সংবাদদাতা, বর্ধমান : আড়াই ফুট উচ্চতার স্ত্রীকে কোলে নিয়ে চিকিৎসা করাতে আসতেন স্বামী। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসকদের অসাধ্যসাধনে সুস্থ কন্যাশিশুর জন্ম দিলেন ডোয়ার ফ্রিজম হুইলচেয়ার সিনড্রোমে আক্রান্ত প্রসূতি। শারীরিক গঠনের জন্য তিনি চলতেই পারেন না। তার উপর কার্ডিয়াক পালমোনারি অ্যারেস্ট হওয়ার ঝুঁকি ছিল। প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা বাজিমাত করলেন। বর্তমানে মা ও শিশু দুজনই সুস্থ। বিরল এই কৃতিত্বের রেকর্ড নথিভুক্তকরণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ।
আরও পড়ুন-উত্তরের উন্নয়নে সাড়ে ৮০০ কোটি রাজ্যের
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলী জামালপুর এলাকার বাসিন্দা শিখা মাঝি জটিল ডোয়ার ফ্রিজম সিনড্রোমে আক্রান্ত। তাঁর শরীরের নিম্নাংশের গঠন স্বাভাবিক নয়। যার ফলে নিজে থেকে তিনি হাঁটাচলাও করতে পারেন না। শারীরিক এই প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও নিজের পরিবারের বাধা অতিক্রম করে প্রায় ৩ বছর আগে শিখা মাঝিকে বিয়ে করেন পূর্বস্থলীরই বাসিন্দা শক্তি মাঝি। গত বছর তিনি সন্তানসম্ভবা হতেই বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের গাইনি বিভাগের ডাক্তার কেপি দাসকে দেখানো হয়। জটিল পরিস্থিতির কথা বুঝতে পেরে তিনি বর্ধমান মেডিক্যালে চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দেন। এরপর বেশ কয়েক মাস একপ্রকার কোলে করেই স্ত্রী শিখাকে চিকিৎসা করাতে নিয়ে আসতেন শক্তি। গত মঙ্গলবার প্রসব যন্ত্রণার জন্য শিখাকে ভর্তি করা হলে সঙ্গে সঙ্গে ৬ সদস্যের চিকিৎসকের দল গঠন করে সিজারের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। কিন্তু যেহেতু শিখার উচ্চতা মাত্র আড়াই ফুট এবং তাঁর নিম্নাংশ যেহেতু কাজ করে না, তাই প্রসব অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। সেক্ষেত্রে কার্ডিয়াক পালমোনারি আরেস্টের ঝুঁকি থাকায় মা ও সন্তান উভয়েরই জীবন সঙ্কট হতে পারত। এখানেই অসাধ্যসাধন করে বাজিমাত করেন বর্ধমান মেডিকেলের চিকিৎসক মলয় সরকার, কেপি দাস, এসপি দাস, সুমন্ত ঘোষ মৌলিকদের নিয়ে গঠিত ৬ সদস্যের মেডিক্যাল টিম। বিকল্প অ্যানাস্থিসিয়া পদ্ধতি অবলম্বন করে সিজার করার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা এবং সাধারণ সময়ের মতো সময় নিয়েই সিজার সম্পূর্ণ করা হয়। জন্ম নেয় ফুটফুটে কন্যাসন্তান। শারীরিক ভাবে বর্তমানে মা ও মেয়ে দুজনই সুস্থ। শক্তি জানিয়েছেন, শিখাকে বিয়ে করাটা তাঁর কাছে চ্যালেঞ্জের ছিল। তার জন্য নিজের বাড়িও ছাড়তে হয়েছে। তবে তিনি স্ত্রীকে বোঝা ভাবেননি। আজ দুজনই খুব খুশি। কন্যাশ্রী দিবসে সরকারি হাসপাতালে জন্ম হওয়ায় মেয়ের নাম কন্যাশ্রী রাখার ইচ্ছা শিখার।