মঙ্গলবার, নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে পুলিশ-প্রশাসন, পুজো কমিটি ও সব ধর্মের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। সামনের বছরের অনুদানও জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। গতবারের তুলনায় দুর্গাপুজোর সরকারি অনুদান বাড়ল। এই বছরে ৭০ হাজার থেকে বাড়িয়ে করা হল ৮৫হাজার টাকা। তিনি বললেন, আগামী বছর ১লক্ষ টাকা করে অনুদান দেওয়া হবে। একই সঙ্গে ফায়ার লাইসেন্স-সহ অন্যান্য ফি মকুব করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিলেও ছাড় বাড়ি ৭৫ করা হয়েছে। এবার পুজো কার্নিভাল ১৫ অক্টোবর।
আরও পড়ুন-গরিব বিরোধী-জনবিরোধী বাজেট: মুখ্যমন্ত্রী
পুজোয় পুলিশের ২৪ঘণ্টা কন্ট্রোল রুম খোলা থাকবে। পুলিশ কন্ট্রোল রুমের পাশাপাশি স্টেট কন্ট্রোল রুম, জেলা কন্ট্রোল রুম এমনকী পুজো কমিটির কন্ট্রোল রুম খোলার নির্দেশ দেন মমতা। তিনি জানান, মণ্ডপের বাইরে পাব্লিক অ্যানাউন্সমেন্ট সিস্টেম রাখতে হবে। ওয়ান উইন্ডো অনলাইন সিস্টেম চালু রাখতে হবে।
একই সঙ্গে পুজো কমিটিগুলিকে সতর্ক করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, এখানে সুজিত বোস আছে। ওর শ্রীভূমির পুজোর জন্য এয়ারপোর্ট যাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে অবস্থা হয়। কোনও পুজোর জন্য যেন সাধারণ মানুষের অসুবিধা না হয়, পদপিষ্ট হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা না হয়, সেদিকে কড়া নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন-বাজেটেও বঞ্চিত বাংলা! বৈষম্যের জবাব দেবে মানুষ, তোপ দাগলেন অভিষেক
২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পরেই দুর্গাপুজো কমিটিগুলিকে আর্থিক অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথম বছর ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছিল ক্লাবগুলিকে। কোভিডকালে এক ধাক্কায় অনুদানের অঙ্ক দ্বিগুণ করে দেওয়া হয়। ২০২২ ও ২০২৩ সালে ১০ হাজার টাকা করে অনুদান বাড়ে। গত বছর ৭০ হাজার টাকা করে অনুদান পায় পুজো কমিটিগুলি। সেই সঙ্গে মেলে বিদ্যুৎ বিলে ৬৬.৬৬ শতাংশ ছাড়। এবার সেই ছাড়ও বাড়ানো হল।
দুর্গাপুজো শেষের পরে বিসর্জনের কার্নিভালও চালু করেছেন মমতা। তিনি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চালু হয়েছে রেডরোডের বর্ণাঢ্য কার্নিভাল। এবার বিসর্জনের কার্নিভাল হবে ১৫ অক্টোবর। কারণ ১৬ অক্টোবর লক্ষ্মীপুজো। তার আগের দিন হবে কার্নিভাল।
তিনি বলেন, ”ক্লাবগুলো বলব মহিলাদের ভলেন্টিয়ার্স করুন। ভাল কাজ করে। ছোট ছোট পড়ুয়াদের কাজে লাগান। ওরা চেষ্টা করেন অতিথিদের নিয়ে যাওয়ার। তবে অতিথিদের জন্য বিশেষ আয়োজন করা মানে সাধারণকে আটকে দেওয়া নয়। আমি ভিআইপি কার্ডের বিরুদ্ধে। যাঁরা ভিআইপি তাঁরা গাড়ি হাকিয়ে চলে যাবেন। আর সাধারণ মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়াবেন আমি পক্ষে নই। ভিআইপিরা চেষ্টা করব পিছনে থেকে সহায়তা করার। এত ভিড়ে ভিআইপি যাতায়াত করলে সাধারণ মানুষের যাতায়াতে অসুবিধা হয়। লক্ষ রাখতে হবে কোনও রকম পদপিষ্টের ঘটনা যাতে না ঘটে। বড় বড় ক্লাবের পুজোয় পুলিশকে নজর দিতে হবে। পাশাপাশি ক্লাবের ভলান্টিয়রর্সদের নজর রাখতে হবে। এখন তো মহালয়া থেকেই পুজোর উদ্বোধন শুরু হয়। এর জন্য আমিই দায়ী। আমারই দোষ। মহালয়ার আগের দিন থেকেই উদ্বোধন শুরু করে দিই। তাই মানুষজনও ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে পড়েন। পুজো সবাই ভালবাসে। প্রচুর পুজো হয়। দুর্গাপুজোর সংখ্যা বেড়েছে অনেক। বাংলায় প্রায় ৪৩ হাজারের বেশি দুর্গাপুজো ক্লাবগুলি করে। পুজো এবার আগে এসেছে। আগাম সিদ্ধান্ত নিলে অঘটন ঘটবে না। প্রশাসন সহায়তা করবে।”
আরও পড়ুন-সর্বসম্মতিক্রমে শপথ পাঠ নিব নির্বাচিত বিধায়কদের! বললেন মুখ্যমন্ত্রী, তীব্র আক্রমণ রাজ্যপালকে
পুলিশ ও ক্লাবগুলিকে এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ”কলকাতা পুলিশ ও রাজ্য পুলিশের মধ্যে সম্বন্বয় রক্ষা করতে হবে। কোনও রকম ট্রাফিক মুভমেন্টে অসুবিধা না হয়। এখন জেলাগুলোও টক্কর দিচ্ছে। জেলার পুজো দেখতে গেলে ভাবতে হবে ওরা এত সুন্দর পুজো করছে। আমি ওই সময় কলকাতা পুজোর পাশাপাশি জেলার পুজোগুলি লক্ষ রাখি। এতে আমারও জ্ঞান বাড়ে। ক্লাবগুলিকে বলব কোন পুজোর কী থিম পুলিশকে শেয়ার করুন। আমি এক সংবাদপত্রে দেখেছি কেউ নাকি ১১২ ফুটের দুর্গাপুজো করছে। ভাবতে পারেন? এতে পদপিষ্ট হয়ে যাবে। আমি লাইটিং, লেজারের খেলা করলাম। আরে প্লেনের দুর্ঘটনা হতে পারে। অন্য মানুষের ক্ষতি হতে পারে। তবে পদপিষ্টের ঘটনা যাতে না ঘটে।”