পুরাণ গাথায় জগন্নাথ
জগতের নাথ, তাই তিনি জগন্নাথ। ত্রিভুবনেশ্বর প্রভুকে নিয়ে রয়েছে চমকপ্রদ অসংখ্য কাহিনি।
ওড়িশার পৌরাণিক নাম হল উৎকল প্রদেশ। এই উৎকল ধামেই ভগবান বিষ্ণু তাঁর বহু লীলা করেছেন। এই উৎকল ধামই বর্তমানে পুরী শহর। বহু মানুষ তাকে শ্রীক্ষেত্র, নীলাচল, পুরুষোত্তম এবং পুরীধাম বলে চেনেন।
স্কন্দ পুরাণে ভগবান বিষ্ণু পুরুষোত্তম নীলমাধব নামে অবতীর্ণ হয়ে শবর নামে দলিত জাতির প্রধান ও পূজ্য দেবতারূপে পূজিত হতে থাকে। মনে করা হয়ে থাকে শবর জাতের লোকেরা পূজ্য দেবতার মূর্তি কাঠ দিয়ে নির্মাণ করত। পরবর্তী সময়ে অবশ্য শবর জাতির পুরোহিতদের পাশাপাশি নীলমাধব ব্রাহ্মণদের দ্বারা পূজিত হয়ে থাকেন।
পুরাণের তথ্য অনুযায়ী নীলগিরিতে পুরুষোত্তম হরির পুজো হয়ে থাকে এবং হরিকে ভগবান রামের আরেক রূপ বলে মনে করা হয়। মৎস্য পুরাণে পুরুষোত্তম অঞ্চলে পূজ্য দেবী হলেন মাতা বিমলা। মহাকাব্য রামায়ণের উত্তর খণ্ডে রাম, রাবণের ভাই বিভীষণকে জগন্নাথদেবের উপাসনা করার জন্য বলেন। তাই আজও পুরীর মন্দিরে জগন্নাথদেবের সঙ্গে সঙ্গে বিভীষণের বন্দনা হয়ে থাকে। স্কন্দ পুরাণে পুরী ধামের ভৌগোলিক সীমানার বিবরণ পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন-রঘুনাথগঞ্জের বাপ্পার গড়া জগন্নাথের দারুমূর্তি বিদেশে
কথিত আছে, শবর জাতের দলপতি পুরোহিত বিশ্ববসু প্রথমবার জগন্নাথদেবের পুজো করেন। আর শবর জাতির পুরোহিতরা দ্বৈতাপতি নামে পরিচিত। জগন্নাথদেবের উল্লেখ রামায়ণেও পাওয়া যায়।
তিনি নীলমাধব
মালবারের রাজা ছিলেন ইন্দ্রদ্যুম্ন। তাঁর পিতা ছিলেন রাজা ভারত। এবং মাতা ছিলেন সুমতি। রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন একদিন স্বপ্নে ভগবান জগন্নাথকে দেখতে পেলেন। স্বপ্নে জগন্নাথদেব ইন্দ্রদ্যুম্নকে আদেশ দিলেন নীলাচল পর্বতের গুহায় ভগবান জগন্নাথের একটি মূর্তি আছে। সেই মূর্তিটি নিয়ে এসে রাজা যেন মন্দির বানিয়ে তাঁর পূজার্চনা করেন।
স্বপ্নাদেশ পেয়ে রাজা তো মহা খুশি এবং বিন্দুমাত্র দেরি না করে তাঁর সৈন্য অনুচরবর্গদের সঙ্গে করে ভগবান জগন্নাথদেবের মূর্তিটিকে খোঁজার জন্য নীলাচল পর্বতের দিকে রওনা দিলেন। তাঁদের অনুচরবর্গদের মধ্যে রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের ঘনিষ্ঠ বিদ্যাপতি নামে এক ব্রাহ্মণ ছিলেন। আর তিনি এও জানতেন শবর জাতির লোকেরা নীলমাধবের মূর্তিটি নীলাচল পর্বতের এক গুহায় লুকিয়ে রেখেছে।
তিনি বুঝতে পারলেন যে, রাজার সৈন্যসামন্তরা হাজার চেষ্টা করলেও শবর জাতির প্রধান বিশ্ববসুর সাহায্য ছাড়া নীলমাধবের মূর্তিটিকে কোনওভাবেই উদ্ধার করা যাবে না।
বিশ্ববসু ছিলেন নীলমাধবের পরম ভক্ত এবং শবর জাতির দলপতি। পুরোহিত বিশ্ববসু নীলমাধবকে নীলাচল পর্বতের গুহায় লুকিয়ে লুকিয়ে পুজো করতেন।
সব দিক চিন্তা করে বিদ্যাপতি একটা ফন্দি আঁটলেন। তিনি বুদ্ধি করে বিশ্ববসুর কন্যাকে বিয়ে করলেন। এবং তিনি জানতেন যে তাঁর স্ত্রী তাঁকে মিথ্যে কথা বলবেন না। তিনি স্ত্রীর কাছ থেকে নীলমাধবের খোঁজ নিলেন। এবং নীলাচল পর্বতের গুহা থেকে নীলমাধবকে নিয়ে এসে রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের হাতে তুলে দিলেন। নীলমাধবের মূর্তিটি চুরি যাওয়ায় বিশ্ববসু চরম শোক পেলেন। তিনি ছিলেন নীলমাধবের খুব ভক্ত। ভক্তকে এভাবে কষ্ট পেতে দেখে ভগবান ইন্দ্রদ্যুম্নকে স্বপ্নাদেশ দিলেন। নীলমাধবের মূর্তিটিকে যেন পুনরায় নীলাচল পর্বতের গুহায় তিনি রেখে আসেন। পাশাপাশি তিনি রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের কাছে ফিরে আসার আশ্বাস দেন। তখন রাজা নীলমাধবকে পুনরায় নীলাচল পর্বতের গুহায় রেখে আসেন ঠিকই তবে প্রভুর আশ্বাস মাথায় রেখে মন্দির নির্মাণের কাজ আরম্ভ করে দেন। কারণ নীলমাধব কথা দিয়েছেন তাঁর কাছে তিনি আসবেন।
নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে প্রভুকে ফিরে আসার জন্য আকুল প্রার্থনা জানান। ভগবান জগন্নাথ তখন রাজাকে স্বপ্নাদেশে বলেন দ্বারিকা নগরী থেকে একটি নিমগাছের গুঁড়ি ভাসতে ভাসতে পুরীর সমুদ্রতটে এসে কিনারায় লাগবে। আর ওই নিম কাঠ দিয়েই যেন তাঁর মূর্তি তৈরি করা হয়। পরের দিন সকালবেলায় রাজা উপস্থিত হলেন সমুদ্রের ধারে। অভাবনীয়ভাবে তিনি লক্ষ্য করলেন যে সত্যিই একটি নিমগাছের গুঁড়ি সমুদ্রের পাড়ে ভেসে এসেছে।
আরও পড়ুন-পরকীয়া লুকোতেই ঠান্ডা মাথায় পুড়িয়ে খুন পরিবারকে, আটক ২
রাজা সৈন্যসামন্তদের গাছের গুঁড়িটিকে জল থেকে ডাঙায় তোলার নির্দেশ দিলেন। কিন্তু শত শত সৈন্য গাছের গুঁড়িটিকে ডাঙায় তুলতে ব্যর্থ হল। ইন্দ্রদ্যুম্ন অনুভব করলেন সবই ভগবান নীলমাধব ওরফে জগন্নাথের লীলা। গুঁড়িটিকে তোলবার জন্য এবার তিনি নীলমাধবের পরম ভক্ত বিশ্ববসুর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন।
অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় হল, রাজার সৈন্যসামন্তরা সহস্রজন ধরে এতটুকু সরাতে পারছিল না সেখানে বিশ্ববসু অবলীলায় কাঁধে করে গাছের গুঁড়িটিকে ডাঙায় নিয়ে আসেন। মূর্তি গড়ার কাঠ তো পাওয়া গেল। মূর্তি গড়ার কারিগরকে কীভাবে পাওয়া যাবে। একদিন স্বয়ং বিশ্বকর্মা একজন বৃদ্ধ কারিগরের রূপ ধরে রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের কাছে হাজির হলেন।
বিশ্বকর্মা ইন্দ্রদ্যুম্নের কাছে তিনটি শর্ত রাখেন।
