আধুনিক অলিম্পিকের স্রষ্টা হলেন ব্যারন পিয়েরে ডি কুবার্টিন। মহিলাদের অলিম্পিকে অংশগ্রহণের বিষয়ে ব্যারন ছিলেন বেশ গোঁড়া। তিনি মনে করতেন অলিম্পিকে মেয়েদের অংশগ্রহণ করা উচিত নয় কারণ এতে নষ্ট হতে পারে অলিম্পিকের কৌলীন্য এবং নান্দনিকতা। শতাব্দী পেরিয়ে প্রমাণ হয়েছে ব্যারনের সেদিনের উক্তি কতটা অপ্রাসঙ্গিক ছিল। অলিম্পিকে পিতৃতান্ত্রিকতার যুগ শেষ হয়েছে বহু আগেই। ১৯০০ সালে প্যারিস অলিম্পিকেই প্রথম অংশগ্রহণ করে মেয়েরা। সেখানে মোট প্রতিযোগীর মাত্র ২.২ শতাংশ ছিল নারী৷ অদ্ভুতভাবে সেই প্যারিসেই আবার লিঙ্গসাম্যের ইতিহাস তৈরি হল এই বছর। কারণ ২০২৪-এর প্যারিস অলিম্পিকের অর্ধেক আকাশ জুড়েই রয়েছেন মেয়েরা। এ-বছর অলিম্পিকে অংশগ্রহণকারী ৫০% শতাংশই মহিলা। সত্যি এটা দারুণ আনন্দ আর গর্বের বিষয়। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী ৫২৫০ জন নারীদের মধ্যে অ্যাথলিট মায়েদের জন্য রয়েছে ব্রেস্ট ফিডিং রুম এবং নার্সারি। মেয়েদের জন্য আজ কোনও বাধা আর বাধা নয়। আরও আনন্দের হল প্রায় ৫০ জনের কাছাকাছি ভারতীয় নারী এই খেলার অংশীদার। ইতিমধ্যেই ভারতের ঝুলিতে সম্মান আর পদক এনে দিয়েছেন এক মহিলা অলিম্পিয়ান। ভারতীয় মহিলা অ্যাথলিটরা আগামী দিনে গোটা বিশ্বের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে উঠবে এটাই আশা রাখতে পারি আমরা।
আরও পড়ুন-গতকাল ভাসল অন্ডাল, আজ দমদম বিমানবন্দর
মনু ভাকের (শ্যুটার)
২০২৪ সালে প্যারিস অলিম্পিক্সের প্রথম ভারতীয় নারী হিসেবে একক এবং যুগ্মভাবে ব্রোঞ্জপদক পেলেন মনু ভাকের। দীর্ঘ ১২ বছর পর এয়ার পিস্তল শ্যুটিংয়ে পদক পেল ভারত। অলিপিক্সে মহিলাদের ১০ মিটার এয়ার পিস্তল শ্যুটিংয়ে মাত্র একচুলের জন্য রুপোর পদক পাননি মনু পেলেন ব্রোঞ্জ পদক আবার মনু ভাকের এবং সরবজোত সিং জুটি হিসেবেও মিক্সড টিমে ১০ মিটার এয়ার পিস্তল শ্যুটিংয়ে ব্রোঞ্জপদক নিশ্চিত করলেন। ২০১৭ সালের জাতীয় শ্যুটিং চাম্পিয়নশিপে বিশ্বের ১ নং হিনাসিধুর রেকর্ড ভেঙেছিলেন তিনি। তারপর এশিয়ান জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে রৌপ্যপদক পান। ওই বছরেই এশিয়ান আইএসেসএফ বিশ্বকাপে তিনি সর্বকনিষ্ঠ পদক জয়ী ভারতীয় ছিলেন। ২০১৮ কমনওয়েলথ গেমসে মহিলাদের ১০ মিটার এয়ার পিস্তল ইভেন্টে সোনা জিতেছিলেন মনু। মাত্র ৬ বছর বয়সে শ্যুটিংয়ে হাতেখড়ি। ১৪ বছর বয়স থেকেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন তিনি। পেয়েছেন বহু পুরস্কার এবং পদক। বাবা রামকিসান ভাকের ২২ বছরের মনুর জীবনে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। জানেন কি? একটা সময় খেলা ছেড়ে দেবেন বলে ভেবেই ফেলেছিলেন মনু। ছোট থেকেই ভীষণ রাগী আর জেদি। যা চায় তা পেতেই হবে। ২০২০ সালে টোকিও অলিম্পিক্সের মাসকয়েক আগেই মনু এবং তাঁর কোচ গুরু যশপাল রানার সম্পর্ক ভেঙে গিয়েছিল রাগারাগির জেরে। কারণ কোচ যশপাল চেয়েছিলেন টোকিও অলিম্পিক্সের শুধু ১০ মিটারের ইভেন্টেই নামুক মনু ভাকের। আর ২৫ মিটারের ইভেন্টে খেলুক তাঁরই আর এক ছাত্রী চিঙ্কি যাদব। কোচ হিসেবে যশপালের মনে হয়েছিল, ছোট্ট মনুর উপর বেশি চাপ পড়ে যাবে দুটি ইভেন্টে নামলে। তা জেনে মনু রাগে ফেটে পড়ে। কিন্তু তিনি যে ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কিছুদিনের মধ্যেই তা প্রমাণ হয়। কোচের কথা অগ্রাহ্য করে, টোকিও অলিম্পিক্সের ১০ মিটার এবং ২৫ মিটার— দুটি ইভেন্টেই নেমেছিলেন মনু। কিন্তু কোনও বিভাগেই ফাইনালে পৌঁছাতে পারেননি। তখনই হতাশায় ডুবে খেলা ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবেন। কিন্তু প্যারিস অলিম্পিক্সের বছরখানেক আগে ফের গুরুর কাছে ফিরে আসেন মনু। যশপাল শিষ্যাকে ফেরাননি। রানা-মনুর জুটিই শেষমেশ প্যারিসে প্রথম পদক এনে দিল ভারতকে।
আরও পড়ুন-রাজ্যের বাসিন্দাদের ফেরাতে তৎপরতা
মনিকা বাত্রা (টেবিল টেনিস)
টোকিয়ো অলিম্পিক্স থেকে শূন্য হাতেই ফিরতে হয়েছিল তাঁকে। এবার দ্বিতীয় অলিম্পিক্সে নেমে ভারতীয় টেবিল টেনিস তারকা মনিকা বাত্রা যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। প্রথম ভারতীয় মহিলা টেবিল টেনিস প্লেয়ার হিসেবে শেষ ষোলোয় পৌঁছে গেলেন মনিকা। সেই সঙ্গে উজ্জ্বল করে তুলছেন প্যারিস অলিম্পিকে পদকের সম্ভাবনা। ফ্রান্সের প্রীতিকা পাভাদেকে ৪-০ ব্যবধানে হারিয়ে ইতিহাস গড়লেন দেশের প্রাক্তন ১ নম্বর প্যাডলার। এগচ্ছেন লক্ষ্যভেদে। মনিকা এর আগে জেদ্দায় আয়োজিত মহিলাদের সিঙ্গেলসে ২৪ নাম্বারে উঠে এসেছিলেন। বিশ্বক্রম তালিকায় ৩৯ নাম্বারে ছিলেন মনিকা, সেখান থেকে ২৪ নাম্বারে উঠে আসেন এবং কোয়ার্টার ফাইনালেও পৌঁছোন। ২০১৮ সালের কমনওয়েলথ গেমসেও সোনা জেতেন তিনি। ২০১৬ সালের সাউথ এশিয়ান গেমসে তিনটে স্বর্ণপদক জেতার আগেই তাঁর রিও অলিম্পিকে হাতেখড়ি হয়ে যায়। দিল্লির মেয়ে মনিকার টেবিল টেনিসের প্রতি ভালবাসা ছোট থেকেই। মডেলিং অফার পেয়েও তা নাকচ করে খেলাকেই বেছে নেন। টেবিল টেনিস খেলাটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠার অন্যতম কারণ হলেন মনিকা।
নিখাত জারিন (বক্সিং)
২০২৪-এর প্যারিস অলিম্পক্সে ডেবিউ করলেন বক্সার নিখাত জ়ারিন। অভিষেক ম্যাচে ইতিমধ্যেই তাঁর দুর্দান্ত পারফরম্যান্স সকলের প্রশংসা কুড়িয়ে নিয়েছে। টুর্নামেন্টের ৫০ কেজি বিভাগে জার্মানির ম্যাক্সি ক্যারিনা ক্লোয়েৎজ়ারকে তিনি ৫-০ ব্যবধানে হেলায় হারিয়ে দেন। মেয়েদের ফ্লাইওয়েট বিভাগে জিতলেন নিখাত জারিন। নিখাত ইতিমধ্যে দুবার বক্সিং-এ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের খেতাব অর্জন করেছেন। পাশাপাশি কমনওয়েলথ গেমসে সোনার পদক এবং গত বছর এশিয়ান গেমসে পেয়েছেন ব্রোঞ্জ পদক। তেলেঙ্গানার নিজামাবাদে গোঁড়া মুসলিম পরিবারে জন্ম নিখাত জারিনের। খুব অল্প বয়স থেকেই খেলাধুলোর পরিবেশ পেয়েছিলেন তিনি। যখন তিনি বক্সিং শেখা শুরু করেন তখন বক্সিং রিংয়ে মহিলাদের বিশেষ দেখতে পাওয়া যেত না। এরপর স্পোর্টস অথরিটি ইন্ডিয়ায় নিখাতের প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু হয়। ২০১৯ সালে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত এআইবিএ মহিলা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ৫১ কেজি ওজন বিভাগে স্বর্ণপদক জিতে এক বড় মাইলফলক পান। এই জয় বিশ্ব চ্যাম্পিয়শিপে স্বর্ণপদক জয়ী পঞ্চম মহিলার স্বীকৃতি দেয় তাকে। ২০২০ সালে পেয়েছেন অর্জুন পুরস্কার।
আরও পড়ুন-জলে ভাসছে ২০ হাজার কোটির সংসদ ভবন! ফের কেন্দ্রকে তোপ তৃণমূলের
অঙ্কিতা ভকত (তিরন্দাজ)
তিরন্দাজিতে সাফল্য দিয়ে ভারতীয় অ্যাথলিটদের অলিম্পিকের শুভ সূচনা। মহিলাদের তিরন্দাজিতে ভারতের মহিলা দল অঙ্কিতা ভকত, ভজন কৌর ও দীপিকা কুমারীর জুটি। চার নম্বরে শেষ করেন তাঁরা। তিনজনের মধ্যে বিশেষভাবে নজর কেড়েছেন অঙ্কিতা ভকত। এই তিনজনের মধ্যে ব্যক্তিগত স্কোরেও এগিয়ে রয়েছেন তিনি। অঙ্কিতা পেয়েছেন ৬৬৬ পয়েন্ট। ভজন কৌর পেয়েছেন ৬৫৯ ও দীপিকা কুমারী পেয়েছেন ৬৫৮। ব্যক্তিগত র্যা ঙ্কিংয়ের দিক থেকে তিনি শেষ করেন ১১ নম্বর স্থানে। ব্যক্তিগত র্যা ঙ্কিং রাউন্ডে পদকের জন্য ৬টা রাউন্ড রয়েছে। কলকাতার মেয়ে