শৃঙ্গ জয়ের নেশা
মাউন্ট এলব্রুসে এক বাঙালি
কেউ জলের সঙ্গে বন্ধুতা পাতান, কেউ বন্ধুতা পাতান জঙ্গলের সঙ্গে। উচ্চতার সঙ্গে বন্ধুতা পাতিয়েছেন শুভম চট্টোপাধ্যায়। ২৮ বছর বয়সি এই পর্বতারোহী থাকেন বাংলায়, হুগলির হিন্দমোটরে। সম্প্রতি তিনি ইউরোপের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এলব্রুসে দেশের পতাকা উড়িয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এই শৃঙ্গে আরোহণ করা প্রথম বাঙালিও তিনি। শৃঙ্গের দুর্গম উত্তর দিক থেকে আরোহণ করা এবং অবতরণ করা পর্বতারোহী হিসেবে তিনিই প্রথম ভারতীয় বলে জানা গেছে। ১ জুলাই রাশিয়ার ককেশাস পর্বতমালার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ, আগ্নেয় পর্বত মাউন্ট এলব্রুস অভিযানে রওনা দিয়েছিলেন শুভম। ৯ দিনের কঠিন পরিশ্রমের পর জয় করেন ৫৬৪২ মিটার উচ্চতায় পর্বত শৃঙ্গটি। তুষারঝড় থেকে শুরু করে বরফের ফাটল প্রভৃতি নানারকম বাধা এসেছে আরোহণের সময়ে। পুড়ে গেছে মুখ। তবু হার মানেননি। শেষপর্যন্ত সব বাধা পার করে ৯ জুলাই পাহাড়ের শিখরে তেরঙ্গা পতাকা উড়িয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন-পাশে বজরং-সাক্ষী-সহ অনেকেই, বিমানবন্দরে মানুষের ঢল
কথা হল তাঁর সঙ্গে। শুভম জানালেন, ‘মাউন্ট এলব্রুস রাশিয়ায় অবস্থিত। শৃঙ্গটি জয় করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। বহু বাধা পেরিয়ে আমি সফল হয়েছি। প্রথম ভারতীয় হিসেবে এই দুর্গম পর্বত শৃঙ্গের উত্তর দিক দিয়ে আরোহণ করে আবার উত্তর দিক থেকেই নিচে নেমেছি। এর আগে অন্য একজন ভারতীয় উত্তর দিক থেকে আরোহণ করলেও, অবতরণ করেছিলেন দক্ষিণ দিক দিয়ে।’
জয় করেছেন কিলিমাঞ্জারো
ইতিপূর্বেই আফ্রিকার সর্বোচ্চ শিখর কিলিমাