পদত্যাগ করে দেশ ছাড়লেন হাসিনা, আপাতত দিল্লিতে, লন্ডন যেতে বাধা

১৫ বছরের শাসনের ইতি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিলেন শেখ হাসিনা। সোমবার দুপুর ২-৩০ মিনিট নাগাদ পদত্যাগ করেন তিনি।

Must read

প্রতিবেদন : ১৫ বছরের শাসনের ইতি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিলেন শেখ হাসিনা। সোমবার দুপুর ২-৩০ মিনিট নাগাদ পদত্যাগ করেন তিনি। তারপরেই বোন রেহানাকে নিয়ে বাংলাদেশ বায়ুসেনার হেলিকপ্টারে রাজধানী ঢাকার গণভবন ছাড়েন তিনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই বায়ুসেনারই এক বিশেষ বিমানে দিল্লির উদ্দেশে রওনা হন তিনি। প্রথমে জানা গিয়েছিল দিল্লি হয়ে লন্ডন যাবেন তিনি। কিন্তু ব্রিটেন লন্ডন বিমানবন্দরে তাঁর বিমান নামার অনুমতি না দেওয়ায় শেখ হাসিনা আপাতত দিল্লিতেই। জানা গিয়েছে সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিট নাগাদ তাঁর বিমান গাজিয়াবাদের হিন্দন এয়ারবেসে অবতরণ করে। তাঁর সঙ্গে দেখা করে বেশ কিছুক্ষণ বৈঠক করেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। ব্রিটেন যেহেতু তাঁকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে অস্বীকার করেছে তাই নিরপেক্ষ দেশ হিসাবে বেলজিয়াম বা ফিনল্যান্ডে তাঁর রাজনৈতিক আশ্রয়ের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তবে এখন ক’দিন দিল্লিতেই থাকবেন তিনি। দিল্লি বা আশপাশের কোনও নিরাপদ জায়গায়।

