মণীশ কীর্তনিয়া: সব তীর্থ বারবার গঙ্গাসাগর একবার। এই প্রবাদবাক্য অনেকদিনই অতীত হয়েছে। এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঐকান্তিক চেষ্টায় মুড়িগঙ্গার ওপর পূর্ণাঙ্গ সেতুর স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। তিনি কথা দিয়েছিলেন তাঁর সরকারই এই সেতু তৈরি করবে। ঘোষণাও করেছিলেন। এবার তা বাস্তবে রূপ দেওয়ার পালা। সম্প্রতি জমা পড়েছে ‘গঙ্গাসাগর সেতু’ নির্মাণের ডিপিআর। দ্রুতগতিতে সেতু (Gangasagar Setu) তৈরিতে হাত দিতে চায় রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে কাকদ্বীপের লট ৮ থেকে কচুবেড়িয়া পর্যন্ত মোট ৪.৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু তৈরির কাজে ঝাঁপিয়েছে রাজ্য সরকার। এই সেতু তৈরি হলে সাগরের মানুষ তো বটেই, গোটা রাজ্য-দেশ এমনকী পৃথিবীর নানা প্রান্তের পুণ্যার্থীদের যাতায়াতে সুবিধা হবে। লট আট থেকে ভেসেলে নয়, সরাসরি গাড়ি নিয়ে পৌঁছনো যাবে সাগরে। প্রতিবছর মকরসংক্রান্তির স্নানের কারণে লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী আসেন সাগরে। চলে কপিলমুনির মন্দির দর্শন ও পুজো। সঙ্গে বাড়তি পাওনা সাগর মেলা, যা কোনও অংশেই কুম্ভমেলা থেকে কম নয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দীর্ঘদিন ধরেই গঙ্গাসাগর মেলাকে জাতীয় মেলার তকমা দেওয়ার জন্য দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি।
মুড়িগঙ্গার উপর এই সেতুর (Gangasagar Setu) কাজ শুরু হওয়ার তিন বছরের মধ্যে শেষ করা হবে। সব মিলিয়ে খরচ পড়বে প্রায় ১৩০০ কোটি টাকা, যার পুরোটাই দেবে রাজ্য সরকার। ইতিমধ্যেই প্রথম পর্যায়ে কাজের জন্য ২০২৪-’২৫ অর্থবর্ষের ২০০ কোটি টাকা দিয়ে দিয়েছে রাজ্য। এই মুহূর্তে গঙ্গাসাগর সেতু নির্মাণের জন্য লট ৮-এর দিকে এবং মুড়িগঙ্গার ওপাড়ে কচুবেড়িয়া অঞ্চলে চলছে জমি অধিগ্রহণের কাজ। ইতিমধ্যেই প্রায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ জমি অধিগ্রহণের কাজ হয়ে গিয়েছে। সকলেই স্বেচ্ছায় জমি দিয়েছেন। কেননা, এই সেতু তৈরি হলে বদলে যাবে গঙ্গাসাগর-সহ সংলগ্ন অঞ্চলের চালচিত্র। বদলাবে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক মানচিত্র। জমি অধিগ্রহণের জন্য রাজ্য সরকারের বাড়তি খরচ হচ্ছে ১৬ কোটি টাকা। রাইটসকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সমীক্ষা করে সবদিক খতিয়ে দেখে রাজ্যকে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দেওয়া। সেতু তৈরির কাজটি পূর্ত দফতরের তত্ত্বাবধানে হচ্ছে। মন্ত্রী পুলক রায় এখনই এই বিষয়ে বিস্তারিত বলতে নারাজ। রাইটস যে ডিপিআর জমা দিয়েছে, সেখানে সেতুর নকশা, সয়েল টেস্ট রিপোর্ট, কতগুলি লেন (৪ লেন)— সবটাই রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে সেতুর নির্মাণকাজে নামা হচ্ছে। ডিপিআর-এর বিষয়টি সবিস্তারে জানানো হবে মুখ্যমন্ত্রীকেও। সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা জানালেন, পুলক রায় তাঁকে সেতুর নকশা-সহ অন্যান্য বিষয় বিস্তারে জানাবেন। মন্ত্রীর কথায়, এই সেতু তৈরি হলে তা হবে এক যুগান্তকারী একটা কাজ। বহু বছর ধরে বলার পরেও কেন্দ্রীয় সরকার যে কাজ করল না, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে আমাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। এ এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণ।
আরও পড়ুন- আজ বসছেন মুখ্যমন্ত্রী, বৈঠকের দিকেই তাকিয়ে রয়েছে ফোরাম ফর দুর্গোৎসব