অঙ্কিতার তিরন্দাজির প্রতি ভালবাসা ১০ বছর বয়স থেকে। এরপর ২০১৪ সালে জামশেদপুরে টাটা তিরন্দাজি অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ শুরু হয় তাঁর। অঙ্কিতার প্রথম কোচ ছিলেন রাম আদেশ। এছাড়াও পূর্ণিমা মাহাতো ও ধর্মেন্দ্র তিওয়ারির কাছেও তিরন্দাজির প্রশিক্ষণ নেন। ২০১৭ সালে বিশ্ব আর্চারি ইয়ুথ চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথমবার সোনা জেতেন অঙ্কিতা। তাঁর ঝুলিতে রয়েছে অনেক সম্মান এবং পদক। প্যারিস অলিম্পিক্স হল তাঁর কেরিয়ারের প্রথম অলিম্পিক্সে যোগদান। প্যারিস অলিম্পিক্সে যোগ দিয়েই বিশ্বের নজর কেড়েছেন অঙ্কিতা।
মীরাবাঈ চানু (ভারোত্তোলক)
অলিম্পিকে রৌপ্যপদক জয়ী, কমনওয়েলথ গেমে তিনবার স্বর্ণপদক বিজয়ী বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারোত্তোলোক সাঁইখোম মীরাবাঈ চানু। এ-বছর প্যারিস অলিম্পিকে সোনাজয়ের লক্ষ্যে এগচ্ছেন তিনি। কার্ণম মালেশ্বরীর পর দ্বিতীয় ভারোত্তোলক যিনি এর আগে টোকিও অলিম্পিকে পেয়েছিলেন রৌপ্যপদক। প্রাক্তন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন চিনের গণপ্রজাতন্ত্রী হাংঝৌতে ২০২৩-এর এশিয়ান গেমসে একটি প্রতিযোগিতায় শেষবার অংশ নেন। সেখানে চোট পান এবং সেই চোট সারিয়ে ছ মাস পরে ভারোত্তোলনে ফিরেছেন মীরাবাঈ। তাইল্যান্ড আয়োজিত আইডব্লিউএফ বিশ্বকাপের মহিলাদের ৪৯ কেজি বিভাগে তৃতীয় হয়ে প্যারিস অলিম্পিকের যোগ্যতা অর্জন করেন।
ইম্ফলের একটি ছোট্ট গ্রামে একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের কনিষ্ঠ সন্তান চানু। ছোট থেকেই দারুণ শারীরিক শক্তি ছিল তাঁর। বাড়ির সবচেয়ে ছোট হয়েও বান্ডিল করা ভারী জ্বালানি কাঠ বয়ে আনতেন অনায়াসে। খেলাধুলোয় ছিল ভীষণ আগ্রহ। চেয়েছিলেন তিরন্দাজ হতে কিন্তু ভারতের অন্যতম মহিলা ভারোত্তোলক কুঞ্জরানি দেবী তাঁকে অনুপ্রাণিত করেন। এরপর ভারোত্তোলনে কেরিয়ার গড়ার প্রস্তুতি নেন। পেয়েছেন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকস্তরে বহু পদক ও সম্মান। টোকিয়োর পর প্যারিসেও মীরাবাই দেশকে পদক এনে দেবেন বলে মনে করছেন সবাই।
আরও পড়ুন-আনোয়ার-বিতর্ক: দু’পক্ষের বক্তব্য শুনল ফেডারেশন
ধিনিধি দেশিংহু (সাঁতারু)
এই মুহূর্তে প্যারিস অলিম্পিক ২০২৪-এর সর্বকনিষ্ঠ অ্যাথলিট হলেন ভারতের ধিনিধি দেশিংহু। বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা ধিনিধির ঝুলিতে রয়েছে জাতীয় রেকর্ড। মহিলাদের ২০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে কোয়ালিফাই করেছিলেন নবম শ্রেণির ছাত্রী, ১৪ বছর বয়সি ধিনিধি দেশিংগু। যদিও সাঁতারে সাফল্য দ্যাখাতে পারেন তিনি। কিন্তু অলিম্পিকের ভারতীয় দলের দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে তাঁর প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়। দেশিংগু বিশ্ববিদ্যালয় কোটার মাধ্যমে অলিম্পিকে যাবার যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন। প্রায় ছ-বছর আগে ধিনিধির প্রতিযোগিতামূলক সাঁতারে প্রশিক্ষণ শুরু। গত বছর গোয়াতে জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ধিনিধি সাতটা স্বর্ণপদক পেয়েছেন। এরপর দোহাতে ওয়র্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপেও যোগদান করেন। বয়স হিসেবে অনেকটাই ছোট ধিনিধির অলিম্পিকে অংশগ্রহণকে সূচনাপর্ব বলে মনে করছেন তাঁর কোচ মধু কুমার বি এম। ধিনিধি তার চেয়ে বয়সে অনেকটা বড় এবং অভিজ্ঞদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লড়েছেন যা তাঁকে আত্মবিশ্বাসী করেছে এবং ভবিষ্যতের সাফল্যকে সুদৃঢ় করেছে।
পিভি সিন্ধু (ব্যাডমিন্টন)
সহজ জয় দিয়েই প্যারিস অলিম্পিক্সের যাত্রা শুরু করলেন ব্যাডমিন্টন তারকা পিভি সিন্ধু। ইতিমধ্যেই মহিলাদের সিঙ্গলস ব্যাডমিন্টনে গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে মালদ্বীপের ফতিমাথ মাবাহাকে ২১-৯, ২১-৬ ব্যবধানে হারিয়েছেন সিন্ধু। মাত্র ২৯ মিনিটে এদিন ম্যাচ শেষ করে দেন তিনি। সিন্ধুর শক্তিশালী স্ম্যাশের জবাব ছিল না ফতিমাথের কাছে। প্রথম গেম ২১-৯ ব্যবধানে জিতে নেন সিন্ধু। সময় লাগে মাত্র ১৩ মিনিট। দ্বিতীয় গেমেও একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল ভারতীয় ব্যাডমিন্টন তারকার। মাত্র ১৪ মিনিটে ২১-৬ ব্যবধানে জিতে নিয়েছিলেন দ্বিতীয় গেম। ভারতের অলিম্পিক্স ইতিহাসে আজ পর্যন্ত কোনও মেয়ে তিন-তিনবার পদক জেতেননি। পিভি সিন্ধু সেই দুর্লভ হ্যাটট্রিকের সামনে দাঁড়িয়ে। দু’বছর আগে কমনওয়েলথে সোনা জেতার পর থেকে বিশেষ সাফল্য আসেনি তাঁর ঝুলিতে। গোড়ালি-সহ নানা চোটে জেরবার হয়েছেন। তবু পিভি সিন্ধু বড় ম্যাচের খেলোয়াড়। ভুললে চলবে না দু’টো অলিম্পিক পদক রয়েছে তাঁর ঝুলিতে এবং রয়েছে বিশ্বচ্যাম্পিয়নের মুকুটও। পিভি সিন্ধুর জন্ম-কর্ম সবটাই হায়দরাবাদে। বাবা-মা দুজনেই ছিলেন জাতীয় স্তরের ভলিবল খেলোয়াড়। বাবা পিভি রমানা ভারতীয় ভলিবল টিমে তাঁর অবদানের জন্য পেয়েছেন অর্জুন পুরস্কার। মাত্র আট বছর বয়সে তাঁর ব্যাডমিন্টনে হাতেখড়ি।
আরও পড়ুন-তফসিলি জাতি ও উপজাতির মধ্যে উপশ্রেণি তৈরি করতে পারবে রাজ্য, জানাল সুপ্রিম কোর্ট
অন্তিম পাঙ্গাল (কুস্তিগির)
২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকে ভারত থেকে ছজন কুস্তিগির অংশগ্রহণ করেছেন। পাঁচজন মহিলা এবং এক পুরুষ— যাঁর মধ্যে অন্যতম হলেন অন্তিম পাঙ্গাল। কুস্তিগির অন্তিম পাঙ্গালের প্রথম অলিম্পিক্সে এটা। ১৯ বছর বয়সি এই কুস্তিগির হিসার জেলার ভাগনা গ্রামের মেয়ে। পাঙ্গাল ২০২৩ বিশ্ব কুস্তি চ্যাম্পিয়নশিপ থেকেই এই যোগ্যতা অর্জন করেন। অনূর্ধ্ব-২০ বিভাগে বিশ্ব কুস্তি চ্যাম্পিয়ন হয়ে স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন। দুবার জুনিয়র বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, এশিয়ান রেসলিং চ্যাম্পিয়নশিপ এবং সিনিয়র ওয়ার্ল্ডস পদক বিজয়ী হলেন অন্তিম পাঙ্গাল। কুস্তিতে ৫৩ কেজির বিভাগের প্রতিযোগী তিনি। কৈশোরেই কেরিয়ার শুরু করেন। অন্তিমরা তিন বোন এবং এক ভাই। অন্তিমের বড় বোন সরিতা জাতীয় স্তরের কাবাডি খেলোয়াড়। সরিতার অনুপ্রেরণাতেই তাঁর কুস্তিখেলার শুরু। সরিতা অন্তিমকে ১০ বছর বয়সে প্রথম হিসারের মহাবীর স্টেডিয়ামে একটি কুস্তির খেলা অনুষ্ঠানে নিয়ে যান। কুস্তিতে ভর্তি হবার প্রথমদিকে রোজ প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে সরিতা আর অন্তিম এই স্টেডিয়ামে আসতেন অনুশীলনের জন্য। অন্তিমের আর-এক বোন নিশা এই মুহূর্তে তাঁর ডায়েটেশিয়ান এবং মানসিক প্রশিক্ষক। বোন নিশাই অন্তিমের সর্বক্ষণের সঙ্গী।
রোমিতা জিন্দাল (এয়ার রাইফেল শ্যুটার)
২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকের সেরা প্রাপ্তি ভারতের ১০ মিটার এয়ার রাইফেল মহিলা বিভাগের প্রতিযোগী রোমিতা জিন্দাল। দিল্লির হংসরাজ কলেজের ছাত্রী ২২ বছরের রোমিতা এর আগে হাংঝৌ এশিয়ান গেমসে রৌপ্যপদক জিতেছেন। সম্প্রতি ইতিহাস গড়েছেন এয়ার পিস্তল মহিলা বিভাগে মনু ভাকের। রোমিতাও ইতিহাস গড়তে একধাপ এগিয়ে গেছেন। প্রথমে মনে হয়েছিল রোমিতা হয়তো সফল হবেন না। এলাভেনিল ভালারিবন প্রত্যাশা জাগিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ অবধি ভালারিবন আর পারেননি। সাড়া জাগিয়ে ৬৩১.৫ স্কোর করে রোমিতা পদক রাউন্ডে পৌঁছে যান। যদিও পরবর্তীতে রোমিতা শীর্ষ চারের স্থানটি বজায় রাখতে পারেননি। অভিষেক অলিম্পিকে মরিয়া লড়াই করে সপ্তমে শেষ করেন হরিয়ানার কুরুক্ষেত্রের মেয়ে এই প্রতিভাময়ী অ্যাথলিট।
দীপিকা কুমারী (তিরন্দাজ)
ভারতের হয়ে প্যারিস অলিম্পিকে অংশগ্রহণকারী অন্যতম তিরন্দাজ হলেন দীপিকা কুমারী। মহিলাদের তিরন্দাজি দলের ত্রয়ী হলেন দীপিকা কুমারী, অঙ্কিতা ভকত এবং ভজন কৌর। এবছর তাঁদের জুটি চতুর্থ স্থান লাভ করলেও এদের মধ্যে দীপিকা কুমারী বর্তমানে বিশ্ব রাঙ্কিং-এ পঞ্চম স্থানে রয়েছেন। ১৯৯৪ সালের ১৩ জুন রাঁচি থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের একটি ছোট্ট গ্রাম রাতুচাটিতে জন্মগ্রহণ করা দীপিকার বিশ্ব মঞ্চে যাত্রার একটি আকর্ষণীয় গল্প আছে। ছোট থেকেই প্রচণ্ড ডানপিটে ছিলেন তিনি। ছোটবেলায় গাছে ঢিল ছুঁড়ে আম পাড়ার নেশা ছিল তাঁর। আমগাছে ঠিক নিশানা করে আম পেড়ে নিতেন তিনি। তাঁর নিশানা ছিল দুর্দান্ত। বাবা-মা থেকে পাড়াপড়শি সকলেই অবাক হয়ে যেত ছোট্ট দীপিকার নিশানা দেখে। আর এই ভাবেই তার তিরন্দাজিতে আসার গল্প শুরু। ২০০৬ সালে তিনি জামশেদপুরের টাটা আর্চারি অ্যাকাডেমিতে যোগ দেন, আর এরপরেই তাঁর জীবন চিরতরে বদলে যায়। মাত্র ১৫ বছর বয়সে যুব বিশ্ব আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে তিনি স্বর্ণপদক জিতে ছিলেন। এই নিয়ে চতুর্থবার তিনি অলিম্পিকে যোগদান করছেন। খেলার জন্য দীপিকা ২০১২ সালে অর্জুন পুরস্কার, ২০১৪ সালে বর্ষসেরা ক্রীড়া ব্যক্তিত্বের সম্মান পদ্মশ্রী পুরস্কার পেয়েছিলেন।
আরও পড়ুন-উত্তর দেওয়ার সাহস নেই সীতারামণের
ভিনেশ ফোগাট (কুস্তিগির)
সর্বভারতীয় কুস্তি সংস্থার প্রাক্তন সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের বিরুদ্ধে প্রধানমুখ ছিলেন ভিনেশ ফোগাট। এবার এই বিদ্রোহী কন্যা প্যারিস অলিম্পিকে ভারতের হয়ে কুস্তিতে ৫০ কেজি ফ্রিস্টাইল বিভাগে লড়াই করবেন। ১৯৯৪ সালের ২৫ অগাস্ট এই ভারতীয় মহিলা ফ্রিস্টাইল কুস্তিগিরের জন্ম হয় হরিয়ানার এক গ্রামে। যে সময় কুস্তিটাকে শুধুমাত্র পুরুষদের খেলা হিসাবে গণ্য করা হত, সেই সময় তার জেঠু কুস্তিগির মহাবীর সিং ফোগাটের হাত ধরে কুস্তিতে প্রবেশ করেন ভিনেশ। মহাবীর সিং ফোগাট ছিলেন ভিনেশের প্রশিক্ষক। ২০১৪ সালে এবং ২০১৮ সালে তিনি কমনওয়েলথ গেমসে স্বর্ণপদক লাভ করেছিলেন এবং ২০১৮ সালে জাকার্তা পেলবঙ্গ, এশিয়ান গেমসে স্বর্ণপদক লাভ করেছিলেন। এরপর ২০২২-এর কমনওয়েলথ গেমসেও মহিলাদের ৫৩ কেজি ফ্রিস্টাইল কুস্তিতে স্বর্ণপদক জিতেছিলেন তিনি। প্যারিস অলিম্পিক বাছাই পর্বে তাঁকে অনেক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। কিন্তু সমস্ত বাধা জয় করে তিনি ভারতের হয়ে প্যারিসে ফ্রিস্টাইল কুস্তিতে প্রতিনিধিত্ব করবেন।
লভলিনা বরগহিন (বক্সিং)
এবারে প্যারিস অলিম্পিকের মহিলা বক্সিং-এর অন্যতম মুখ হচ্ছেন লভলিনা বরগহিন। তিনি আসাম থেকে অলিম্পিকের জন্য যোগ্যতা অর্জনকারী প্রথম মহিলা এবং অলিম্পিকের থেকে ভারতকে পদক এনে দেওয়া তৃতীয় বক্সার তিনি।
নিখাদ জারিন এবং মেরি কমের সামনে বারবার ফিকে হয়ে যাওয়া লভলিনার নাম এবার ভারতের সম্ভাবনাময় পদক জয়ীদের তালিকায় জল জল করছে। সকলেই মনে করছে এবার টোকিও অলিম্পিকে পাওয়া ব্রোঞ্জ-এর রং বদল হয়ে যাবে। আর সেই বদলানোর লক্ষ্য নিয়েই প্যারিস অলিম্পিকের বক্সিং রিংয়ে নামবেন লভলিনা। সাধারণ মধ্যবিত্ত ফ্যামিলি থেকে কিকবক্সার হিসাবে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন লভলিনা। ১৯৯৭ সালে ২ অক্টোবর অসমের গোলাঘাট জেলার জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ২০১২ সাল থেকে তিনি প্রখ্যাত কোচ পদুম বোরোর কাছে প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেন। তিনিই হলেন অসমের প্রথম অলিম্পিক মেডেল জয়ী মহিলা। ২০২২ সালে তিনি এশিয়ান বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা যেতেন, ২০২৩ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা এবং এশিয়ান গেমসে রুপোর পদক জেতেন। এবছর প্যারিস অলিম্পিকে ৭৫ কেজি বিভাগে নামছেন লভলিনা কারণ টোকিও অলিম্পিকে যে ৬৯ কেজিতে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন সেই বিভাগটি এবছর থাকছে না। যেহেতু লভলিনের উচ্চতা অনেকটাই সেই কারণে বিশেষজ্ঞদের মত অনুযায়ী তিনি নিজের উচ্চতাকে এই বিভাগে কাজে লাগাতে পারবেন। ২০২০ সালে অর্জুন পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি। বক্সিং বিভাগে লভলিনার ভাল ফলাফল করার আশা রাখছেন আপামর ভারতবাসী।
আরও পড়ুন-শনিবার কৈলাস মিশ্রের উদ্যোগে রক্তদান মেলা ও কৃতি পড়ুয়াদের সংবর্ধনা
অদিতি অশোক (গলফ)
প্যারিস অলিম্পিকে এবার ভারতের হয়ে গলফে অংশগ্রহণ করছেন অদিতি অশোক। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে তিনি গলফ খেলতে শুরু করেন। ১৯৯৯ সালে বেঙ্গালুরু শহরে জন্মগ্রহণ করেছেন তিনি। বাবার হাত ধরেই তিনি কর্নাটকের গলফ অ্যাসোসিয়েশনের ড্রাইভিং রেঞ্জে পৌঁছান। অদিতি অশোক সবথেকে কম বয়সি হিসাবে লালল্লা আইচা ট্যুর স্কুল প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করেছিলেন। এবং তিনি প্রথম ভারতীয় গলফ খেলোয়াড় হিসেবে ইউরোপীয় ট্যুরের খেতাব অর্জন করেছেন। অদিতি প্রথম এবং একমাত্র ভারতীয় খেলোয়াড় হিসেবে ২০১৩ সালে এশিয়ান যুব গেমস, ২০১৪ সালে যুব অলিম্পিক গেমস, এশিয়ান গেমস এবং ২০১৬ সালে অলিম্পিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন। ২০২৩ সালে তিনি এশিয়ান গেমসে রৌপ্যপদক লাভ করেছিলেন। টোকিও অলিম্পিকে তিনি চতুর্থ স্থানে ছিলেন। এ-বছর প্যারিস অলিম্পিকে সবাই তাকিয়ে আছে তাঁর পারফরম্যান্সের দিকে।
তুলিকা মান (জুডো)
২০২৪-এর প্যারিস অলিম্পিকে যোগদানকারী ভারতের একমাত্র জুডোকো হচ্ছেন তুলিকা মান। ২০২২-এ বামিংহামে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ গেমসে রৌপ্যপদক জিতে লাইম লাইটে এসেছিলেন। মাত্র ৮ বছর বয়সে জুডো প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেন তুলিকা মান। তাঁর মা যেহেতু কাজ করতেন সেজন্য তিনি বাড়িতে একাই থাকতেন আর এই একা-একা সময় যাতে না কাটাতে হয় তার জন্য তিনি জুডোতে ভর্তি হয়েছিলেন। ২০১৭ সালে বুদাপেস্টে অনুষ্ঠিত বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে আত্মপ্রকাশ ঘটে তুলিকা মানের। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে তিনি জয়পুরে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ চ্যাম্পিয়নশিপে বিজয়ী হয়েছিলেন। ২০১৯ সালে কমনওয়েলথ চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণপদক পান এবং ওয়ালসল কমনওয়েলথ চ্যাম্পিয়নশিপে বিজয়ী হয়েছিলেন। ২০২২ সালে তিনি লাইভলাইটে আসেন এবং ২০২৩ সালে টাই পেটে এশিয়ান ওপেন চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ পদক লাভ করেন। এবছর প্যারিস অলিম্পিকে মহিলাদের ৭৮ কেজি ইভেন্টে অংশগ্রহণ করবেন তুলিকা মান। ১৯৯৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর নিউ দিল্লিতে জন্মগ্রহণ করা তুলিকা মান আশা করছেন তিনি এ বছরের প্যারিস অলিম্পিক থেকে একটি পদক লাভ করতে সক্ষম হবেন।
সিফ্ট কৌর সামার (শ্যুটার)
প্যারিস অলিম্পিকে শ্যুটার হিসাবে মনু ভাকের ভারতবর্ষের ঘরে পদক এনে দিয়েছেন। আর এরপরেই সবার চোখ রয়েছে আর এক শ্যুটার সিফ্ট কৌর সামারের দিকে। এবছর প্যারিস অলিম্পিকে যে সমস্ত শ্যুটার অংশগ্রহণ করতে গেছেন তাঁদের মধ্যে দুজন ছাড়া বাকি সবারই এই প্যারিস অলিম্পিকে অভিষেক ঘটছে। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন সিফ্ট কৌর সামার। পাঞ্জাবের এই ২২ বছরের তরুণী শ্যুটারের থেকে পদক প্রত্যাশা করছেন প্রত্যেকেই।
মহিলাদের ৫০ মিটার রাইফেল প্রিপজিশন ইভেন্টে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন সিফ্ট কৌর সামার। গতবছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে এশিয়ান গেমসে চিনের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নকে হারিয়ে সোনা যেতেন তিনি। একটি ওয়েবসাইটের সামারা বলেছেন যে তিনি এই থ্রি পজিশন ইভেন্ট বাছেননি। এই থ্রি পজিশন ইভেন্টই তাকে বেছে নিয়েছে। আসলে সামারের দশ মিটার অথবা ৫০ মিটার শ্যুটিং নিয়ে কোনও ধারণা ছিল না। পরে তিনি এই ইভেন্টে নিজেকে মানিয়ে নেন এবং দ্রুত এই ইভেন্টে চলে আসেন।
সিফ্ট কৌর সামার শ্যুটিংয়ে মনোযোগ দেওয়ার জন্য ফরিদকোটের জিজিএস মেডিক্যাল কলেজের এমবিবিএস কোর্স থেকে বাদ পড়েছিলেন। বর্তমানে তিনি অমৃতসরের জিএনডিইউ থেকে শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিষয়ে স্নাতক করছেন।
সামারের খুড়তোতো ভাই সেখন, যিনি নিজে একজন শটগান শ্যুটার তিনি সামারকে শ্যুটিং-এর সাথে পরিচয় করিয়েছিলেন। মাত্র নয় বছর বয়সে সিফ্ট কৌর সামার পাঞ্জাবের একটি শ্যুটিং রেঞ্জে শ্যুটিংয়ের স্বাদ পেয়েছিলেন। কৃষিজীবী পরিবার থেকে উঠে আসা সামার ২০২৩ সালে ২.৬ পয়েন্টের ব্যবধানে ব্রিটেনের সিওনাইড ম্যাকিনটোসের বিশ্ব রেকর্ডটি ভেঙে দিয়েছিলেন। আপামর ভারতবাসী তাঁর পদক জয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন।
নেত্রা কুমানন (সেলিং)
নেত্রা কুমানন প্রথম ভারতীয় মহিলা নাবিক যিনি অলিম্পিকের মতো কোনও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করতে চলেছেন। মুনসা ওপেন চ্যাম্পিয়নশিপের লেসার র্যা ডিয়াল ইভেন্টে প্রথম হয়ে প্যারিস অলিম্পিকে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন নেত্রা। এতদিন শুধুমাত্র পুরুষরাই সেলিং-এ অংশগ্রহণ করেছিলেন। আর সেই কারণে নেত্রাই হচ্ছেন প্রথম ভারতীয় যিনি অলিম্পিকে সেলিং-এ অংশগ্রহণ করছেন। চেন্নাই-এর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের এই ছাত্রী ২০১৪ সালে ইনচিওর এবং ২০১৮ সালে জাকর্তা এশিয়ান গেমসে অংশ নিয়েছিলেন। ২০২০ সালে মিয়ামিতে অনুষ্ঠিত সেইলিং বিশ্বকাপে ব্রোঞ্জপদক লাভ করেছিলেন নেত্রা। ১৯৯৭ সালের ২১ অগাস্ট জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ২০০৯ সালে তামিলনাড়ুর সেলিং অ্যাসোসিয়েশনে আয়োজিত একটি গ্রীষ্মকালীন শিবির হয়েছিল, আর সেই সময় নৌযান চালানোর সাথে পরিচিত হয়েছিলেন ১২ বছর বয়সি নেত্রা। ছোটবেলা থেকেই নেত্রা টেনিস, বাস্কেটবল খেলতেন, এর সাথে সাথে তিনি ভারতনাট্যমও শিখতেন। কিন্তু সেলিং-এর জন্য তিনি সবকিছু ছেড়ে দিয়েছিলেন। আপামর ভারতবাসী স্বপ্ন দেখছেন প্রথম মহিলা সেলার নেত্রা এবার প্যারিস অলিম্পিকে সেলিং বিভাগে পদক লাভ করবেন।
বিলকিস মীর (জুরি সদস্য)
