প্রতিবেদন : লাগাতার বৃষ্টির মধ্যে এবার দোসর ভূমিকম্প। কিছুতেই বিপত্তি কাটছে না উত্তরের। একটানা বৃষ্টিতে এমনিতেই আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার জলমগ্ন হয়ে পড়েছে, পরপর ধস নামছে জাতীয় সড়কেও। আটকে পড়া পর্যটকদের উদ্ধারে বিভিন্নভাবে তৎপর হয়েছে প্রশাসন। তার মধ্যেই এবার ভূমিকম্প সিকিমে। শনিবার সকালে সিকিমের টাডং এলাকা থেকে ৭৮ কিলোমিটার দূরে কম্পন অনুভূত হয়। যার বড়সড় প্রভাব পড়েছে দক্ষিণ-পূর্ব সিকিমের বিস্তীর্ণ অংশে। দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদ শিবিরে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে প্রশাসন। ফিরিয়ে আনা হচ্ছে পর্যটকদের। আগামী দু’দিন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে দার্জিলিং থেকে এনজেপি এবং এনজেপি থেকে দার্জিলিং টয় ট্রেন যাত্রা। ৮ জুলাই থেকে এই সার্ভিস ফের চালু হবে। অন্যদিকে, শনিবার ফের ধস নামে কার্শিয়াং মহকুমার অন্তর্গত পাগলাঝোরায় ১১০ নম্বর জাতীয় সড়কে। ধস নেমেছে মেল্লির কাছে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কেও। পাহাড় থেকে নেমে আসছে বোল্ডার। যুদ্ধকালীন তৎপরতার সঙ্গে ধস সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়েছে। তবে ধসের জেরে কালিম্পং এবং সিকিমের লাইফলাইনে যান চলাচল বেশ কয়েকদিন ধরে বন্ধ হয়ে রয়েছে। শুক্রবার নতুন করে ওই রাস্তায় ধস নামায় শিলিগুড়ির সঙ্গে কালিম্পংয়ের সড়ক যোগাযোগ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। দার্জিলিংয়ের রাস্তাতেও একাধিক জায়গায় ধসের জেরে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে দার্জিলিং রেলস্টেশনের কাছে এবং লেবং কার্ট রোডে ধস নেমেছে। হিলকার্ট রোডেও পাগলাঝোরা এবং মহানদী এলাকায় রাস্তায় ফাটল ধরা পড়েছে।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
অবিরাম বৃষ্টিতে ফুঁসছে কোচবিহারের নদীগুলি। কোচবিহারের রায়ডাক নদীতে ইতিমধ্যেই লাল সতর্কতা জারি করেছে প্রশাসন৷ রায়ডাক কালজানি নদীর জল বেড়ে প্লাবিত হয়েছে বক্সিরহাট ও তুফানগঞ্জের চিলাখানা, নাটাবাড়ির বিভিন্ন এলাকা। এদিন জাইগির চিলাখানা গ্রাম পরিদর্শনে গিয়েছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তিনি বলেন, নদী তীরবর্তী এলাকায় গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। দুর্গতদের দেওয়া হয়েছে শুকনো খাবার৷ এলাকার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ব্লক প্রশাসনের সঙ্গেও কথা বলেছেন। প্রয়োজনমতো ত্রাণ শিবির খোলা হবে বলেও জানা গিয়েছে।
এদিকে কোচবিহারের মানসাই নদীর জল বাড়ায় কোচবিহার ১ নম্বর ব্লকের বিস্তীর্ণ গ্রাম পঞ্চায়েত ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এলাকার বিভিন্ন ত্রাণ শিবির ঘুরে দেখেছেন কোচবিহারের তৃণমূলের জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুমিতা বর্মন। সভাধিপতি বলেন, মানসাই নদীর জল বেড়ে গ্রামের রাস্তার উপর দিয়ে বইছে নদীর জল। খবর পেয়ে তিনি প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন৷ নদীর জল ঢুকে হাঁটু জল বইছে গ্রামের বিভিন্ন রাস্তার উপর দিয়ে৷ মানসাই নদীর জল বেড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতগ্রস্ত হয়েছেন কোচবিহার ১ ব্লকের পুঁটিমারি ফুলেশ্বরী গ্রামের বাসিন্দারা৷ গোসানিমারি গ্রামে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় পঞ্চাশ জন৷ তাঁদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷
আরও পড়ুন-ন্যায় সংহিতা : অমর্ত্যর তোপ
সিতাই পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা সিঙ্গিমারি নদী লাগোয়া দুর্গতদের হাতে তুলে দিয়েছেন ত্রিপল, শুকনো খাবার৷ কোচবিহার ১ ব্লক পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আবদুল কাদের হক গিয়েছিলেন তোর্সা নদীর জল ঢুকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা গুড়িয়াহাটিতে৷ মাথাভাঙ্গা একাধিক গ্রাম পরিদর্শন করেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সাবলু বর্মন। আলিপুরদুয়ারের টোটোপাড়া, জলপাইগুড়ির টোটগাঁও, ধূপগুড়িতে বৃষ্টির দাপট চলছেই। ময়নাগুড়িতে অতি-বৃষ্টির ফলে জলবন্দি ৪০টি পরিবার। শহরের ৮ নং ওয়ার্ডের এই ঘটনায় কাউন্সিলর প্রদ্যোত বিশ্বাস ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিজেই জল নিকাশে পুরকর্মীদের সঙ্গে কাজে হাত লাগান। আবার বাঙড়ি নদীর প্রবল জলোচ্ছ্বাসে বিচ্ছিন্ন আলিপুরদুয়ারের টোটোপাড়া। ডুয়ার্সেও চলছে অবিরাম বৃষ্টিপাত। মাদারিহাট থেকে টোটোপাড়া যাওয়ার রাস্তায় বাঙড়ি নদীতে আচমকা জলস্তর বেড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে টোটোপাড়া। প্রায় ঘণ্টা দুয়েক পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। কিন্তু শনিবার সকালে ভারী বৃষ্টিতে জলের তোড়ে ভেঙে গিয়েছে আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটার চরতোর্সা ও পলাশবাড়ির সঞ্জয় ডাইভারশন। ফলে এদিন সকাল থেকে ফের ফালাকাটা-আলিপুরদুয়ার সড়কপথে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে।