রেশন বন্ধ করতে চাইছে কেন্দ্র। ২০১৪-তে ক্ষমতায় আসার পর থেকে মানুষের জন্য কাজ করার বদলে মোদি সরকার ক্রোনি ক্যাপিটালিস্টদের তাঁবেদারি করতে বেশি আগ্রহী। সাধারণ মানুষ তাদের কাছে স্রেফ ভোটার। তার বেশি কিছু নয়। সামাজিক দায়বদ্ধতার ক্ষেত্রে ব্যয়বরাদ্দ কমিয়ে ক্রমশ জনবিচ্ছিন্ন হচ্ছে এই সরকার। অন্যদিকে, রাজ্যে জননেত্রীর পরিচালনাধীন সরকার আরও বেশি-বেশি করে মানুষের প্রতি সামাজিক দায়বদ্ধতা প্রকাশ করছে।
রেশন বন্ধ করার ঘোষণা করে কেন্দ্র বুঝিয়ে দিয়েছে গরিব মানুষের দায়িত্ব তারা নেবে না, নিতে চায় না।
গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোতে এই গরিবগুর্বো মানুষগুলোর হাতে একটাই অস্ত্র। ভোটাধিকার। সেই অধিকার প্রয়োগ করেই তারা এবার বিজেপিকে উচিত শিক্ষা দিতে পারে। সেই সময় এসে গিয়েছে।
গরিব মানুষ যে তাদের প্রতি বঞ্চনার বিরুদ্ধে রায় দেবে জোটবদ্ধ হয়ে, সেই প্রশ্নে একটাই প্রতিবন্ধকতা। নেতৃত্ব দেবে কে? এই প্রশ্নের একটাই উত্তর। এ সময়ে খেটে-খাওয়া গরিব মানুষদের নেতৃত্বদানের ক্ষমতা একমাত্র জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই আছে।
করোনার সময়। কেন্দ্র পাঁচ কেজি চাল দেয়। অতিমারির প্রহরে তার সঙ্গে অতিরিক্ত পাঁচ কেজি চাল দেওয়া শুরু করেছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। প্রধানমন্ত্রীর গরিব কল্যাণ যোজনা প্রকল্পে ২০২০ থেকে শুরু হয় এই চাল দেওয়া। আর ২০২১-এর নভেম্বরে এসে সেই প্রকল্পে দাঁড়ি টানা হচ্ছে। করোনা কাটেনি। অথচ প্রকল্প চালু থাকছে না, এমন ঘোষণা। তার মানে গরিব মানুষের পাশে দাঁড়াতে নয়, স্রেফ লোকদেখাতে ওই প্রকল্প চালু করেছিল কেন্দ্র।
তৃণমূল কংগ্রেস একদিকে কেন্দ্রকে অনুরোধ করেছে প্রকল্পটি চালিয়ে যাওয়ার জন্য। অন্যদিকে ১৬ নভেম্বর থেকে রাজ্যে চালু হয়ে গিয়েছে ‘দুয়ারে রেশন’ প্রকল্প। এ এক অনন্য প্রকল্প। রাজ্যে বিনামূল্যে রেশন প্রাপকের সংখ্যা ১০ কোটি ৩৩ লক্ষ। এর মধ্যে ৬ কোটি ১ লক্ষ মানুষকে কেন্দ্র অতিরিক্ত পাঁচ কেজি করে রেশন দিচ্ছিল এক বছর।
আরও পড়ুন-গোয়ায় হবে বাংলা মডেল, ঘোষণা ফালেরিওর
কেন্দ্রের প্রকল্প বন্ধ হলেও পশ্চিমবঙ্গে বিনামূল্যে রেশনদান প্রকল্প চালু থাকছে এবং থাকবে। দেশের অন্য রাজ্যগুলিতে এমন ব্যবস্থা নেই। কেন্দ্র রেশন বন্ধ করে দিলে পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া অন্য রাজ্যে গরিব মানুষকে টাকা দিয়েই রেশনসামগ্রী কিনতে হবে।
বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার আদতে বেচারাম সরকার। পেট্রোল-ডিজেলের দাম বাড়িয়ে অতিরিক্ত ৪ লক্ষ কোটি টাকা পকেটস্থ করেছে এই সরকার। ৫০ টাকারও বেশি দাম বাড়িয়ে আর ৫ টাকা দাম কমিয়ে এখন বাহবা কুড়ানোর খেলায় নেমেছে এই সরকার।
পশ্চিমবঙ্গে গোহারা হেরেছে গেরুয়া পার্টি। উত্তরপ্রদেশে ভোট আসছে। সেখানকার মানুষের ক্ষোভের আগুনে জলসিঞ্চন করতে হবে। তাই এ-সব দাম কমানোর নাটক। কিন্তু পেট্রোপণ্যের দাম বাড়িয়ে যে অতিরিক্ত আয় হল তাদের, সেখান থেকে রাজ্যগুলোকে তাদের প্রাপ্য মেটানোর, জনস্বার্থে অতিরিক্ত ব্যয় করার বন্দোবস্ত করার কোনও ব্যবস্থা নিতে তারা আগ্রহী নয়। তারা আগ্রহী নতুন সংসদ ভবন তৈরির জন্য অর্থব্যয়ে, প্রধানমন্ত্রীর নয়া বাসভবন নির্মাণের পেছনে বিপুল ব্যয়ে, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে সংসদে যাওয়ার জন্য সুরক্ষিত সুড়ঙ্গ নির্মাণের জন্য বেলাগাম খরচে।