আরও পড়ুন-অনির্বাচিত সরকার কীভাবে দেশ চালাবে, প্রশ্ন সজীবের

হাসিনার পদত্যাগের সঙ্গে সঙ্গেই স্পিকারের হাতে আপাতত শাসনভার তুলে দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশের শাসনভার সেনাবাহিনীর অধীনে একটি তদারকি সরকারের হাতে তুলে দেওয়া দেওয়া হতে পারে। এদিকে জেলবন্দি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে ডিক্রি জারি করে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়াকে। রাতেই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার কথা খালেদা জিয়ার। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মহম্মদ সাহাবুদ্দিন সোমবার বেশি রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে জানিয়েছেন, অবিলম্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হবে এবং সংসদ ভেঙে দেওয়া হবে। সূত্রের খবর, নোবেলজয়ী মহম্মদ ইউনুস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন। প্রধান হতে পারেন শিক্ষাবিদ শহিদুল আলমও।
অসমর্থিত সূত্রের খবর, পদত্যাগের জন্য হাসিনাকে ৪৫ মিনিট সময় বেঁধে দিয়েছিল সেনা। বাংলাদেশের সংবাদসূত্রের খবর, দেশ ছাড়ার আগে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে চেয়েছিলেন মুজিব-কন্যা। কিন্তু ঝুঁকি নেয়নি সেনা। নিরাপদে বাংলাদেশের আকাশসীমা পার হওয়ার পরেই জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন সেনাপ্রধান। তুলে নেন কার্ফু। সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর রাজপথের বিক্ষোভ বদলে যায় উচ্ছ্বাসে। তবে অশান্তি এবং সঙ্ঘর্ষের খবরও এসেছে। আওয়ামী লিগ নেতা মহসিন রেজাকে পুড়িয়ে মারা হয়। হত্যা করা হয় এক সাংবাদিককে। প্রাক্তন ক্রিকেটার মাশরফি মুর্তাজা ও সাকিবের উপরও হামলা হয়। ক্রিকেটার লিটন দাসের বাড়িতেও অগ্নিসংযোগ করা হয়। যশোরে আওয়ামি লিগের এক নেতার হোটেলে পুড়িয়ে মারা হয় ৮ জনকে। বাংলাদেশের পরিচালক সেলিম এবং তাঁর ছেলেকে পিটিয়ে মারা হয়। রাতে মুজিবুর রহমানের ধানমণ্ডির বাড়িতেও হামলা চলে। লাগিয়ে দেওয়া হয় আগুন। ঢাকায় পুলিশের সদর দফতরে আগুন লাগিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। বিক্ষোভকারী ছাত্ররা গণভবনে ঢুকে পড়ে শুরু করে ভাঙচুর, লুঠপাট। বিভিন্ন জিনিসপত্র লুঠ তো বটেই, রান্নাঘরে ঢুকে ভোজনও শুরু করে। প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি থেকে কেউ নিয়ে যায় হাঁস, কেউ নিয়ে যায় পোষা খরগোশ। নেমে পড়ে সুইমিংপুলে। ঢুকে পড়ে শয়নকক্ষেও। অনেকটা শ্রীলঙ্কার ঘটনার পুনরাবৃত্তি। মুজিবের মূর্তির মাথায় চেপে কয়েকজন মারতে শুরু করে হাতুড়ির ঘা। ঢাকার আওয়ামি লিগের অফিসে ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। আক্রান্ত হয় সংবাদমাধ্যমের অফিসও। কিছুক্ষণ আগেই সোশ্যাল মিডিয়ায় হাসিনা লিখেছেন, গণভবনে লুট হচ্ছে, বুকভরা কষ্ট নিয়ে চলে যাচ্ছি। হেরে গেলাম অপশক্তির কাছে। আবার দেখা হবে।
শনিবারই আন্দোলনরত ছাত্রদের প্রতি হাসিনা আহ্বান জানিয়েছিলেন তাঁর বাসভবনে এসে আলোচনায় বসার। দরকার হলে অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি মোটেই শান্ত হয়নি। উলটে পরিস্থিতি হয়ে ওঠে আরও অগ্নিগর্ভ। অবরোধ, সঙ্ঘর্ষ, গুলিতে রবিবার পর্যন্ত প্রাণ হারান প্রায় ৯৭ জন। সবমিলিয়ে মৃত্যুসংখ্যা ছাড়িয়ে যায় ৩০০। সোমবার হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে শুরু হয় মার্চ টু ঢাকা। তারপরেই এই পটপরিবর্তনের পালা। বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে। মানুষের মতামত নিয়েই তা হবে। সব হত্যার বিচার হবে। সেনাবাহিনীর উপরে আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি আশ্বস্ত করেছেন, দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হবে। রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের আবেদন জানানো হবে। বিক্ষোভকারীদের হিংসাত্যাগের আহ্বান জানিয়ে তাঁর আশ্বাস, সাধারণ মানুষের পাশে থাকবে বাহিনী। সূত্রের খবর, বিএনপি-সহ বিভিন্ন বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে ইতিমধ্যেই বৈঠক করেছেন সেনাপ্রধান। কে এই সেনাপ্রধান ওয়াকার? বাংলাদেশ মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে তাঁর প্রশিক্ষণ। পড়াশোনা মিরপুরের ডিফেন্স সার্ভিস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজে। ইংল্যান্ডের জয়েন্ট সার্ভিস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজেও প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন তিনি। ব্রিটেনের কিঙ্গস কলেজ, লন্ডন ইউনিভার্সিটি থেকে প্রতিরক্ষা বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন এই সেনাপ্রধান। ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন ওয়াকার।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে সোমবার সন্ধ্যাতেই সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বসেন বিদেশমন্ত্রী এবং বিদেশ সচিবের সঙ্গে। রাতেই মন্ত্রিসভার জরুরী বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। হাসিনার পদত্যাগের পর বাংলাদেশ এবং জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হয়য় বৈঠকে। বাংলাদেশের ঘটনার প্রেক্ষিতে ভারতের অবস্থান কী হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়। মঙ্গলবারই বিদেশমন্ত্রী বিবৃতি দিতে পারেন লোকসভায়। এদিনই বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে। এদিকে, বাংলাদেশে অস্থিরতার প্রেক্ষিতে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কড়া নজরদারি শুরু করেছে বিএসএফ।

Latest article