প্রতিবছর একুশে জুলাই নতুন নতুন আহ্বান নিয়ে আসে। শহিদ দিবস (Shahid Divas) একটা আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্বে পৌঁছে গিয়েছিলেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোটের নামে রাজ্যে অরাজকতা হচ্ছিল। তাঁর দাবি ছিল ‘নো এপিক, নো ভোট’ বৈধ ভোটার কার্ড বা পরিচয়পত্র ছাড়া কেউ ভোট দিতে পারবে না। অন্য কোনও দাবি নয়। নিজেদের সাংবিধানিক দাবি আদায়ের জন্য কয়েক লক্ষ মানুষ জমায়েত হলেন ধর্মতলায়। নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শাসকরা বড় অসহিষ্ণু। কোনও দাবি শোনার আগে গুলি চলল। এক ডজন তাজা প্রাণের উষ্ণ রক্ত ছড়িয়ে পড়ল কালো পিচের রাস্তায়। নেত্রী হলেন প্রচণ্ড আহত। সেদিনের সে দিনগুলো সূর্য ডোবার পরেই শেষ হয়ে গেল না। একুশে জুলাইয়ের মাহাত্ম্য এখানেই। শহিদের রক্তদানের মধ্যে দিনটি বাংলার মানুষের মনে স্থায়ী হয়ে গেল।
আরও পড়ুন-এবার ইমরানের দল পিটিআই-কে নিষিদ্ধ করতে মাঠে নেমেছে পাক সরকার!
সময় গড়িয়ে গিয়েছে বহুবার। পৃথিবী প্রদক্ষিণ করেছে সূর্য আরও কয়েকবার। সারা দেশে একুশে জুলাইয়ের দাবি ছড়িয়ে পড়েছে। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন একথা জানাতে বাধ্য হয়েছে কোনও এপিক ছাড়া ভোটকেন্দ্রে যাওয়া যাবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি সারা দেশে মান্যতা পেয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূল কংগ্রেস ভোলেনি তার শহিদদের। প্রতিবছর একুশে জুলাই শহিদ পরিবারের সদস্যরা মিলিত হন নেত্রীর বাড়িতে। তারপর সেখান থেকে তারা নেত্রীর সঙ্গে আসেন শহিদ মঞ্চে। ধর্মতলার সমাবেশে। এর কোনও ব্যতিক্রম হয়নি এতদিনে। একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে এবারও তেমন ব্যবস্থা হয়েছে।
প্রতিবার একুশে জুলাই ফিরে আসে নতুন নতুন আহ্বান নিয়ে। এবার যখন একুশে জুলাই ধর্মতলায় শহিদ স্মরণে আসবেন সারা বাংলার কর্মীরা, সারা বাংলার সাধারণ সমর্থকরা— যা আসবেন কেউ কোচবিহার থেকে কেউ আসবেন কাকদ্বীপ থেকে, আবার কেউ আসবেন বাঁকুড়া থেকে তো কেউ আসবেন বারাসত থেকে— লক্ষ পতাকা হাতে নিয়ে আসবেন তাঁরা। দৃঢ়পদে আসবেন, কলকাতার রাস্তা তাঁরা কাঁপাবেন। এ অধিকার তাঁদের আছে। কারণ সদ্য সদ্য লোকসভা নির্বাচন শেষ হয়েছে। এই নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসকে মানুষ দু’হাত ভরে আশীর্বাদ করেছে। সারা বাংলার জাতি ধর্ম নির্বিশেষে মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়েছে। ২০১৯-র চাইতে বেশি আসন পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। প্রধান বিরোধী শক্তি বিজেপি আধডজন আসন কম পেয়েছে। কংগ্রেস শূন্য হতে হতে বেঁচে গিয়েছে। মাত্র এক। বামফ্রন্ট যথারীতি শূন্য। বাংলার অসংখ্য মানুষের আশীর্বাদ না থাকলে এমন ফলাফল হয় না। নেত্রী ঘোষণা করেছিলেন বিজয় উৎসব হবে শহিদদের সম্মান জানিয়ে— একুশে জুলাই। তাই বাংলার বীর সেনানীরা মেদিনী কাঁপিয়ে ধর্মতলায় এসে পৌঁছাবে সেই দিন সব চড়াই ডিঙিয়ে।
আরও পড়ুন-একুশের কাউন্ট-ডাউন শুরু: ঐতিহ্য মেনেই শহিদ দিবসের খুঁটিপুজো, কিছু পরিবর্তন মঞ্চে