(এক) মূর্তি তিনি একা তৈরি করবেন ও মূর্তি তৈরির সময় তিনি কারও কাছে কোনওরকম সাহায্য নেবেন না।
(দুই) মূর্তি তৈরি করার সময় মন্দিরের দরজা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখা হবে।
(তিন) মূর্তি সম্পূর্ণ করার কাজ তিনি একুশ দিনের মধ্যে করবেন আর ওই একুশ দিন মন্দিরের দরজা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে।
বৃদ্ধ কারিগরের সমস্ত শর্ত মেনে নেন রাজা। মূর্তি তৈরির কাজ আরম্ভ করার নির্দেশ দেন। এরপর মন্দিরের গর্ভগৃহ থেকে ঠকঠক ঠুকঠুক আওয়াজ বাইরে আসতে থাকে।
রাজা খুশি মনে অপেক্ষায় থাকেন, কখন সম্পূর্ণ মূর্তি তিনি দেখতে পাবেন।
এদিকে, রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের স্ত্রী অত্যন্ত কৌতূহলে মন্দিরের দরজায় কান পাতলেন। কিন্তু হাতুড়ির আওয়াজ শুনতে পেলেন না। রানি মনে মনে ভাবলেন বৃদ্ধ কারিগর হয়তো বদ্ধ ঘরে খিদে-তেষ্টায় দেহ রেখেছেন।
খবর গেল রাজার কাছে, রাজা নিজে ছুটে এলেন ঘটনার সত্যাসত্য বিচার করতে। রাজাও কান পাতলেন দরজায় কিন্তু নাহ্ সত্যিই কোনও আওয়াজ নেই। উদ্বিগ্ন রাজা উপায়ান্তর না দেখে নিরুপায় হয়ে মন্দিরের দরজা খোলার আদেশ দিলেন। শর্ত ভুলে গেলেন তিনি। আশ্চর্যের ব্যাপার দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে মন্দিরে বৃদ্ধ কারিগর অদৃশ্য হয়ে গেলেন। রাজা তখন মূর্তির দিকে তাকিয়ে দেখেন সেখানে তিনটি মূর্তি আধগড়া অবস্থায় পড়ে আছে। ভগবান জগন্নাথ এবং বলভদ্রের দুটো হাতের তখন শুধু অর্ধেকটাই তৈরি হয়েছে আর সুভদ্রার হাত ও পা দুটিই অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। এবার শর্তের কথা মনে এল রাজার। কী আর করা! প্রভুর এটাই ইচ্ছা মনে করে বলভদ্র, জগন্নাথ ও বোন সুভদ্রার অর্ধেক গড়া মূর্তিই পুরীর মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করলেন। সেই তখন থেকে আজও ভগবান জগন্নাথ দাদা বলভদ্র এবং বোন সুভদ্রার ওই রূপই পুরীর মন্দিরে পূজিত হয়ে আসছে।
রথযাত্রার মাহাত্ম্য
এ তো গেল মন্দিরের ইতিহাস। এবার দেখা যাক পবিত্র রথযাত্রার তাৎপর্য।
প্রতিবছরই পুরী-সহ সারাদেশে মহাসমারোহে পালিত হয় জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা। পুরীতে তো দেশ-বিদেশ থেকে লক্ষাধিক মানুষ এই রথযাত্রা দেখতে আসেন।
কথিত আছে, রথের রশি স্পর্শ করা বা ছুঁতে পাওয়া অত্যন্ত ভাগ্যের। শত জন্মের পাপ এক নিমেষে ধুয়ে-মুছে সাফ হয়ে যায় বলে মনে করা হয়। রথের চাকা ও রশির যে কোনও অংশ ছুঁলে পুনর্জন্মের পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কেননা, প্রাচীন প্রথা মেনে রথের মধ্যে অধিষ্ঠিত থাকেন তেত্রিশ কোটি দেবদেবী।
