অনন্ত গুছাইত, নয়াদিল্লি : দেশজুড়ে বিতর্ক তৈরি করা তিন কৃষি আইন লাগাতার গণ আন্দোলনের চাপে প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছে কেন্দ্রের মোদি সরকার। একনজরে দেখে নেওয়া যাক, কী আছে বিতর্কিত এই তিনটি আইনে।
প্রথমটি হল : কৃষিপণ্য লেনদেন এবং বাণিজ্যিক উন্নয়ন আইন। এতদিন কৃষকরা (মূলত পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান-সহ কয়েকটি রাজ্যে) স্থানীয় মান্ডিতে ফসল নিয়ে যেতেন। সেখানে ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম দামে (ন্যূনতম দাম নির্ধারণের একটি নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে যাকে সরকার ও কৃষক উভয়পক্ষ মান্যতা দেয়) ফসল কিনে গুদামজাত করত। সেখান থেকে দেশের নানা প্রান্তে রেশন দোকানে (আদতে যা ফেয়ার প্রাইস শপ) পাঠানো হত। দেশের প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ এই খাদ্যের ওপর নির্ভরশীল। ফুড কর্পোরেশন ছাড়াও অন্যান্য ব্যবসায়ী মান্ডি থেকে ফসল কিনতে পারেন। কিন্তু ওই ন্যূনতম দামেই তা কিনতে হবে। বিতর্কিত নতুন আইনে বলা হয়েছে, স্থানীয় মান্ডি থেকে বহুদূরে পণ্য বিক্রয়ের অধিকার দেওয়া হবে। উৎপাদন শুরুর আগে বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিতে যে মান ও দাম নির্ধারিত হবে সেই অনুযায়ী কৃষক কোম্পানির কাছে ফসল বিক্রি করবেন। কৃষিকাজে ঝুঁকি রয়েছে। বন্যা, খরা ইত্যাদি লেগেই থাকে। সরকার নির্ধারিত দামে প্রতি বছর এই ক্ষতির অংশ ধরা থাকে। নতুন আইনে তার স্থান নেই।
আরও পড়ুন : সংসদে কৃষি আইন বাতিল হবে কোন পথে?
দ্বিতীয়টি হল : কৃষিপণ্যের পূর্বনির্ধারিত দাম সুনিশ্চিত করা সহ কৃষকের ক্ষমতায়ন ও সুরক্ষা আইন। এই আইনে কোম্পানির চাহিদা অনুযায়ী কৃষকরা তেমন ফসল চাষেই বাধ্য হবেন। কোম্পানি বীজ, সার, কীটনাশক, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ করবে। চুক্তি হবে জমির মালিকের সঙ্গে। এই আইনে বলা হয়েছে, চুক্তি সংক্রান্ত কোনও মতান্তর হলে কৃষক আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবেন না। তাঁকে যেতে হবে সাবডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেটকে নিয়ে গঠিত কমিটির কাছে। সেখানে সমাধান না হলে এপেলেট অথরিটির কাছে। ওই কমিটিতে থাকবে কোম্পানির প্রতিনিধি।
তৃতীয়টি হল : অত্যাবশ্যকীয় পণ্য (সংশোধন) আইন। ১৯৫৫ সালে ঘোষিত ‘অত্যাবশ্যকীয় পণ্য’ তালিকা থেকে এবার ধান, গম, ভুট্টা, জোয়ার, বাজরা, ডাল, সরষে, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, আলু বাদ দেওয়া হয়। এতদিন রাজ্য সরকার যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, বন্যা, খরা, অত্যধিক মূল্যবৃদ্ধির মতো বিপর্যয়ের সময় এইসব পণ্যের গুদামজাত করার সর্বোচ্চ পরিমাণ ও মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারত। বিতর্কিত কৃষি আইনে তা থাকবে না। এর ফলে আদানি-আম্বানির মতো একচেটিয়া পুঁজিপতিরা যত ইচ্ছে খুশি খাদ্যশস্য মজুত করতে পারবে। কৃষকদের সমস্যা হলেও কেন্দ্র বা রাজ্য কোনও সরকারের হস্তক্ষেপ চলবে না।