প্রতিবেদন : আগামী এক বছরের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের পতন হবে। শুধু তাই নয়, আগামী সাত রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনেও গোহারা হারবে বিজেপি। বুধবার দিল্লিতে বাংলা সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপচারিতায় স্পষ্ট বলে দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, যাদের উপর নির্ভর করে সরকার চলছে, তারা কেউই ভরসার যোগ্য নয়। বিজেপির এই নড়বড়ে সরকারের পতন অনিবার্য। এদিনের আলাপচারিতায় বিজেপির বঙ্গভঙ্গের প্রয়াসের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
আরও পড়ুন-পাচারে মদত! শান্তনুর বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি, সাংসদ প্যাডে স্লিপ ইস্যু
বঙ্গভঙ্গের পরিকল্পনা : রীতিমতো পরিকল্পনা করেই বিজেপি নেতারা এই ধরনের কথা বলেছেন। তবে তাঁদের এই পরিকল্পনা ও প্রচার কোনও কাজে আসবে না। তাঁর কথায়, উত্তরবঙ্গকে আমরা বঞ্চনা করেছি বলে রাজনৈতিক হাওয়া তৈরি করতে চাইছে বিজেপি। আমরা কোনও জেলার মধ্যে বিভাজন করিনি। সবক্ষেত্রেই সমান পদক্ষেপ করেছি। বিজেপির যারা বলছে বঙ্গভঙ্গ চায় না, তারা সঠিক পদক্ষেপ করছে না কেন? যারা বঙ্গভঙ্গের দাবি করছে তাদের শোকজ করা হচ্ছে না কেন? তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার কারও সঙ্গে বিমাতৃসুলভ আচরণ করেনি।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
বাংলার বঞ্চনা : বাংলাকে বঞ্চনার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে অভিষেক বলেন, আমরা তো প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনাকে মুখ্যমন্ত্রী আবাস যোজনা করিনি। তার নাম দিয়েছি বাংলা আবাস যোজনা। তাতে কীসের আপত্তি? কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রকল্পে মাত্র ৪০ শতাংশ টাকা দেয়। তবে রাজ্যের নামে কেন এই প্রকল্প হবে না? তাঁর স্পষ্ট কথা, বাংলার বঞ্চনা নিয়ে প্রতিবাদ আন্দোলন চলছে, চলবে। যতক্ষণ না বকেয়া আদায় হচ্ছে, থামবে না দল।
বৈষম্যের বাজেট : বাজেটে বাংলার জন্য কোনও বরাদ্দ রাখা হয়নি। পাঁচ রাজ্যের জন্য বন্যা মোকাবিলায় আর্থিক বরাদ্দ হলেও বাংলাকে একটি টাকাও দেওয়া হয়নি। অভিষেকের কথায়, মনরেগা, আবাস যোজনা, গ্রামসড়ক যোজনা নিয়ে এতদিন আন্দোলন চলছিল। এবার তার সঙ্গে যোগ হবে বন্যা মোকাবিলাও। তিনি মনে করিয়ে দেন, এই খাতে রাজ্য সরকার নিজেরাই খরচ করেছে। ভবিষ্যতেও করবে। প্রধানমন্ত্রীর আত্মনির্ভর ভারত স্লোগানকে কটাক্ষ করে বলেন, তিনি আত্মনির্ভর ভারতের কথা বলেছেন আর আমরা আত্মনির্ভর বাংলার কথা বলছি।
আরও পড়ুন-লোকসভায় রেল বাজেট নিয়ে কেন্দ্রকে ধুয়ে দিলেন তৃণমূল সাংসদ কাকলি
দুর্নীতি : আবাস প্রকল্পে রাজ্যের বিরুদ্ধে আবাস যোজনা প্রকল্পে কেন্দ্র যে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে সে প্রসঙ্গে অভিষেকের বক্তব্য, কয়েকজনের দোষের ভাগীদার কেন সারা রাজ্যকে করা হবে? তাঁর সংযোজন লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি বাংলাকে বঞ্চনা এবং বিভাজন তৈরির চেষ্টার ফল হাতেনাতে পেয়েছে।
ইন্ডিয়া জোট : অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়েছেন, তৃণমূল কংগ্রেস ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গেই রয়েছে। তাঁর কথায়, লোকসভা ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর কংগ্রেসের ডাকা বৈঠকে আমি নিজে হাজির হয়েছিলাম। একইসঙ্গে সংসদের অধিবেশন চলার সময় কৌশল-বৈঠকেও আমাদের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই : যেসব রাজ্যে কংগ্রেস শক্তিশালী সেখানে লড়াই করেনি তৃণমূল। বরং যেসব রাজ্যে বিজেপি শক্তিশালী সেখানে লড়াই করেছে দল, স্পষ্ট কথা অভিষেকের। তাঁর কথায়, হরিয়ানা, দিল্লি, মহারাষ্ট্র, অসমের মতো রাজ্যগুলিতে বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে কিনা সে-প্রসঙ্গে স্পষ্ট কোনও উত্তর দেননি অভিষেক। তবে উদ্ধব ঠাকরের প্রশংসা করে বলেন, দল ভেঙে দেওয়া সত্ত্বেও মহারাষ্ট্রে দারুণ লড়াই করেছেন উদ্ধব ঠাকরে। এদিন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে জেলবন্দি করে রাখার নিন্দা করেছেন অভিষেক।
আরও পড়ুন-কোয়ার্টার ফাইনালে উঠলেন জকোভিজ
বাংলার রাজনীতি : অভিষেকের স্পষ্ট কথা, তৃণমূল বাংলায় কংগ্রেস, সিপিএম এবং বিজেপিকে হারিয়েছে। তাঁর কথায়, বিজেপির সঙ্গে আমাদের মতপার্থক্য রয়েছে। তবে রাজ্যের স্বার্থে সঠিক মঞ্চে রাজ্যের প্রতি বঞ্চনা তুলে ধরতেই নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।