগ্রেসের উপর খেপে লাল নরেন্দ্র মোদি?
সংসদে রাষ্ট্রপতির অভিভাষণের উপর আলোচনার পর সরকারের তরফে জবাবি ভাষণে ব্যক্তিগতভাবে তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়া বিরোধী পক্ষের কাউকে এককভাবে টার্গেট করেননি মোদি।
মোদি নিজে বাংলায় (West Bengal) পরাজয়ের হ্যাটট্রিকের জ্বালায় প্রবল ক্ষিপ্ত। তাই, মণিপুরের নারী-নির্যাতন নিয়ে এক বছরেও মুখ খুলছেন না। অথচ, বাংলায় নারী-নির্যাতনের ভুয়ো অথবা বিচ্ছিন্ন অভিযোগে সরব হচ্ছেন। চোপড়া এবং সন্দেশখালির প্রসঙ্গ তুলছেন। মোদিজি ভুলতে পারছেন না যে, তিনি বাংলায় হেরে ভূত হয়ে গিয়েছেন। এখন যতই সংসদে বড় বড় সংলাপ বলুন, বাংলায় ওঁর খেলা শেষ।
মোদির আক্রমণে যতটা রাজনৈতিক ক্রোধ রয়েছে, সেই তুলনায় সত্যতা নেই। তাই এসব বিতর্কিত, অসম্মানসূচক মন্তব্য কার্যবিবরণী থেকে বাদ দিতে হবে। কারণ, প্রধানমন্ত্রী দেশবাসী এবং সংসদকে বিভ্রান্ত করেছেন। যে সন্দেশখালির কথা উত্থাপন করেছেন তিনি, সেটি যে সম্পূর্ণ মিথ্যার উপর তৈরি একটি রাজনৈতিক চক্রান্ত, তা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত। আবার চোপড়ার ঘটনায় অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসব তিনি কেন বললেন না? মঙ্গলবার সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে নয়া নজির তৈরি করলেন মোদি, দ্য মিথ্যেবাদী। বিরোধীশূন্য রাজ্যসভায় মোদির ভাষণ চলে এবং বিরোধীশূন্য অবস্থাতেই রাজ্যসভার অধিবেশন সমাপ্ত হয়। মোদির উত্থাপিত সংবিধান সংক্রান্ত উক্তিকে সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর ও অসত্য আখ্যা দিয়ে রাজ্যসভায় প্রবল প্রতিবাদে ফেটে পড়ে বিরোধীরা। কিন্তু তাঁদের সেই সুযোগ দেওয়া হয়নি। এরপরই বিরোধীরা সম্মিলিতভাবে ওয়াক-আউট করে।
সংবিধান রক্ষাই এখন তৃণমূল কংগ্রেস-সহ বিজেপি-বিরোধী দলগুলোর একান্ত অভীষ্ট। সেটা উপলব্ধি করে মোদি মরিয়া হয়ে সংবিধানকেই আঁকড়ে ধরতে চাইছেন। বারবার বলছেন, ভোটে তো দেশবাসী প্রমাণ দিল যে, বিজেপিই সংবিধান রক্ষায় যোগ্য। দেশবাসীর ভরসা বিজেপি। কিন্তু এসব কথার বিশ্বাসযোগ্যতা কই?
‘নিট’ শব্দটি উচ্চারণ না করেও ছাত্র-বিক্ষোভে বেসামাল মোদি প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রসঙ্গ তুলতে কার্যত বাধ্য হয়েছেন। তাঁর শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান বলেছিলেন, ‘কোনও অনিয়ম হয়নি।’ আর বুধবার মোদি বলেছেন, ‘পরীক্ষা ব্যবস্থার গোটা সিস্টেম বদলাতে হবে। যুবসমাজকে সুবিচার দেব প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে।’ ২ ঘণ্টার ভাষণের শেষপর্বে এসে আওড়েছেন সেই চেনা, অতি-চেনা বুলি। ‘কেন্দ্রীয় এজেন্সিদের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছি। তারা যা যা মনে করবে, করতে পারে।’ ওঁর আর কীই বা বলার আছে!
মোদি জানেন কিংবা জেনেও ভুলে থাকার চেষ্টা করেছেন, মোদি-বিরোধিতায় ফের একজোট হচ্ছেন আন্দোলনকারী কৃষকরা। সীমানা এলাকাগুলিতে কেন্দ্র-বিরোধী বিক্ষোভ-আন্দোলন আবারও জোরদার করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা। আর এই ইস্যুতেই আগামী সপ্তাহে দিল্লিতে জরুরি বৈঠক ডাকল সর্বভারতীয় কৃষক সংগঠনগুলি। আগামী ১০ জুলাই ওই বৈঠক করবে সংযুক্ত কিসান মোর্চা। কৃষকদের একজোট হয়ে ফের আন্দোলনের চিন্তাভাবনা একদিকে, অন্যদিকে নিট-নেট ইস্যুতে ছাত্র আন্দোলনের পথে অবিজেপি ছাত্র সংগঠনগুলি। মোদি টের পাচ্ছেন, কত ধানে কত চাল।
কেন্দ্রের এনডিএ সরকারের অন্দরে আশঙ্কার মেঘ দানা বাঁধতে শুরু করেছে। কারণ চলতি বছরেই দেশের কয়েকটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে ফের কৃষক আন্দোলন, ছাত্র আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করলে বিধানসভা নির্বাচনগুলিতে প্রভাব পড়বেই। বিশেষ করে হরিয়ানার ভোট নিয়ে যথেষ্টই চিন্তিত বিজেপি। এবারের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে হরিয়ানা গেরুয়া শিবিরকে যথেষ্টই চাপে রেখেছে। এই অবস্থায় কৃষক আন্দোলন, ছাত্র-বিক্ষোভ বিজেপি-বিরোধী ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢালতে পারে।
আরও পড়ুন: রথের মিলনমেলার জন্য তৈরি হচ্ছে মায়াপুর
ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যকে (এমএসপি) আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা। দু’দফায় সেই আন্দোলন হয়েছে। তারপরেও ফসলের এমএসপিকে আইনের আওতায় নিয়ে আসেনি কেন্দ্র। ফলে এবার কিসান মোর্চার হুঁশিয়ারি, ‘হয় এসপার, নয় ওসপার।’ তবে শুধুই আন্দোলনকারী কৃষকরা নন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বেগ দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে ছাত্র সংগঠনগুলিও। প্রশ্নফাঁস কেলেঙ্কারি, নিট-নেট ইস্যুতে পথে নেমেছে তারা। দিকে দিগন্তে আওয়াজ উঠছে, খেত থেকে শিক্ষাকেন্দ্র, ছাত্র-কৃষক একযোগে বলছে, মোদি তুমি বিদায় হও। জনগণ তোমাদের পক্ষে রায় দেয়নি। জনাদেশ তোমাদের বিরুদ্ধেই।