ব্যুরো রিপোর্ট : বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বৈঠক হল নবান্নে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য পুলিশের ডিজি, মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিবকে নিয়ে বৈঠক করেন মঙ্গলবার। মূলত গোটা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হয়। সীমান্তবর্তী এলাকায় নজরদারি রাখার কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়াও সকলের উদ্দেশেই তিনি বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে যেন কোনওরকম পোস্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় না করা হয়। শান্তি যেন বজায় থাকে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনেই তৎপরতার সঙ্গে কাজ করছে পুলিশ প্রশাসন। সীমান্তগুলিতে আটকে পড়া পণ্যবাহী ট্রাকগুলিকেও ফেরানো হয়েছে দ্রুততার সঙ্গে। চ্যাংরাবান্ধা ও হিলি সীমান্ত হয়ে সোমবার রাতে মোট ২৯৭ জন আটকে পড়া ট্রাকচালককে ফেরানো হয়েছে।
আরও পড়ুন- দশ বছর পরেই পোস্টিং নিজের জেলায়, গ্রামে মহিলা পুলিশকর্মীর সংখ্যাবৃদ্ধিতে উদ্যোগী রাজ্য
মেখলিগঞ্জের বাসিন্দা মনসুর আলি বলেন, বাংলাদেশের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে কার্ফুর নির্দেশে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়েছে৷ কীভাবে দেশে ফিরবেন তা নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে ছিলেন৷ প্রশাসনকে অসংখ্য ধন্যবাদ৷ কোচবিহারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সন্দীপ গড়াই বলেন, ১৯০ জন ট্রাকচালককে নিরাপদে ফেরানো হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় বাড়তি নজর রাখা হচ্ছে। হিলি সীমান্ত দিয়ে ফেরানো হয়েছে ১০৭ জন ট্রাকচালক ও খালাসিদের। মঙ্গলবার সকালে হিলি সীমান্তের শূন্যরেখায় এসে বিডিআর এবং বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল ভারতীয় ব্যবসায়ীদের ফের বাংলাদেশে পণ্য রফতানির জন্য অনুরোধ জানায়। হিলি এক্সপোটার্স অ্যান্ড কাস্টম ক্লিয়ারিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন-এর সহ সভাপতি রাজেশ কুমার আগরওয়াল জানিয়েছেন, বাংলাদেশে পণ্য নিয়ে আটকে থাকা কিছু লরি ভারতে ফিরলে তবে তাঁরা ফের পণ্য রফতানি করবেন। বাংলাদেশে পণ্য নিয়ে গিয়ে আটকে থাকা ১টি ট্রাক মঙ্গলবার হিলি সীমান্ত দিয়ে ভারতে ফেরে। সেই সঙ্গে লরির চালক ও খালাসি সমেত মোট ১০৭ জন বাংলাদেশ থেকে এদিন ভারতে ফিরেছেন।
আরও পড়ুন-প্রতিদিন ৩ লক্ষ ডিম উৎপাদন রাজ্যের তৈরি ফার্মে
এদিকে, বাংলাদেশের এই পরিস্থিতির কারণে ভারত-বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্তে জারি হয়েছে হাই অ্যালার্ট। উত্তর দিনাজপুর জেলার বেশ কিছু এলাকা জুড়ে রয়েছে বাংলাদেশ সীমান্ত। হেমতাবাদ ব্লকের মালন সীমান্তের বিস্তীর্ণ অংশ জুড়ে রয়েছে কাঁটাতার। কাঁটাতারের এপারেই বাংলাদেশ। যদিও বাংলাদেশের অস্থির পরিস্থিতির জেরে কোনও প্রভাব পড়েনি এপারের মালন এলাকায় আর পাঁচটা দিনের মতই সমস্ত কিছু স্বাভাবিক। খোলা রয়েছে বাজার, দোকান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কাঁটাতারের ওপারে ভারতীয় ভূখণ্ডে চাষবাসের জন্য যেতে হয় এলাকার কৃষকদের। সেই কাজেও কোনও প্রভাব নেই। রোজ খাতায় নাম লিখে যেমন ওপারে জমিতে কাজ করতে যান তেমনভাবে এখনও যাচ্ছেন সকলেই। অপরদিকে উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জের ব্লকের রাধিকাপুর ও অনন্তপুর অঞ্চলে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষেরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। মঙ্গলবার অনন্তপুর অঞ্চলের পচাকান্দর সীমান্তবর্তী গ্রাম স্বাভাবিক থাকলেও এলাকার মানুষেরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। পাশাপাশি মঙ্গলবার ফুলবাড়ি হয়ে আসা রুবেল নামে এক বাংলাদেশি সপ্তাহ দুয়েকের জন্য জলপাইগুড়িতে আত্মীয়ের বাড়িতে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। রুবেলের কথায়, ‘আমার মতো অনেকেই পালিয়ে গিয়েছেন। আমাদের নেতা-কর্মীদের খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। আর যাই হোক এরা ছাত্র হতে পারে না।’