প্রতিবেদন: নিটের প্রশ্নফাঁসের কারণে বড় পরিসরে যদি তার প্রভাব পড়ে, শুধুমাত্র তখনই আবার পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। অর্থাৎ যদি দেখা যায় যে প্রশ্নপত্র ফাঁসের জন্য গোটা পরীক্ষাটাই প্রভাবিত হয়েছে, তা হলেই নিট-ইউজি ২০২৪ পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। গোটা পরীক্ষাই অস্বচ্ছ ছিল, এটা নিশ্চিত করতে হবে। বৃহস্পতিবার স্পষ্টভাষায় একথা জানিয়ে দিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ৩ বিচারপতির বেঞ্চে পুনরায় নিট পরীক্ষার দাবিতে জমা পড়েছিল অন্তত ৪০টি আবেদন। এই প্রসঙ্গেই ৩ বিচারপতির বেঞ্চের এই পর্যবেক্ষণ।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
এদিনই প্রধান বিচারপতি এনটিএ-কে নির্দেশ দিয়েছেন, ডাক্তারির স্নাতকস্তরের সর্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষার কেন্দ্রভিত্তিক ফল প্রকাশ করতে হবে শনিবারই। প্রশ্নফাঁস-সহ নানা অনিয়মের অভিযোগে বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা ‘নিট ইউজি ২০২৪’ নিয়ে বৃহস্পতিবার শুনানি ছিল সুপ্রিম কোর্টে। শুনানি চলাকালীন প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেন, প্রশ্নফাঁস যে হয়েছে সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু যা বোঝা যাচ্ছে, এই ঘটনা কয়েকটি কেন্দ্রে সীমাবদ্ধ। সর্বত্র হয়নি। তাই পরীক্ষা বাতিল করার প্রশ্নই ওঠে না। তবে তদন্ত চলবে। একই সঙ্গে লক্ষ লক্ষ নিট পরীক্ষার্থীর ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে দ্রুত নিটের ফল প্রকাশেরও নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি নির্দেশ দেন, শনিবার অর্থাৎ ২০ জুলাই দুপুর ১২টার মধ্যে ওয়েবসাইটে রেজাল্ট আপলোড করতে হবে।
আরও পড়ুন-দোষ কার ? দায়ী কে ? নির্লজ্জ বিজেপি জবাব দাও
বৃহস্পতিবার শীর্ষ আদালতের নির্দেশ, যেহেতু সমস্ত পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রশ্নফাঁসের সমস্যা হয়নি, তাই নিটের ফল প্রকাশ করা হবে আলাদা ভাবে প্রতিটি কেন্দ্র ধরে ধরে। শুধু তা-ই নয়, যেহেতু নিট মামলার তদন্ত এখনও চলছে, তাই পরীক্ষার্থীদের নাম বা রোল নম্বর কোনওটিই প্রকাশ করা হবে না। অর্থাৎ পরীক্ষার্থীর পরিচয় গোপন রেখে ফল প্রকাশ করা হবে নিটের। তবে নিটের ফল প্রকাশ নিয়ে নির্দেশ দিলেও পরীক্ষার্থীদের কাউন্সেলিং নিয়ে বৃহস্পতিবার কোনও নির্দেশ দেয়নি আদালত। আগামী সোমবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
এনটিএ-কে এর আগে ১১ জুলাই সুপ্রিম কোর্টে নিট মামলার শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। তার আগে ১০ জুলাই গভীর রাতে সুপ্রিম কোর্টে নিট পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস নিয়ে একটি হলফনামা পেশ করে এনটিএ। সেই হলফনামায় এনটিএ দাবি করেছিল, নিট পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ সত্যি নয়।
গত ৫ মে নিট ইউজি পরীক্ষা হয়। ফল প্রকাশের পরে দেখা যায়, প্রথম স্থান অধিকার করেছেন ৬৭ জন। এরপর থেকে এই প্রবেশিকা পরীক্ষা নিয়ে উঠেছে বিস্তর অভিযোগ। পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের অভিযোগের পাশাপাশি অনেককে গ্রেস মার্কস দেওয়ারও অভিযোগ তোলেন পরীক্ষার্থীরা। পরে গ্রেস মার্কস দেওয়ার ব্যাপারটি স্বীকার করে নেয় পরীক্ষার নিয়ামক সংস্থা ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি। তবে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ মানতে চায়নি তারা। ফের পরীক্ষার দাবিতে মামলাকারীদের তরফে এদিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন প্রবীণ আইনজীবী নরেন্দ্র হুডা। প্রধান বিচারপতি তাঁকে বলেন, এমন কোনও প্রমাণ থাকতে হবে যা থেকে বোঝা যাবে, প্রশ্নফাঁসের জন্য পুরো পরীক্ষাই প্রভাবিত হয়েছে।
আরও পড়ুন-ফর্মে থাকা হরমনদের সামনে আজ পাকিস্তান
শুনানির শুরুতেই এদিন প্রধান বিচারপতি মামলাকারীদের আইনজীবীর থেকে জানতে চান, সরকারি ও বেসরকারি কলেজ মিলিয়ে কতজন ডাক্তারিতে ভর্তি হতে পারেন। তাতে হুডা জানান, যদি ফের পরীক্ষা নেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে গতবার যে ২৩ লক্ষ পরীক্ষা দিয়েছিলেন, তাঁরা আবার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবেন। কিন্তু সেই যুক্তি মানতে চাইছে না শীর্ষ আদালত। প্রধান বিচারপতি স্পষ্ট জানিয়েছেন, পরীক্ষার্থীরা আবার পরীক্ষায় বসতে চাইছেন, শুধুমাত্র এই কারণে পুনরায় পরীক্ষার নির্দেশ দেওয়া যেতে পারে না। পরীক্ষা ব্যবস্থায় সামগ্রিকভাবে প্রভাব পড়ার কোনও প্রমাণ মিললে, একমাত্র সেক্ষেত্রেই তা হতে পারে।
এদিকে নিট-ইউজির প্রশ্নফাঁস-কাণ্ডে পাটনার এইমস থেকে ৪ জন স্নাতকস্তরের পড়ুয়াকে আটক করেছে সিবিআই। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।