তবে রথযাত্রার শুরু নিয়ে রয়েছে সুপ্রাচীন ইতিহাস। মাদলাপঞ্জি নামে একটি কালানুক্রমিক বিবরণমূলক গ্রন্থ থেকে জানা যায়, প্রায় সাতশো বছর আগের রথযাত্রা পালিত হত দুটি পৃথক ভাগে। সেই সময় তিনটি না, ছয়টি রথ টানা হত। পুরীর মন্দির থেকে জগন্নাথ, সুভদ্রা, বলভদ্রকে নিয়ে তিনটি রথে করে গুণ্ডিচা মন্দিরের দিকে নিয়ে যাওয়া হত। কিন্তু মাসির বাড়ির দিকে যাওয়ার পথে একটা বিশাল বলাগুন্ডি নালা (মতভেদে মালিনী নদী) পড়ত। মন্দির থেকে তিনটি রথ ওই নালা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হত। তারপর জগন্নাথ-সুভদ্রার মূর্তি রথ থেকে নামিয়ে নালা পার করানো হত। তারপর ওপারে সাজানো তিনটি রথে বসিয়ে আবার টেনে নিয়ে যাওয়া হত গুণ্ডিচা মন্দিরের দিকে তবে একটা সময় সেই নালা পলি পড়ে বুজে যায়। তারপর থেকেই রথযাত্রা তিনটি রথে মহাধুমধাম করে পালিত হয়।
আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে জগন্নাথদেব দাদা বলরাম এবং বোন সুভদ্রা রথে চেপে মাসির বাড়িতে যান। প্রভু বোন দাদার সঙ্গে রথে চেপে যাবেন মাসির বাড়ি। কেমন সেই রথ? কী বিশেষত্ব সেই বাহনে?
পদ্মপুরাণ অনুসারে ভগবান শ্রীজগন্নাথদেবের বোন সুভদ্রা একবার শহর ঘুরে দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তখন দাদা বলরাম এবং জগন্নাথদেব নিজের প্রিয় বোন সুভদ্রাকে নিয়ে রথযাত্রা করে শহর ঘুরতে বেরিয়ে পড়েন। তাঁরা শহর ঘুরতে ঘুরতে মাসির বাড়িতে পৌঁছন এবং সেখানে সাতদিন থাকেন। তখন থেকেই জগন্নাথদেবের রথযাত্রার পরম্পরা শুরু হয়।
নারদপুরাণ এবং ব্রহ্মপুরাণেও রথযাত্রার উল্লেখ রয়েছে।
আরও পড়ুন-পেনাল্টি পাইনি, ফুঁসছে জার্মানি
ওড়িশার প্রাচীন পুঁথি ব্রহ্মাণ্ডপুরাণে বলা আছে মহারাজ ইন্দ্রদ্যুম্নের আমলে জগন্নাথদেব, বলরাম এবং সুভদ্রার মূর্তি তৈরি হয়। এবং একসঙ্গে রথযাত্রা চালু হয় নীলমাধবের ইচ্ছেয়। পঞ্জিকা অনুযায়ী আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে পালিত হয় রথযাত্রার পুণ্য উৎসব।
রথের রশিতে টান
জগন্নাথদেবের রথের নাম হল নান্দী ঘোষ। বলরাম দেবের রথের নাম তালধ্বজ। সুভদ্রার রথের নাম দর্পদলন। জগন্নাথদেবের রথ নান্দী ঘোষের ঘোড়াদের নাম যথাক্রমে শঙ্খ, বলাকা, হরিদাস্য, শ্বেতা। দাদা বলরামের রথ তালধ্বজের ঘোড়াদের নাম হল যথাক্রমে তীব্র, ঘোড়া, দীর্ঘশর্মা, স্বর্ণনাভ। সুভদ্রার রথ দর্পদলনের ঘোড়াদের নাম রচিকা, মচিকা, জিতা, অপরাজিতা।
সবার প্রথমে যাত্রা শুরু করে বড় ভাই বলভদ্রের রথ। ওই রথের চোদ্দোটি চাকা। উচ্চতা চুয়াল্লিশ ফুট। রথের আবরণের রং নীল।
