প্রতিবেদন : বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিলেন শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)। সোমবার দুপুর ২-৩০ মিনিট নাগাদ পদত্যাগ করেন তিনি। তারপরেই বোন রেহানাকে নিয়ে বাংলাদেশ বায়ুসেনার হেলিকপ্টারে রাজধানী ঢাকার গণভবন ছাড়েন তিনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই বায়ুসেনারই এক বিশেষ বিমানে দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা হন তিনি। এখনও পর্যন্ত যা খবর, দিল্লি হয়ে লন্ডন উড়ে যেতে পারেন হাসিনা (Sheikh Hasina)। হাসিনার পদত্যাগের সঙ্গে সঙ্গেই স্পিকারের হাতে আপাতত শাসনভার তুলে দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশের শাসনভার সেনাবাহিনীর অধীনে একটি তদারকি সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হতে পারে। অসমর্থিত সূত্রের খবর, পদত্যাগের জন্য হাসিনাকে ৪৫ মিনিট সময় বেঁধে দিয়েছিল সেনা। বাংলাদেশের সংবাদসূত্রের খবর, দেশ ছাড়ার আগে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে চেয়েছিলেন মুজিব-কন্যা। কিন্তু ঝুঁকি নেয়নি সেনা। নিরাপদে বাংলাদেশের আকাশসীমা পার হওয়ার পরেই জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন সেনাপ্রধান। তুলে নেন কার্ফু। সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর রাজপথের বিক্ষোভ বদলে যায় উচ্ছ্বাসে। বিক্ষোভকারী ছাত্ররা গণভবনে ঢুকে পড়ে শুরু করে ভাঙচুর, লুঠপাট। অনেকটা শ্রীলঙ্কার ঘটনার পুনরাবৃত্তি। মুজিবের মূর্তির মাথায় চেপে কয়েকজন মারতে শুরু করে হাতুড়ির ঘা। ঢাকার আওয়ামি লিগের অফিসে ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। আক্রান্ত হয় সংবাদমাধ্যমের অফিসও। কিছুক্ষণ আগেই সোশ্যাল মিডিয়ায় হাসিনা লিখেছেন, গণভবনে লুট হচ্ছে, বুকভরা কষ্ট নিয়ে চলে যাচ্ছি। হেরে গেলাম অপশক্তির কাছে। আবার দেখা হবে। এদিকে, বাংলাকে শান্ত থাকার আবেদন জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, আমরা বিস্তারিত জানি না। এই অবস্থায় আমাদের বাংলায় সবাই শান্ত থাকুন। কেউ যেন উত্তেজনা না ছড়ায়। এটা ভারত সরকার এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রকের বিষয়। ভারত সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে আমরা সেই অনু্যায়ী চলব। সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতাদের মুখ্যমন্ত্রী অনুরোধ জানিয়েছেন, কেউ এমন কোনও প্ররোচনামূলক কথাবার্তা বলবেন না যাতে বাংলা এবং দেশের শান্তি বিঘ্নিত হয়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিঘ্নিত করতে পারে এমন কোনও পোস্ট করবেন না সামাজিক মাধ্যমে। আমি আমার দলের নেতাদের বলেছি, বিজেপি নেতাদেরও বলছি। তিনি জানিয়েছেন, কয়েকজন বিজেপি নেতা ইতিমধ্যেই এ-ব্যাপারে মন্তব্য করেছেন। এটা করা উচিত নয়। সমাজ-জগৎকে বলব শান্তিরক্ষার স্বার্থে এগিয়ে আসুন। ভারত একটা দেশ, বাংলাদেশ একটা দেশ। প্রতিবেশী দেশ বা রাজ্যে কিছু ঘটলে তার প্রভাব পড়তে পারে। সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি দেখতে হবে। সব সন্তানরা ভাল থাকবেন।
শনিবারই আন্দোলনরত ছাত্রদের প্রতি হাসিনা আহ্বান জানিয়েছিলেন তাঁর বাসভবনে এসে আলোচনায় বসার। দরকার হলে অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি মোটেই শান্ত হয়নি। উল্টে পরিস্থিতি হয়ে ওঠে আরও অগ্নিগর্ভ। অবরোধ, সঙ্ঘর্ষ, গুলিতে রবিবার পর্যন্ত প্রাণ হারান প্রায় ৯৭ জন। সবমিলিয়ে মৃত্যুসংখ্যা ছাড়িয়ে যায় ৩০০। সোমবার হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে শুরু হয় মার্চ টু ঢাকা। তারপরেই এই পটপরিবর্তনের পালা। বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে। মানুষের মতামত নিয়েই তা হবে। সব হত্যার বিচার হবে। সেনাবাহিনীর উপরে আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি আশ্বস্ত করেছেন, দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হবে। রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের আবেদন জানানো হবে। বিক্ষোভকারীদের হিংসাত্যাগের আহ্বান জানিয়ে তাঁর আশ্বাস, সাধারণ মানুষের পাশে থাকবে বাহিনী। এদিকে, বাংলাদেশে অস্থিরতার প্রেক্ষিতে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কড়া নজরদারি শুরু করেছে বিএসএফ।
আরও পড়ুন- বিজেপির দু’মুখোনীতি ধূলিসাৎ হয়ে গেল মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে