প্রতিবেদন: সংরক্ষণ বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তোলপাড় বাংলাদেশ (Bangladesh)। আন্দোলন দমনে সংঘর্ষ ও মৃত্যুমিছিল। দাবি ও পাল্টা দাবি ঘিরে উত্তাল বাংলাদেশের (Bangladesh) রাজনীতি। কিন্তু এই সংরক্ষণের আসল বিষয়টা কী? কবে থেকে চালু হয়েছে এই কোটা? কেন বিক্ষোভকারীরা এর সংশোধন চান? একনজরে দেখে নেওয়া যাক বিষয়টি।
ঘটনা হল আজ নয়, এই সংরক্ষণের শুরু ১৯৭২ সালে। যার মোদ্দা কথা, মুক্তিযোদ্ধা এবং তাঁদের সন্তানসন্ততিদের জন্য চাকরিতে বিশেষ সংরক্ষণ। এর সুবিধা পান মহিলারা, সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধীরা। সংরক্ষণের সুবিধা রয়েছে বিভিন্ন জেলার বাসিন্দাদের জন্যও। কিন্তু দেখা যাচ্ছে ৫৬ শতাংশ আসনই চলে গিয়েছে সংরক্ষণের আওতায়। সাধারণের জন্য পড়ে থাকছে মাত্র ৪৪ শতাংশ। এর মধ্যেই মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের ব্যবস্থা। আন্দোলনকারীদের উদ্বেগ এবং প্রতিবাদ ঠিক এই জায়টাতেই। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়, বারবারই বিভিন্ন জমানায় সংশোধিত হয়েছে এই কোটা-ব্যবস্থা।
১৯৭২-এর মুজিব জমানার পরে ১৯৭৬-এ প্রথম সংশোধিত হয় এই কোটা-ব্যবস্থা। বৃদ্ধি করা হয় মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ।
১৯৮৫ তে সংরক্ষণের আওতায় নিয়ে আসা হয় পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠী বা জনজাতিদের।
১৯৯৭ তে মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি সংরক্ষণের আওতায় আসেন মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরাও।
২০০২-এ বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দ কোটায় উপযুক্ত প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেখানে নিয়োগ হবে মেধার ভিত্তিতে।
২০০৮-এ ক্ষমতায় এসে আওয়ামি লিগ সেই নির্দেশ বাতিল করে বলে, মুক্তিযোদ্ধাদের কোটায় উপযুক্ত লোক না পাওয়া গেলে তা খালি রাখতে হবে।
আরও পড়ুন-বিচারকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার দাবি সুখেন্দুর
২০১১ তে কোটায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিদেরও।
২০১২ তে এই সুযোগের আওতায় আনা হয় প্রতিবন্ধীদের।
২০১৮ তে আন্দোলনের চাপে পড়ে সবরকমের সংরক্ষণ বাতিল করে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাখা হয় শুধু জনজাতি এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য যথাক্রমে ৫ এবং ১ শতাংশ।
২০২১-এ এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে যান মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকজন সন্তান। হাইকোর্ট তাঁদের পক্ষে রায় দিলে আবার চালু হয় সংরক্ষণ ব্যবস্থা। কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন হাসিনা। এরই মধ্যে শুরু হয়ে যায় সংরক্ষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন। প্রায় দেড়শো মানুষের মৃত্যুর পর দেশের সার্বিক পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ার মুখর শেষপর্যন্ত রবিবার সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করে দিয়েছে হাইকোর্টের সেই নির্দেশ। জানিয়ে দিয়েছে, সরকারি চাকরিতে ৯৩ শতাংশ নিয়োগই হবে সাধারণ ক্যাটেগরি থেকে, পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে। সংরক্ষণের আওতায় থাকবে কেবলমাত্র ৭ শতাংশ। এরমধ্যে ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরাধিকারীদের জন্য, ১ শতাংশ জনজাতিভুক্তদের জন্য এবং বাকি ১ শতাংশ সংরক্ষিত থাকবে প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের আবেদনকারীদের জন্য। অর্থাৎ সংরক্ষণের নয়া সমাধানসূত্র সামনে এনেছে শীর্ষ আদালত। যদিও এখনও আন্দোলনকারীদের একাংশ এই ফরমুলাতেও অনড় মনোভাব দেখাচ্ছে।