তারপর যাত্রা শুরু করেন দেবী সুভদ্রা। তাঁর রথের উচ্চতা তেতাল্লিশ ফুট আর বারোটি চাকা। রথের ধ্বজাতে পদ্মচিহ্ন আঁকা। তাই এই রথের আরেক নাম পদ্মধ্বজ। রথের আবরণের রং লাল।
সবার শেষে যাত্রা করে প্রভু জগন্নাথদেবের রথ। যেহেতু এই রথের ধ্বজাতে হনুমানের মূর্তি। সেহেতু এই রথের আরেক নাম কপিধ্বজ। রথের উচ্চতা পঁয়তাল্লিশ ফুট, ষোলোটি চাকা। রথের আবরণের রং হলুদ।
আরও পড়ুন-রঘুনাথগঞ্জের বাপ্পার গড়া জগন্নাথের দারুমূর্তি বিদেশে
রথের তাৎপর্য
রথগুলোর প্রত্যেকটি অংশের বিভিন্ন তাৎপর্য রয়েছে।
যেমন মানবদেহের সম্পূর্ণ হাড়ের সংখ্যা দুশো ছয়টি। প্রতিটি নির্মাণ হয় দুশো ছয়টি কাঠের টুকরো দিয়ে। সেই রথে প্রাণ দেন রথের সবার দেবমূর্তি। জগন্নাথদেবের রথ নান্দী ঘোষের ষোলোটি চাকা। দশটি রিপুর প্রতিনিধিত্ব করে। বলরামের রথের চোদ্দোটি চাকা। এই চোদ্দোটি চাকায় চোদ্দোটি ভবনের কথা ধরা থাকে।
সুভদ্রার রথ দর্পদলনের বারোটি চাকা। এই বারোটি চাকা বলে বারো মাসে ভজনের সময়।
রথযাত্রার আরেকটি বিশেষ তাৎপর্য হল, রথ টানা শুরুর আগে পুরীর রাজা সোনার ঝাঁটা দিয়ে ঝাঁট দেন রাস্তায়।
রথযাত্রাকে ঘিরে রয়েছে কিছু অদ্ভুত ঘটনা। যা কিছুটা অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি।
রথের দিন প্রতি বছর বৃষ্টি হয়। রথ তৈরির সময় কোনও আধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয় না। পুরোটাই কাঠের হাতুড়ি ব্যবহার করা হয়ে থাকে বর্তমান সময়ের উন্নত প্রযুক্তির কোনওরকম সাহায্য নেওয়া হয় না এই রথ নির্মাণে। রথ নির্মাণে নিমকাঠ ব্যবহার করা হয়। পুরীর জগন্নাথদেব তাঁর রথে একবার সওয়ার হওয়ার পর দ্বিতীয়বার সওয়ার হন না। ওই রথ ভেঙে সেই কাঠ জগন্নাথদেবের ভোগ তৈরির জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
শুধু তাই নয়, নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য-প্রস্থের মাপগুলি হাতেই নেওয়া হয়। গজ, ফিতের কোনও ব্যবহার হয় না। পেরেক, পিন বা নাটবল্টু থেকে শুরু করে কোনও ধাতু— কিচ্ছু ব্যবহার করা হয় না। এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সময়ে দাঁড়িয়ে অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় তাই না?
রথ তৈরিতে যুক্ত থাকেন প্রায় চোদ্দোশো শিল্পী। বংশপরম্পরায় এই শিল্পীরা রথ তৈরির কাজ করে চলেছেন আবহমানকাল ধরে। ভগবান বিষ্ণুর অষ্টম অবতার, ভগবান কৃষ্ণের অন্যতম রূপ, সর্ব পৃথিবী ও মহাবিশ্বের পালনকর্তা মহাবিশ্বের রক্ষক করুণাময় জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উৎসব শুধু উৎকলের নয়। গোটা পৃথিবীর। সব্বার। এমনই মহিমা প্রভুর।
জগন্নাথ স্বামী নয়ন পথগামী ভবতু মে…