সোমবার, সকালে অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের (Prasenjit Chatterjee) বাড়ি ‘উৎসব’-এ বৈঠকের পরে জানালেন পরিচালকরা। এদিনই বিকেলে নিজেদের মধ্যে বৈঠক করবেন টেকনিশিয়নরা। সেই বৈঠকের সিদ্ধান্তের উপরই বিষয়টি নির্ভর করছে। এমন কথাই জানালেন পরিচালক গৌতম ঘোষ (Goutam Ghosh), রাজ চক্রবর্তী (Raj Chakraborty), শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়রা। প্রসেনজিতের মতে, এখানে কোনও ডিরেক্টর-টেকনিশিয়ন ভাগ নেই। বিষয়টি মান-অভিমানের পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। তবে, গৌতম ঘোষদের মতে, অনেক পুরনো নিয়ম জারি রয়েছে। সময়ের সঙ্গে সেই নয়মের পরিবর্তন প্রয়োজন। টালিগঞ্জে কাজের পরিধি বাড়ুক চাইছেন সবাই।
আরও পড়ুন-কাপলিং ছিঁড়ে নিমেষে দুই খণ্ড ক্রান্তি এক্সপ্রেস
পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়ের উপর নিষেধাজ্ঞা ইস্যুতে সোমবার সকাল থেকে শুটিং বন্ধ টলি পাড়ায়। রবিবার রাতে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ডিরেক্টর্স অ্য়াসোসিয়েশন অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া মোশান পিকচার্স জানিয়েছিল, সোমবার থেকেই অনির্দিষ্ট কর্মবিরতি করবেন পরিচালকরা। এদিন সকাল থেকেই থমথমে টেকনিশিয়ান স্টুডিও থেকে দাশানি স্টুডিও। এই পরিস্থিতিতে এদিন বেলা গড়াতেই প্রসেনজিতের বাড়ি ‘উৎসব’-এ একে একে জড়ো হন গৌতম ঘোষ, সুদেষ্ণা রায়, রাজ চক্রবর্তী, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, সুব্রত সেন, হরনাথ চক্রবর্তী, অরিন্দম শীল, বীরসা দাশগুপ্ত, অভিজিৎ সেন-সহ টলিউডের পরিচালকরা। বেশ কয়েকঘণ্টা আলোচনার পরে বেরিয়ে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে গৌতম ঘোষ জানান, কাজ বন্ধ হোক আমরা কেউ চাই না। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুরু সরকারি ভাবে নয়, ব্যক্তিগতভাবে টলিউডকে সাহায্য করেন। তিনিও চান কাজ সুষ্ঠুভাবে চলুক। এখানে একপক্ষের সিদ্ধান্তে কিছু হবে না সবাইকেই সদার্থক চিন্তা করতে হবে।
আরও পড়ুন-বিজেপির বাংলা ভাগের চক্রান্ত ভোটের পরেই! বিধানসভায় ক্ষোভ প্রকাশ মুখ্যমন্ত্রীর
প্রসেনজিৎ জানান, বিষয়টি এখন একটা মান-সম্মান-অভিমানের জায়গায় চলে এসেছেন। বহু বছর থেকে একটা নিয়ম চলছে। সময়ের সঙ্গে সেই নিয়মের পরিবর্তন প্রয়োজন। সেই বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিতে হবে। টলিউডের বুম্বাদা বলেন, “আমরা একটি পরিবারের মতো। আমরা সারা জীবন টেকনিশিয়ানদের জন্য লড়াই করেছি। এটা মান-সম্মানের লড়াই। একটা পরিবারে অভাব-অভিযোগ থাকবে। তাই বলে পরিবার ভেঙে যায় না। আমরা চাই কাজটা চলুক। একটা ছবির পিছনে প্রচুর মাথা কাজ করে। তাঁদের সব পরিশ্রম বন্ধ হয়ে গেল। আমি এখনও বুঝতে পারছি না বিরোধীতা কোথায়। আমি একদিনে অনেকটা খেয়ে পেট খারাপ করব নাকি অল্প অল্প করে খাব সেটা ভাবতে হবে। আামাদের টেকনিশিয়ানদের দক্ষতা দেশের অন্য জায়গায় তুলনায় অনেক ভাল। আজকে এই জায়গাটা তৈরি হলেও নিজেদের বৃদ্ধির দিকে নজর দেব না। একজন পরিচালক সেটে যাওয়া মানে উঠে দাঁড়াই। একজন পরিচালকদের সম্মান দেওয়া আমাদের কাজ। পরিচালকের আসনটা খুব সম্মানের। আমরা সবাই আবেগতাড়িত তবে ঘটনাটা একদিকের নয় অনেক দিন ধরে এটা জমতে জমতে এই আকার ধারণ করেছে। প্রত্যেকের যোগ্য সম্মান চাই। আমরা এখানে সদার্থক আলোচনা করছি।“
শিবপ্রসাদ জানান, রাহুলের ঘটনায় এটা সামনে এলেও, কিছু সমস্যা দীর্ঘদিনের। টলিপাড়া নিয়মের বেড়াজালে কাজ কমছে বলে অভিযোগ শিবপ্রসাদের। তিনিও চান দ্রুত সমস্যা মিটে মঙ্গলবার থেকেই যেন কাজ শুরু হয়। তিনি বলেন, মনে রাখবেন আমরাও কিন্তু টেকনিশিয়ন।
রাজ চক্রবর্তী বলেন, ইগোর লড়াই ছাড়তে হবে। কে কতটা শাস্তি পেল, কাকে কতটা শাস্তি দেওয়া হল- এই সব বাদ দিয়ে কাজ শুরু করা উচিৎ। কীভাবে টলিউডের ব্যপ্তি আরও বাড়ে সেই দিকেই নজর দিতে হবে। এদিনই রাত আটটায় ফের সাংবাদিক বৈঠক করবেন বলে জানান রাজ।
ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী বলেন, “পরিচালকদের সঙ্গে টেকনিশিয়ানদের যে কোনও সংঘাত আছে সেটা কিন্তু ভুল ধারণা। রাহুলের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এটা হয়তো তৈরি হয়েছে। এই ধরনের নিয়মের বেড়াজালে ক্রমশ ঘিরে ফেলা হচ্ছে, কাজের পরিসর সঙ্কুচিত হচ্ছে। টালিগঞ্জে কাজের পরিমাণ কমে গিয়েছে। পাশাপাশি বিনিয়োগ কমেছে। আমাদের লড়াই টেকিনিশিয়ানদের বিরুদ্ধে নয়। রাজ্য সরকারের কাছে এই পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করার আবেদন জানাই।“