প্রতিবেদন : বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মূলে অন্য কোন দেশের ভূমিকা আছে? মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে সর্বদল বৈঠকে সরাসরি বিদেশমন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্করের কাছেই জানতে চেয়েছেন বিরোধী শিবিরের সাংসদরা৷ নয়াদিল্লিতে সরকারি সূত্রের দাবি, এর উত্তরে বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর হাসিনা সরকারের পতনের জন্য কোনও বিদেশি শক্তিকে দায়ী না করলেও সাফ জানান, এক পাকিস্তানি কূটনীতিক নিজের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের ডিপিতে বাংলাদেশের গণ আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে একাধিক ছবি পোস্ট করেছেন৷ ভারত সরকার এই মর্মে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীর মাধ্যমে, বিরোধী শিবিরের প্রতিনিধিদের জানান বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর৷ সর্বদল বৈঠকে উপস্থিত তৃণমূল কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বাংলাদেশ ইস্যুতে তাঁরা সরকারের পাশেই আছেন৷ এই ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকার যে পদক্ষেপই করুক না কেন, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সেই বিষয়ে অবহিত করতে হবে, দাবি জানান সুদীপ৷ বাংলাদেশের লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গের উপরে সব থেকে বেশি চাপ থাকছে, সেই বিষয়টিও তুলে ধরেন তিনি৷ এদিকে রাজ্যসভার তৃণমূলের দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, এই স্পর্শকাতর সময়ে পশ্চিমবঙ্গের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই চাপের মোকাবিলা করতে হবে আমাদের। কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত গোটা পরিস্থিতি সম্পর্কে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে সমস্ত বিষয়ে অবহিত করা।
উল্লেখ্য, এদিনের সর্বদল বৈঠকে ইন্ডিয়া জোটের সাংসদদের প্রশ্ন ছিল, ভারত সরকার বাংলাদেশ নিয়ে কী ভাবছে? কোন পথে এগোবে নয়াদিল্লি? এই প্রশ্নের উত্তরে বিদেশমন্ত্রী সাফ জানান, বাংলাদেশের গোটা পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর রাখা হচ্ছে৷ প্রতিনিয়ত পরিস্থিতি মনিটর করছেন আইবি, র’-র শীর্ষ কর্তারা৷ বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনের মাধ্যমে দ্রুত ভারতীয়দের এদেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও দাবি করেন বিদেশমন্ত্রী৷ এই প্রসঙ্গেই তিনি জানান, সরকারি হিসেবে এই মুহূর্তে বাংলাদেশে আটকে আছেন প্রায় ১৪ হাজার ভারতীয় নাগরিক৷ এদের মধ্যে প্রায় ৯ হাজার পড়ুয়া৷ দ্রুত এঁদের দেশে ফেরানো হবে বলেও সর্বদল বৈঠকে আশ্বাস দেন বিদেশমন্ত্রী৷ এই মুহূর্তে নয়াদিল্লিতেই আছেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সর্বদল বৈঠকে জানান জয়শঙ্কর৷ এই প্রসঙ্গেই বিদেশমন্ত্রীর দাবি, শেখ হাসিনাকে কিছু সময় দেওয়া হয়েছে তাঁর ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করার জন্য৷
আরও পড়ুন- অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশ, কুপিয়ে-পুড়িয়ে-গুলিতে খুন
তাৎপর্যপূর্ণ হল, এদিনের সর্বদল বৈঠকে বিরোধী শিবিরের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর যেভাবে পাকিস্তানি কূটনীতিবিদের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এবং পদ্মাপারের আন্দোলনের সমর্থন প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন, তা অত্যন্ত ইঙ্গিতবাহী বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷ ঘটনা হল, নয়াদিল্লিতে সরকারি সূত্রে দাবি জানানো হয়েছে যে, ভারতীয় গোয়েন্দাদের হাতে সুনির্দিষ্ট ইনপুট এসেছে যেখানে বাংলাদেশের আন্দোলনের মূল কারিগর ছাত্র সংগঠন ইসলামি ছাত্র শিবির বা আইসিএসকে দায়ী করা হচ্ছে৷
এদিনের সর্বদল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়৷ দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে তিনি বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারত সরকারের পাশে থাকার বার্তা দেন৷ দলনেত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথামতোই পশ্চিমবঙ্গের ভৌগোলিক অবস্থানের ব্যাখ্যা দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীকে অবহিত করার দাবি তোলেন সুদীপ৷ সূত্রের দাবি, এই মর্মে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে আশ্বস্ত করেন বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর৷ সুদীপের মতোই বাংলাদেশ ইস্যুতে সরকারকে সমর্থন করার কথা জানান বৈঠকে উপস্থিত সব দলের শীর্ষ স্থানীয় সংসদীয় প্রতিনিধিরা৷ বৈঠকে ভারত সরকারের তরফে জানানো হয় দেশের সীমান্ত অটুট রাখতে সচেষ্ট কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী৷
এরপরে প্রথমে রাজ্যসভা ও পরে লোকসভায় বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে বিবৃতি দেন বিদেশমন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্কর৷ তাঁর কথায়, বাংলাদেশের রাজনীতিতে গভীর মেরুকরণ হয়েছে, এই বছরের নির্বাচনের সময় থেকেই৷ লাগাতার হিংসা হয়েছে বাংলাদেশে৷ আমরা লাগাতার বাংলাদেশের পরিস্থিতির দিকে নজর রেখেছিলাম, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করার কথা বলেছিলাম