কর্পোরেট স্বার্থে তিনটি কৃষি বিল। তার বিরুদ্ধে এত প্রতিবাদ কৃষকদের। সরকার তাদের কথায় কর্ণপাত করতে নারাজ। ইংরেজ আমলে কৃষকদের ওপর অত্যাচার করত নীলকর সাহেবরা। নয়া ব্যবস্থায় ধনী পুঁজিপতির শোষণ বঞ্চনার শিকার হবে কৃষিজীবী মানুষেরা। দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীলদর্পণ’ নাটকের নতুন সংস্করণ তৈরির দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন মোদি-শাহরা। বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে হাজার হাজার কৃষক আত্মহত্যা করছেন। তা নিয়ে কোনও হেলদোল নেই ওঁদের। উল্টে কৃষকদের আন্দোলনে পুলিশি অত্যাচার, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সুপুত্রের গাড়িচাপা দিয়ে কৃষক হত্যার ঘটনা— এ-সব ঘটেই চলেছে। সুপ্রিম কোর্টের আদেশে এই অন্ধকার প্রহরে কিঞ্চিৎ আশার আলো দেখা দিলেও পুরোপুরি আলোকোজ্জ্বল পরিবেশ তৈরির ইঙ্গিত এখনও অমিল।
সত্যি! কী বিচিত্র এই দেশ। শুধু কৃষক নয়, নয়া শ্রম আইনে অসুবিধার মধ্যে শ্রমিকরাও। মলিক পক্ষকে তাবৎ সুবিধাদানের আয়োজন এই আইনে। আন্দোলনের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে শ্রমিকদের কাছ থকে। আর মালিকপক্ষকে দেওয়া হয়েছে যেকোনও সময়ে ছাঁটাইয়ের অধিকার। পরিবহণ শিল্পের ওপর একধাক্কায় চপিয়ে দেওয়া হয়েছে করের বোঝা। অটো ট্যাক্সি বাস, এ-সব যাঁরা চালান তাঁদের জরিমানার পরিমাণ ভালরকম বাড়িয়ে গরিব মানুষের পকেটকাটার ব্যবস্থা হয়েছে। নতুন আইনের ফলে এই গণপরিবহণের সঙ্গে যুক্ত খেটে-খাওয়া মানুষগুলোর অবস্থা নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো হবে, এ-কথা বলাই বাহুল্য।
গ্রামের মানুষদের জন্য ১০০ দিনের কাজ প্রকল্প। সেই প্রকল্পের রূপায়ণে সেরা পশ্চিমবঙ্গ। সেই প্রকল্পে ব্যয় কমিয়ে গরিবের পেটে লাথি মারার ব্যবস্থা করেছে গেরুয়া পার্টির সরকার। পশ্চিমবঙ্গ থেকে কেন্দ্রীয় সরকার যে পরিমাণ অর্থ তুলে নিয়ে যাচ্ছে, হিসাবমতো তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যদি পশ্চিমবঙ্গকে তার বরাদ্দ অর্থ দেওয়া হত, তবে নিঃসন্দেহে রাজ্যের অগ্রগতি আরও ত্বরান্বিত হত। কিন্তু তা তো এরা করবে না। কারণ, বাংলার উন্নয়ন এরা চায় না। এরা বাংলা-বিরোধী।
৮৬ হাজার কোটি টাকা প্রাপ্য পশ্চিমবঙ্গের, সেই টাকা দিতে আগ্রহ নেই এদের। এদের যত আগ্রহ বাম আমলে নেওয়া ঋণের পাশাপাশি আসলের টাকাও রাজ্যের অনুমতি ছাড়াই কেটে নেওয়ার ব্যাপারে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধ মেনে সুদ নেওয়া বন্ধ রাখার ব্যাপারে আগ্রহী নয় এরা, অথচ বাংলাদেশ কিংবা নেপালকে সে-দেশের পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য অনেক কম সুদে ঋণ দিতে প্রবল আগ্রহী এরা। শুধু রেশন বন্ধ নয়। সারা দেশে গরিবগুর্বোকে আরও পিষে মারার ষড়যন্ত্র করছে কেন্দ্রীয় সরকার।
অন্যদিকে, রাজ্যের অর্থনীতিতে আশার আলো দেখাচ্ছে তাজপুরের বন্দরপ্রকল্প, দেওচা-পাঁচামিতে কয়লা উত্তোলন প্রকল্প, অশোকনগরের তৈল-উত্তোলন প্রকল্প, রঘুনাথপুরে ৭২ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ। গরিব মানুষের স্বার্থরক্ষায় অগ্রণী মা-মাটি-মানুষের সরকার।
তফাত ছিল। তফাত থাকবে।