প্রতিবেদন : বলতে না দেওয়ায় নীতি আয়োগের (Mamata Banerjee- Niti Aayog) বৈঠক বয়কট করলেন ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রচণ্ড রেগে বৈঠকের মাঝেই বেরিয়ে আসেন তিনি। শনিবার রাজধানী-সহ গোটা দেশ আরও একবার দেখল কীভাবে বাংলার বঞ্চনার বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন তাঁদের পাহারাদার। জাতীয় পর্যায়ের বৈঠকে বুঝিয়ে দিলেন কোনও অবস্থাতেই বাংলার অপমান সহ্য করবেন না তিনি। দিল্লিতে সংবাদমাধ্যমের সামনে ক্ষোভ উগরে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিরোধীদের মধ্যে একমাত্র আমিই বৈঠকে হাজির ছিলাম। কিন্তু বলতে দেওয়া হল না। আমি আরও কিছু বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে পাঁচ মিনিটও বলতে দেওয়া হয়নি। মাইক বন্ধ করে আমাকে অপমান করা হয়েছে। বয়কট করে ঠিক করেছি। তাঁর সংযোজন, ছত্তিশগড়, গোয়ার মুখ্যমন্ত্রীকে বলার সময় কোনও বাধা দেওয়া হয়নি। এঁরা দশ-পনেরো মিনিট করে সময় পেয়েছেন। চন্দ্রবাবু নাইডুকে তো ২০ মিনিট বলতে দেওয়া হয়েছে! আমার সময় বারবার বাটন টেপা হয়েছে। এদিন, বৈঠক থেকে ওয়াক আউট করে বেরিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, এটা অপমানজনক। জেনে বুঝে ইচ্ছে করে করা হয়েছে। এখন শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছে। প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি বৈষম্য করা উচিত নয়। আমাকে বাধা দেওয়া মানে সব আঞ্চলিক দলের অপমান। ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আর কোনওদিন বৈঠকে অংশ নেবেন না। আজই কলকাতায় ফিরে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কলকাতা বিমানবন্দরে নেমে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাশে নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে আরও এক দফা ক্ষোভ উগরে দেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা মনে করি যে কো-অপারেটিভ ফেডারেলিজম যদি রক্ষা করতে হয় তাহলে সেন্ট্রালের সাথে স্টেটের ডেভলপমেন্টের ব্যাপারে এবং শেয়ারের ক্ষেত্রে সেন্ট্রাল স্টেট থেকে যে টাকাটা তুলে নিয়ে যায় সেই টাকাটা স্টেটের শেয়ার যেন স্টেট ফেরত পায়। এবং ডেভেলপমেন্টের টাকাটা কোনও পলিটিক্যাল বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কাজ না করে সবার জন্য সবার উন্নয়নের জন্য কাজ করা উচিত। কেউ যায়নি। বয়কট করেছিল। আমি ভেবেছিলাম আমি গিয়ে সবার কথা বলব। আমি ওই দু-তিন মিনিটে যা পেরেছি তাই বলেছি। বাংলার বঞ্চনা এবং সারা দেশের অল অপজিশন স্টেটকে যেভাবে বাজেটে বঞ্চনা করা হয়েছে এবং অল বিজেপি রুলড স্টেটকে যেভাবে কনসিডার করা হয়েছে এবং যারা ওদের অ্যালায়েন্স, আমাদের আপত্তি নেই কাউকে যদি বেশি টাকা দেয়। কিন্তু কাউকে দেব বলে, কেউ খাবে আর কেউ খাবে না এমনটা তো হতে পারে না। বাংলাকে তো তারপরে আমি সারা ভারতবর্ষের সমস্ত রাজ্যের ব্যাপারে বলে আমি এটাও বলেছি, আপনারা তো শুধু নির্দেশ দেন, ছবি লাগান, কাজ তো করতে হয় রাজ্যগুলোকে। এত বড় একটা কোভিডকে সামলাল রাজ্য। আপনারা নির্দেশ দিয়ে খালাস। ফিল্ডে কাজটা করতে হয় রাজ্যকে। আজকে যেখানেই যে ঘটনা ঘটুক না কেন যে কোনও সাবজেক্টে সবটাই সামলাতে হয় রাজ্যকে। তো রাজ্যগুলোকে আপনারা যদি পঙ্গু করে দেন তাহলে কেন্দ্রও তো আগামী দিনে পঙ্গু হয়ে যাবে। বাংলার বঞ্চনার কথা বলেছি যে, আমাদের ১ লক্ষ ৭১ হাজার কোটি টাকা পেন্ডিং আছে এবং এই বছরেই টাকাটা আরও বাড়বে। এ বছরটা ক্যালকুলেশন করা হয়নি। ফুড সাবসিডি বন্ধ। ১০০ দিনের কাজের টাকা বন্ধ। কাজও বন্ধ। গ্রামীণ আবাস যোজনার কাজও বন্ধ। আপনারা তো দেখলেন ইলেকশনের সময় এভাবে পাবলিসিটি করেছে— তিন কোটি বাড়ি করে দেব, চার কোটি বাড়ি করে দেব— আমি এত করেছি— সব মিথ্যা কথা।
এদিন উত্তরবঙ্গে বন্যানিয়ন্ত্রণ নিয়ে ইন্দো ভুটান কমিশন নিয়েও লিখিতভাবে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিস্তার জল দিয়ে দিলে বাংলা কতটা সঙ্কটে পড়বে জানিয়েছেন সেকথাও।
আরও পড়ুন- নজিরবিহীন নিরাপত্তায় গ্যাংস্টার সুবোধ সিংকে নিয়ে বারাকপুরে
হরিশ রাওয়াত : বাজেটে মাত্র দুটি রাজ্যকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। স্পষ্টতই বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীরা মুখ বন্ধ রাখবে। বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীরা প্রতিবাদ জানাতে পারেন। কিন্তু বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে, সেটা দেখে মনে হচ্ছে মিটিংয়ে না যাওয়াটাই সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল।
এম কে স্ট্যালিন : একজন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কি এমন আচরণ করা যায়? কেন্দ্রীয় সরকারকে বুঝতে হবে, বিরোধী দলগুলি আমাদের গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাঁদের চুপ করিয়ে রাখার জন্য শত্রু হিসাবে গণ্য করা উচিত নয়। গণতন্ত্র বজায় রাখতে বিরোধীদের বক্তব্য ও কণ্ঠের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো উচিত।