প্যারিস, ৭ অগাস্ট : গোটা দেশ তাকিয়ে ছিল তাঁর দিকে। বুধবার রাতেই অলিম্পিকে মেয়েদের কুস্তির ৫০ কেজি ফ্রিস্টাইল বিভাগের ফাইনালে নামার কথা ছিল ভারতের তারকা কুস্তিগির বিনেশ ফোগটের। কিন্তু তার আগেই হৃদয় ভাঙল ভারতবাসীর। বিনেশকে নিয়ে স্বপ্নের অপমৃত্যু। মিলল দুঃসংবাদ। প্যারিসের স্থানীয় সময় সকালে ওজন মাপার সময় দেখা যায়, বিনেশের ওজন ১০০ গ্রাম বেড়ে গিয়েছে। নিয়ম লঙ্ঘন করায় অলিম্পিক থেকে ছেঁটে ফেলা হল বিনেশকে। ফাইনালে নামতে পারলেন না। রুপো হাতছাড়া তো হলই, এমনকী কোনও পদক ছাড়াই খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে ‘দঙ্গল’ কন্যাকে। নিয়ম অনুযায়ী, ওয়েট ক্যাটেগরি ইভেন্টের দু’দিন অ্যাথলিটের ওজন নির্ধারিত পরিমাপের মধ্যে না থাকলে তিনি প্রতিযোগিতায় নামার এবং পদক পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হন না। ইউডব্লুডব্লু-র নিয়ম অনুযায়ী, বিনেশ প্রতিযোগিতা শেষ করছেন সবার শেষে।
আরও পড়ুন-গম্ভীরের লঙ্কা-ডুবি প্রথম সিরিজেই
এখানেই বিতর্ক। ঘটনায় উত্তাল দেশ। বিনেশের ডিসকোয়ালিফাই হওয়ার পিছনে রহস্যের গন্ধ! কুস্তি ফেডারেশনের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণ সিং শরণের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে তাঁর অপসারণের দাবিতে প্রতিবাদ আন্দোলনে নেমেছিলেন বজরং পুনিয়া, সাক্ষী মালিকরা। তাঁদের সঙ্গী ছিলেন বিনেশও। রাজধানীর রাজপথে লাঞ্ছিত হতে হয় বিনেশদের। সেই মেয়ে পদক পেলে কেন্দ্রের শাসক দলের মুখ পুড়ত। প্রশ্ন উঠছে, আইওসি-কে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর চক্রান্ত করেই কি বিনেশকে অলিম্পিকের মঞ্চ থেকে ছিটকে দেওয়া হল?
প্রশ্ন আছে আরও। সেমিফাইনালের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ওজন বাড়ল কীভাবে? বাড়তি ১০০ গ্রাম ওজন কমানোর চেষ্টা কি ঠিকমতো করা হয়নি? ভারতীয় দলের সাপোর্ট স্টাফদের ভূমিকা তাহলে কী ছিল? নক আউট পর্বে তিনটি বাউটে সব ঠিক থাকার পর কেন ফাইনালের আগেই বিপর্যয়? পিছনে কি ষড়যন্ত্র? জড়িত কি আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি)? দায় এড়াতে কি পারে ভারতীয় অলিম্পিক সংস্থা (আইওএ)? যদিও বিনেশ ইস্যুতে সরকারিভাবে আইওসি ও বিশ্ব কুস্তি সংস্থার কাছে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে আইওএ। ভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আর্জি অবশ্য খারিজ করেছে বিশ্ব কুস্তি সংস্থা।
ফাইনালের আগে সারারাত বিনেশের ওজন কমানোর চেষ্টা হয়েছে বলে দাবি। সারারাত ঘুমোননি তারকা কুস্তিগির। মঙ্গলবার রাতেই ওজন মাপা হয়েছিল বিনেশের। দেখা যায় প্রায় ২ কেজি ওজন বেড়ে গিয়েছে। সারারাত জগিং, স্কিপিং এবং সাইক্লিং করেছেন ২৯ বছরের চ্যাম্পিয়ন কুস্তিগির। খাবার, জল কিছুই খাননি। ছোট ও হালকা পোশাক পরে থেকেছেন। চুলও কাটিয়ে দিয়েছেন সাপোর্ট স্টাফরা। শরীর থেকে রক্তও বার করেছেন। তাতেও বুধবার সকালে ওজন ৫০ কেজির মধ্যে রাখতে পারেননি। অলিম্পিক থেকে বাতিল হওয়ায় প্রচণ্ড ভেঙে পড়েন বিনেশ। শরীরে জল কমে যাওয়ায় ডিহাইড্রেশনের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে হাসপাতালেও ভর্তি করতে হয়। বিনেশের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে মানসিকভাবে শক্তিশালী থাকার পরামর্শ দিয়েছেন আইওএ প্রধান পিটি ঊষা।
আরও পড়ুন-গম্ভীরের লঙ্কা-ডুবি প্রথম সিরিজেই
ভারতীয় দলের চিফ মেডিক্যাল অফিসার দীনশ পারদিওয়ালা জানিয়েছেন, বিনেশের ওজন কমানোর জন্য সব রকম চেষ্টা করেছিলেন তাঁরা। তিনি বলেন, ‘‘কুস্তিগিরদের একটা সুবিধা থাকে। খুব দ্রুত ওজন কমাতে-বাড়াতে পারে তারা। বিনেশেরও ওজন কমানো হয়েছিল। কিন্তু খুব বেশি কমালে শরীর দুর্বল হয়ে যায়। ওর পুষ্টিবিদ বলেছিল, দেড় কেজি পুষ্টি থাকলেই খেলতে পারবে। সেটা মাথায় রেখেই আমরা ওজন কমানোর চেষ্টা করি। বিনেশ ৫৩ কেজি বিভাগে লড়ে। এখানে তিন কেজি ওজন কমিয়ে নেমেছিল। তাই ওজন ধরে রাখা সহজ ছিল না।’’
আরও পড়ুন-মধ্যপ্রদেশের কুনো জাতীয় উদ্যানে ফের মৃত্যু হল চিতা শাবকের
কুস্তিতে ৫০ কেজি ফ্রিস্টাইল বিভাগ বিনেশের ইভেন্টই ছিল না। তাঁর আসল ইভেন্ট ৫৩ কেজি বিভাগ। কিন্তু রাজধানীর রাজপথে প্রতিবাদ আন্দোলনের জেরে প্রস্তুতি নিতে না পারায় ৫৩ কেজির ট্রায়ালে নামতে পারেননি বিনেশ। তাঁর জায়গায় অলিম্পিকে ৫৩ কেজি বিভাগে যোগ্যতা অর্জন করেন অন্তিম পাঙ্ঘাল। ট্রায়ালে পাঙ্ঘালকে হারাতে পারলে পছন্দের বিভাগে নামতে পারতেন বিনেশ। কিন্তু প্র্যাকটিসের মধ্যে না থাকায় পারেননি। তাছাড়া ফেডারেশন কর্তাদের একাংশ প্রথম থেকে বিনেশকে ৫৩ কেজি বিভাগে অংশগ্রহণে বাধা দিয়ে এসেছেন। একপ্রকার বাধ্য হয়েই ৫০ কেজি বিভাগকে বেছে নিতে হয় তাঁকে।