প্রতিবেদন: প্রশ্ন উঠেছে যোগীর পুলিশের ভূমিকা নিয়েই। নেহাতই আইওয়াশ, নাকি অন্যকিছু? হাথরসের ঘটনার (Hathras Stampede) আসল ভিলেন স্বঘোষিত গডম্যান ভোলে বাবাকে এখনও ছুঁতে না পারলেও বৃহস্পতিবার ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে সৎসঙ্গের কয়েকজন উদ্যোক্তাও আছেন বলে পুলিশের দাবি। বৃহস্পতিবার বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে এই খবর রীতিমতো ফলাও করে বললেও, সুরজ পাল সিং ওরফে ভোলে বাবা কোথায়, ঘটনার দু’দিন পরেও কেন গ্রেফতার করা হল না তাঁকে— এর কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি যোগীরাজ্যের পুলিশের আলিগড় রেঞ্জের আইজি এস মাথুর। শুধুই দায়সারা মন্তব্য শোনা গেল তাঁর মুখে— গডম্যানকে এখনও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। প্রয়োজন পড়লেই তাঁকে জেরা করা হবে। এই ঘটনায় তাঁর ভূমিকা কী, তা নিয়ে এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়। সন্দেহটা এখানেই। প্রশ্ন উঠেছে, যাঁর হদিশই এখনও পাওয়া যাচ্ছে না, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সুযোগটা কোথায়? তা হলে কি পুলিশ জানে, কোথায় গা ঢাকা দিয়েছেন ভোলে বাবা? নাকি পুলিশই ব্যবস্থা করে দিয়েছে ভিলেন গডম্যানের নিরাপদ আশ্রয়ের? সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, পদপিষ্ট হয়ে ১২১ জনের মৃত্যুর ঘটনায় যে স্বঘোষিত গডম্যানের ন্যক্কারজনক ভূমিকা দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট, সেখানে একজন আইজি কীভাবে বললেন, তাঁর ভূমিকা নিয়ে এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়? তাহলে ডবল ইঞ্জিন সরকারের ইশারায় আসল অপরাধীকে আড়াল করার জন্যই কি তাঁর বিরুদ্ধে কোনও এফআইআর করা হয়নি? অথচ মুখ্য সেবাদার দেবপ্রকাশ মধুকরকে প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এফআইআরে। জামিন অযোগ্য পরোয়ানা জারি করা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। তাঁকে ধরে দিতে পারলে এক লক্ষ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।
এদিকে আইজি জানিয়েছেন, মৃতের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত ১২১। মৃত ১২১ জনকেই শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। শেষ দেহটি ভিডিও কলে শনাক্ত করেছেন প্রিয়জনেরা। কিন্তু স্থানীয় সূত্রে খবর, মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৩।
আরও পড়ুন: ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে ফিরলেন হেমন্ত
স্বঘোষিত গুরুর বুজরুকি সময় যত এগোচ্ছে, ভিলেন গডম্যান ভোলে বাবার অতীতের কীর্তিকলাপও ততই বেআব্রু হয়ে পড়ছে। মরা মানুষকে জীবন্ত করার নামে ভক্তদের সঙ্গে রীতিমতো প্রতারণা করেছিলেন এই স্বঘোষিত ধর্মগুরু। তাঁর দাবি ছিল, অলৌকিক ক্ষমতাবলে মৃত কিশোরী ভাইঝিকে বাঁচিয়ে তুলবেন তিনি। কিন্তু তা আদৌ সম্ভব ছিল না। কবরস্থানে বিশৃঙ্খলা এবং অশান্তি সৃষ্টির অভিযোগে ২৩ বছর আগে আগ্রা পুলিশ ৬ সঙ্গী-সহ গ্রেফতার করেছিল তাঁকে। জেলেও পাঠানো হয়েছিল তাঁকে। তাছাড়া তাঁর তথাকথিত ধর্মসভায় ১২ বছর আগেও একবার পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। সবচেয়ে মারাত্মক অভিযোগ, করোনাকালে ৫০ জন মানুষকে নিয়ে সৎসঙ্গ করার কথা বলে ৫০,০০০ মানুষের জমায়েত করিয়েছিলেন তিনি। যৌন হেনস্থার অভিযোগও উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। এখন হাথরসের (Hathras Stampede) জখম অসহায় মানুষের ক্ষোভের আগুন এই প্রতারককে ঘিরেই। তাঁদের কথায়, ভোলে বাবার যখন এতই ক্ষমতা তাহলে সুস্থ করে দিক তাঁদের।