প্রতিবেদন: শুনতে অবাক লাগলেও এটাই বাস্তব। জীববৈচিত্র্য নষ্ট হওয়ায় রোগ বাড়ছে, বাড়ছে মৃত্যুও। মৃত পশুর দেহাবশেষ খেয়ে বেঁচে থাকা শকুন কমে যাওয়ায় প্রাণঘাতী ব্যাকটিরিয়া ও নানা সংক্রমণ বাড়ছে। এর ফলে গত পাঁচ বছরে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে ভারতে।
আরও পড়ুন-স্বাস্থ্য দফতরের কড়া নির্দেশ চলবে ডেঙ্গি-বিরোধী অভিযান
সম্প্রতি এই সংক্রান্ত একটি গবেষণা প্রতিবেদন আমেরিকান ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশন সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, একসময় ভারতে বিপুলসংখ্যক শকুন দেখা যেত। আবর্জনার স্তূপের উপর ও মৃত প্রাণীর সন্ধানে ওড়াওড়ি করত বিশেষ শ্রেণির এই পাখি। কিন্তু দুই দশকের বেশি আগে থেকে ভারতে প্রচুর সংখ্যক শকুন মারা যেতে থাকে। এর কারণ ছিল অসুস্থ গরুর চিকিৎসায় একধরনের ওষুধের ব্যবহার। ১৯৯০–এর দশকের মাঝামাঝি ভারতে শকুনের সংখ্যা ছিল পাঁচ কোটি। তখন থেকেই আবার গবাদিপশুর চিকিৎসায় সস্তা নন–স্টেরয়েডাল ব্যথানাশক ‘ডাইক্লোফেনাক’–এর ব্যবহার শুরু হয়। এতে বিপুলসংখ্যক শকুন কমতে কমতে এসে দাঁড়ায় একরকম শূন্যের কোঠায়। ওই ওষুধে চিকিৎসা করা পশুর মৃতদেহ খেয়ে অসুস্থ হওয়ার পর শকুনগুলি মারা যেতে থাকে। এই ঘটনায় ২০০৬ সালে গবাদিপশুর চিকিৎসায় ডাইক্লোফেনাকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে সরকার। ফলে কিছু এলাকায় শকুন হ্রাস পাওয়ার প্রবণতা কমে। তবে স্টেট অব ইন্ডিয়া’স বার্ডসের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দীর্ঘ মেয়াদে শকুনের অন্তত তিনটি প্রজাতির ৯১ থেকে ৯৮ শতাংশ এ ওষুধের পরোক্ষ বিষক্রিয়ার শিকার হয়।
আরও পড়ুন-অসাধু প্রোমোটারদের শায়েস্তা করতে বদল হবে বিল্ডিং আইনে
প্রসঙ্গত, ডাইক্লোফেনাকের ব্যবহার শুধু শকুন কমে যাওয়ার মধ্যে সীমিত থাকেনি। আলোচ্য গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, মৃত পশুর দেহাবশেষ খেয়ে বেঁচে থাকা এই পাখি কমে যাওয়ায় প্রাণঘাতী ব্যাকটেরিয়া ও নানা সংক্রমণ বেড়ে যায়। গবেষণার সহ-রচয়িতা ও ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর হ্যারিস স্কুল অব পাবলিক পলিসির সহকারী অধ্যাপক ইয়েল ফ্রাঙ্ক বলেন, শকুনকে প্রকৃতির পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে ধরা হয়। কারণ, পরিবেশ থেকে নানা ক্ষতিকর উপাদান ও মৃত পশুর ব্যাকটেরিয়াবাহী দেহাবশেষ অপসারণে এরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শকুন না থাকলে ছড়িয়ে পড়তে পারে অনেক কঠিন রোগ। বাস্তবে গত কয়েক বছর ধরে ভারতে সেটাই ঘটছে।