এই বছর প্যারিস অলিম্পিক্সে জুরি বোর্ডে রয়েছেন এক ভারতীয় কন্যা। তাঁর নাম বিলকিস মীর। অলিম্পিকের প্রথম ভারতীয় জুরি সদস্য হিসেবে বিলকিসের নাম ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে। বিলকিস একজন বোট রাইডার বা ক্যানোয়িস্ট। তাঁর জার্নি শুরু ১৯৯৮ সালের কাশ্মীরের ডাল লেকে। সেই সময় কাশ্মীরের একজন মেয়ের পক্ষে এটা করা খুব সহজ বিষয় ছিল না। ভারতের কায়াকিং এবং ক্যানয়িং অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য তিনি। এই বছর অলিম্পিক্সে যে ক্যানয়িং টিম যোগদান করেছে তার প্রাক্তন কোচ বিলকিস গত বছর চিনের হাংজাউতে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসেরও জুরি সদস্য ছিলেন। প্রায় দশ বছর জাতীয় মহিলাদলের কোচের দায়িত্বে ছিলেন বিলকিস। প্যারিস অলিম্পিক্সের জুরি হিসেবে নির্বাচিত হওয়া বিলকিসের জীবনের স্বপ্নপূরণ।
আরও পড়ুন-ফের বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্য ট্রাম্পের, জোর সমালোচনা
জ্যোতিকা শ্রী ডান্ডি (রিলে রেস)
এ-বছর প্যারিস অলিম্পিকে রিলে রেস বিভাগের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন জ্যোতিকা শ্রী ডান্ডি। ছোটবেলা থেকেই জ্যোতিকার স্বপ্ন ছিল যে সে ডাক্তার হবে। কিন্তু বাবার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য সে একজন ক্রীড়াবিদ হয়ে উঠে। বাবার হাত ধরেই জ্যোতিকার খেলাধুলার সঙ্গে পরিচয় হয়। দশ বছর কঠোর পরিশ্রম করার পর জ্যোতিকা ভারতীয় মহিলাদের ৪ x×৪০০ মিটার রিলে রেসের দলের অন্যতম অংশগ্রহণকারী হিসাবে প্যারিস অলিম্পিকে যাওয়ার জন্য যোগ্যতা অর্জন করেন। ২০১৭ সালে ন্যাশনালসে ৪০০ মিটারে অনূর্ধ্ব-১৮ শিরোপা জিতেছিলেন জ্যোতিকা। এরপরে ২০২১ সালে ওপেন মিটে তিনি তাঁর প্রথম সিনিয়র ন্যাশনাল ৪০০ মিটার খেতাব জিতেছিলেন। এরপরে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০২৩ সালে ব্যাংককে অনুষ্ঠিত এশিয়ান অ্যাথলেটিক চ্যাম্পিয়নশিপে মহিলাদের ৪×x ৪০০ মিটার রিলেতে ব্রোঞ্জ জিতে তিনি তাঁর জয়ের ধারা অব্যাহত রেখেছিলেন। জ্যোতিকার বাবা শ্রীনিবাস একজন বডিবিল্ডার ছিলেন, তিনি চেয়েছিলেন তাঁর মেয়ে একজন ক্রীড়াবিদ হয়ে দেশের জন্য পদক নিয়ে আসুক। শ্রীনিবাসের সাথে সাথে আপামর ভারতবাসী তাকিয়ে আছে জ্যোতিকার পদক জয়ের লক্ষ্যের দিকে।
রূপাল চৌধুরী (রিলে রেস)
প্যারিস অলিম্পিকের রিলে রেস বিভাগের জ্যোতিকা, শুভা ভেঙ্কটেশ, ও এম আর পুভাস্মার মতো আরও একজন প্রতিযোগী হচ্ছেন রূপাল চৌধুরী। ২৩ ডিসেম্বর ২০০৪ সালে জন্মগ্রহণ করা রূপাল ২০২২ সালে ভারতীয় জাতীয় অনূর্ধ্ব-২০ ফেডারেশন কাপ অ্যাথলেটিকস মহিলাদের ৪০০ মিটার দৌড়ে প্রিয়া মোহনকে পরাজিত করেন। সেই বছরেই অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্ব অ্যাথলেটিকসে ৪০০ মিটারে ব্রোঞ্জ পদক এবং ৪×৪০০ রিলেরেসে রৌপ্যপদক লাভ করেন তিনি। আর এই দুটি পদক জিতে প্রথম ভারতীয় অ্যাথলেটিক হিসেবে ইতিহাস রচনা করেন রূপাল। ২০২৩ সালে তিনি হাঁটুতে আঘাত লাগার জন্য এক বছর খেলা থেকে দূরে ছিলেন। এ-বছরের শুরু থেকেই তিনি আবার মুম্বইয়ের রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন সেন্টারে প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেছিলেন। এ বছর ৪ মে বাহামাসের নাসাউতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব অ্যাথলেটিক রিলেতে আবার তিনি ভারতীয় দলে যোগদান করেন। আর এরপরেই প্যারিস অলিম্পিকের জন্য তিনি নির্বাচিত হন। অলিম্পিকে তিনি মেয়েদের দলে এবং মিশ্র দলের হয়ে অংশগ্রহণ করবেন।