একথা আজ না বললে আমাদের শহিদদের প্রতি সম্মান দেখানো হবে না যে নির্বাচনের সময়ে নেত্রী, তৃণমূল কংগ্রেস দল, রাজ্য সরকার সবকে একসঙ্গে করে কুৎসিত বন্যার আবাহন করেছিল প্রধান বিরোধীদল বিজেপি। তাদের সঙ্গে যথারীতি সঙ্গত করছিল বাম-কংগ্রেস নামক একটি নীতিহীন জোট। বাংলার মানুষকে তাদের ঐতিহ্য ভুলিয়ে দিতে চাইছিল। এ রাজ্যের মা-বোনদের লাগাতার অসম্মান করছিল। মিথ্যা অপপ্রচারে ভরে গিয়েছিল সর্বত্র। তার সঙ্গে যোগ দিয়েছিল যারা পুঁজির দাসত্ব করে সেই প্রচার মাধ্যমগুলি। প্রমাণিত হয়েছে বাংলার মানুষের আত্মমর্যাদা কত উঁচু তারে বাঁধা আছে। নিজেদের মানসম্মান তারা নিজেরা রক্ষা করতে পারে না। কোনও অপপ্রচারে কোনও কর্ণপাত না করে তারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর আস্থা রেখেছেন। সেই অস্থার ফল ফলেছে। সুতরাং ২১ জুলাই এক নতুন মাত্রা পেয়েছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। যে স্বপ্ন এঁকে আমাদের বন্ধুরা শহিদ হয়েছিলেন তাঁদের সেই স্বপ্ন নেমে এসেছে বাস্তবের মাটিতে। সেই শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ মিলিত হবে ধর্মতলায়। এবারের বিজয় শহিদ অর্ঘ্য সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
এখানে উল্লেখ করা অনুচিত হবে না যে, এরই মধ্যে ৪টে বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হল। তার মধ্যে ৩টি ছিল বিজেপি’র জেতা আসন। সব আসনে বিজেপি হেরেছে। ৪টে আসনেই তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীরা জিতেছে। এই সময়ে এটাও শহিদ দিবসে জমায়েত হওয়ার দিকে একটা ইতিবাচক দিক। সারা বাংলা জুড়ে তৃণমূল কর্মীরা আরও বেশি উৎসাহিত। ধর্মতলা সেদিন তাদের পদভারে কম্পিত হবে।
আরও পড়ুন-রাজ্যসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাল এবার বিজেপি
পশ্চিমবাংলার প্রতি সীমাহীন বঞ্চনা করে চলেছে বিজেপির কেন্দ্রীয় সরকার। আবাস যোজনার ন্যায্য টাকা পাওয়া যাচ্ছে না, ১০০ দিনের কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বকেয়া টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। সংখ্যালঘু ছেলে/মেয়েদের স্কলারশিপ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল কংগ্রেস এইসব দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে। দিল্লিতে ও কলকাতায় একাধিকবার ধরনা হয়েছে। বিজেপি সরকার কর্ণপাত করছে না। তার ফল বিগত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি কিছুটা পেয়ে গিয়েছে।
মানুষের প্রতি অবিচার করা, ধর্মের ভিত্তিতে মানুষকে ভাগ করার কাজে বিজেপি লিপ্ত ছিল। বারবার আমাদের নেত্রী ও দল এই মনোভাবের বিরোধিতা করেছেন বরাবর। নির্বাচনের সময় এই প্রচারই প্রধান ছিল। বিজেপি প্রচারটিকে কুৎসিত পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল। যার কোনও সীমা ছিল না।
ফলাফল আজ সকলের জানা যে, সারা দেশে বিজেপির আসন কীভাবে কমেছে। সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। জোট সঙ্গীদের নির্ভর করে সরকার চালাতে হচ্ছে। যা প্রধানমন্ত্রীর স্বভাববিরুদ্ধে। আমাদের নেত্রী সেই কারণেই বলছেন এই সরকার বেশি দিনের নয়।
কিন্তু লড়াই থেমে থাকে না। আমাদের বন্ধু যে রাস্তায় চলে শহিদ হয়েছেন, আমাদের নেত্রী যে রাস্তার দিকে আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। আমাদের পথ ধরে আমাদের চলতে হবে। শহিদদের মর্যাদা রক্ষা করা যাবে তাতেই।
সারাদেশে বিজেপির ফলাফলে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। কিন্তু এটা চূড়ান্ত জয় নয়। আমাদের আরও রাস্তা যেতে হবে। সেই জন্যই নেত্রী একুশে জুলাই মঞ্চকে বেছে নিয়েছেন পরবর্তী পদক্ষেপ ঘোষণার জন্য।
তার সঙ্গে পশ্চিমবাংলায় আবার চক্রান্ত গজিয়ে উঠছে। এর পিছনে আছে বিজেপি, বাম, কংগ্রেসের মিলিত জোট। যারা মনুষের প্রত্যাখ্যাত হয়ে তৃণমূল কংগ্রেসকে জনবিছিন্ন করার জন্য নানা রকম নোংরা খেলা খেলতে শুরু করেছে। সব কিছুকে ছাপিয়ে আমাদের মিলিত হতে হবে ধর্মতলার শহিদ মঞ্চে। হাজার হাজার মানুষের জমায়েতই সব কুৎসার জবাব দেবে। নতুন আহ্বান জানাবে একুশে জুলাই। প্রতীক্ষায় আছি।