মৌসুমী বসাক: ওটিটি, মাল্টিপ্লেক্স, ডলবি সাউন্ড কোয়ালিটির অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যুগে যে বিনোদনে আজও বিন্দুমাত্র টোকা লাগেনি তা হল যাত্রাপালা। কথায় বলে, রথের দড়িতে টান পড়লে নাকি দুগ্গা আসে। তবে শুধু দুগ্গা নয় রথের সঙ্গে সঙ্গে আসে যাত্রাপালার বায়নাও। রথের রশিতে টান পড়ার দিনটাই বাংলার যাত্রা ক্যালেন্ডারের প্রথম দিন। বাংলার গ্রামেগঞ্জে যাত্রাপালার জনপ্রিয়তায় চিড় ধরাতে পারেনি কোনও রকমের হাইটেক বিনোদন। বিশেষ করে এই যাত্রাপালায় আরও জোয়ার এসেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পর থেকে। তাঁর অনুপ্রেরণায় যাত্রাপালা পেয়েছে আলাদা মাহাত্ম্য।
রথ নট্ট কোম্পানিদের কাছে নববর্ষ। এদিন থেকেই শুরু হয় নতুন বায়না পাওয়া। তবে রথযাত্রার দিনকে আনুষ্ঠানিক ভাবে বায়না পাওয়ার প্রথম দিন বলা হলেও সারা বছরই মোটামুটি কমবেশি বায়না আসতে থাকে বলে জানাচ্ছেন সংগ্রামী যাত্রা প্রহরীর প্রধান উপদেষ্টা তথা পশ্চিমবঙ্গ যাত্রা অ্যাকাডেমির অন্যতম সদস্য রুমা দাশগুপ্ত। রুমাদেবী নিজে যেমন একাধারে একজন যাত্রাশিল্পী ঠিক তেমনই তিনি নির্দেশক, সম্পাদক, লেখিকাও। তিনি জানাচ্ছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় ও সাহায্যে যাত্রাশিল্পে কার্যত জোয়ার এসেছে। কোভিড পরিস্থিতি কাটিয়ে এখন তাঁরা যেভাবে বায়না পাচ্ছেন তাতে শো সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। গোটা চিৎপুরে ইতিমধ্যেই ২৫০ পালার বায়না এসে গিয়েছে। এখনও পুজোর আগে অবধি সময় পড়ে রয়েছে। রুমাদেবী বলেন, তাঁর লেখা, নির্দেশিত ও অভিনীত বনপলাশির বাদ্যি ছেলে রীতিমতো সুপার ডুপার হিট করেছে। এছাড়াও বিষাক্ত প্রজাপতি, লাজুক মেয়ের লজ্জা চুরি যাত্রা পালাগুলো ইতিমধ্যেই যথাক্রমে ১৭৪, ১৮৪টি করে পালা করে ফেলেছে। এবার পুজোয় সংগ্রামী যাত্রা প্রহরীর মূল আকর্ষণ শ্যামলা গাঁয়ের পাগলি মেয়ে।
বনেদি বাড়ির দালানের পালাগান যখন বারোয়ারি রূপ নিয়ে নট্ট বা যাত্রাপালার রূপ নিল, বাংলায় তখন সিরাজদৌল্লার নবাবি চলছে। যুগের হাওয়ায় যাত্রাপালা তার রূপ ও চরিত্র বদলে টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে গিয়েছে। মাঝে করোনা পরিস্থিতিতে যাত্রার বাজার খানিকটা অস্তমিত হলেও পশ্চিমবঙ্গ যাত্রা অ্যাকাডেমির সভাপতি অরূপ বিশ্বাস এবং সর্বোপরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার সেই ডুবন্ত তরিকে আবার খরস্রোতা নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছেন।
আরও পড়ুন- মানিকতলায় হারবে বুঝে বিজেপির নোংরা খেলা