অনবদ্য দুটি ছবি

সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে ভিন্ন বিষয়ের দুটি বাংলা ছবি। মিতুল দত্ত পরিচালিত ‘বাটন হোল’ এবং মোহাম্মদ ইসমাইল পরিচালিত ‘২১.৪’। আলোকপাত করলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

বাটন হোল
হাতের মুঠোয় পৃথিবী। এখন চটপট অনেক কিছুই জানা যায়। তবে কিছু কিছু বিষয় থেকে যায় জানার বাইরে। জানার চেষ্টাও থাকে না। বরং অনেক ক্ষেত্রে ভুল ধারণা পোষণ করা হয়। এমনটাই ঘটে অটিজমের ক্ষেত্রে। কোনও অটিস্টিক শিশুকে দেখলেই পাগল বলে চিহ্নিত করার প্রবণতা রয়েছে। এটা যে কতবড় ভুল, চিন্তা করা যায় না। অটিজম কোনও অস্বাভাবিকতা নয়। পাগলামি নয়। অটিজম হল মনের এক অবস্থা। অটিস্টিক শিশুরা কিন্তু অসাধারণই হয়। নিজের জগতে বিভোর থাকে। নিজের ভাবনায় অসাধারণ মেধার পরিচয় দেয়। কিন্তু অন্যের সঙ্গে কথা বলতে গেলেই সমস্যা। জড়িয়ে আসে কথা, ভাবনার প্রকাশ ঘটাতে পারে না। অনেকে আবার অসম্ভব অমনোযোগী, অস্থির মন। বিদেশে অটিজম নিয়ে বিস্তর গবেষণা চলছে। বিজ্ঞানী, গবেষকরা অটিজমকে কোনও রোগ বলতে রাজি নন। তাঁদের মতে, অটিজম হল একরকম ‘কন্ডিশন’। মনের একরকম স্থিতি। মানসিক স্থিতি ও বিভিন্ন আচরণগত সমস্যাকে একসঙ্গে অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার বলা হয়।

আগের তুলনায় অটিজম নিয়ে সচেতনতা বেড়েছে। তৈরি হচ্ছে সিনেমা। সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে তেমনই একটি ছবি, ‘বাটন হোল’। মিতুল দত্ত-র পরিচালনায়। মিতুল মূলত কবি। সম্পাদক। লেখেন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। সম্পাদনা করেন লিটল ম্যাগাজিন ‘কবিয়াল’। তাঁর গানের গলাটিও ভারি চমৎকার। কয়েকটি ছবিতে (Movie) অভিনয়ও করেছেন। এবার নিজেই বানালেন একটি ছবি। ‘বাটন হোল’-এর ভাবনা কীভাবে মাথায় এল? মিতুল জানালেন, ‘২০২১-এ আমার ছোটবোন গাড়ি অ্যাক্সিডেন্টে মারা যায়, দুই ছেলেমেয়েকে রেখে। মেয়ে বড়, দিল্লিতে থাকে, চাকরি করে। ছেলেকে আমি আমাদের কাছে নিয়ে আসি। ১৭ বছরের ছেলে, অটিস্টিক। ব্যান্ডেলে আমি প্রথমেই ওর জন্য একজন স্পেশাল এডুকেটরের ব্যবস্থা করি। অনলাইনে ক্লাস করে ছেলের মধ্যে আস্তে আস্তে বেশ রিমার্কেবল চেঞ্জ আসতে থাকে। বিশেষ করে আমার সঙ্গে ও নিজেই কিছু কিছু ব্যাপার শেয়ার করতে চেষ্টা করে। এভাবেই একদিন, আমি বুঝতে পারি, নিজের প্রাইভেট পার্ট নিয়ে ওর কনফিউশন আছে। কৌতূহল আর প্রশ্ন আছে। সেই প্রশ্নের জবাব খুঁজতেই এই ছবিটি বানানোর সিদ্ধান্ত নিই। আমার ঘুঁটির মতো বয়ঃসন্ধির বাচ্চাদের জন্যেই এই ছবি।’ তিনি আরও জানান, ছেলেকে প্রাইভেট টাইম দেওয়ার কথা আমাকে বলেছেন ‘শুধু বিঘে দুই’ পত্রিকার সম্পাদক সঙ্গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রাইভেট টাইম আমার ছবিতে ভীষণ ইম্পর্টেন্ট।

আরও পড়ুন: কত ধানে কত চাল বুঝিয়েছে বাংলা, এখনও তাই মোদিজির কমেনি জ্বালা

২৬ জুন কলকাতার তপন থিয়েটারের দোতলায় তাপস-জ্ঞানেশ সভাকক্ষে হয়েছে প্রথম স্ক্রিনিং। এর আগে ছবিটির স্পেশাল স্ক্রিনিং এবং ডিসকাশন সেশন হয়েছে গোয়ার পার্পল ফেস্ট-এ। ছবির মূল চরিত্রে, অর্থাৎ বুকুনের চরিত্রে অভিনয় করেছে দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। বুকুনের মা, এষার চরিত্রে সঞ্জিতা। বুকুনের বন্ধু টিনার চরিত্রে প্রজ্ঞা নস্কর। স্পেশাল এডুকেটরের চরিত্রে এষা কর। সিনেমাটোগ্রাফি করেছেন দেবরাজ নাইয়া, সম্পাদনায় রোহিত ঘরামি, মিউজিক মেঘ বন্দ্যোপাধ্যায়, সাউন্ড নভোনীল ভট্টাচার্য, কালার পবিত্র প্রামাণিক। সহকারী পরিচালক পৌলোমী নস্কর। প্রযোজনা করেছে ভ্যানগার্ড ফিল্মস।
ছিটেফোঁটা মুনাফা-বাসনা নেই, এই ছবি তৈরি হয়েছে মন থেকে। সমাজকে বার্তা দেওয়ার জন্য। ছবিটি দেখে আশা করি অটিজম সম্পর্কে দর্শকরা জানবেন, বুঝবেন। বদলাবে ধ্যানধারণা।

২১.৪
ভূত, প্রেত, আত্মা নিয়ে অসংখ্য ছবি (Movie) তৈরি হয়েছে। আমাদের দেশে তো বটেই, বিদেশেও। বাংলা ভাষাতেও খুব কম হয়নি ভূতের ছবি। কোথাও দেখা গেছে ভূতের প্রত্যক্ষ উপস্থিতি, কোথাও পরোক্ষভাবে। কোনও ভূত ভয় দেখায়, কোনও ভূত মেলামেশা করে অবিকল বন্ধুর মতো। কোনও ভূত আবার বরদান করে। কিছু ছবিতে দেখা গেছে, যেটাকে ভূত মনে করা হচ্ছে, সেটা আসলে ভূত নয়। অন্য কিছু। বেশকিছু ভূতের গল্প শেষপর্যন্ত রসহ্য রোমাঞ্চের দিকে বাঁক নিয়েছে। এমন উদাহরণ ভূরি-ভূরি দেওয়া যায়।
২১ জুন মুক্তি পেয়েছে মোহাম্মদ ইসমাইল পরিচালিত ‘২১.৪’। ট্রেলার মুক্তির পর থেকেই দারুণ আগ্রহ তৈরি হয়েছিল ছবিটি ঘিরে। ছবির মধ্যে রয়েছে ভূত বা অশরীরীর উপস্থিতি। গল্পটা একেবারেই অন্যরকম। মেডিক্যালের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সমর। তার মনে একটা প্রশ্ন ছিল, আত্মার কি ওজন আছে? যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে আত্মার ওজন কত? সমর তার প্রফেসরকে জিজ্ঞেস করে, সে কি আত্মার ওজন জানার জন্য একটা পরীক্ষা করতে পারে? তার প্রফেসর এই অনুমতি দেন না। কারণ এটা একটা অমানবিক পরীক্ষা এবং দেশের আইনের পরিপন্থী। সমর কীভাবে এই এক্সপেরিমেন্ট করবে এবং সে এই কাজে সফল হবে কিনা, জানার জন্য দেখতে হবে ছবিটা।
নিটোল গল্প। টানটান চিত্রনাট্য। চোখাচোখা সংলাপ। পরিচালক স্বয়ং এই দায়িত্ব সামলেছেন। তিনি যে সসম্মানে উত্তীর্ণ, বলার অপেক্ষা রাখে না। ছবিতে প্রফেসরের চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেছেন শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়। সত্যিই তিনি জাত অভিনেতা। অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন মল্লিকা মজুমদার, রাহুল শীল, পার্থসারথি দেব, রোশনি ঘোষ, মৌমিতা পণ্ডিত প্রমুখ। মহাশক্তি প্রোডাকশনের ব্যানারে ছবিটি প্রযোজনা করেছেন বিজয় কানোদিয়া। ক্যামেরায় অভিষেক চট্টোপাধ্যায়, শিল্প পরিচালক তপন শেঠ, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকে প্রতীক কুণ্ডু।
নিছক ভূত-প্রেতের ছবি নয়, পরতে পরতে রয়েছে গভীর রহস্য, রোমাঞ্চ। আছে উদ্দাম যৌনতাও। হারজিতের গোপন খেলা। বাংলা ছবিতে অন্যরকম গল্পের স্বাদ পেতে চাইলে বিগ বংয়ে দেখে নেওয়া যায় ‘২১.৪’।

Latest article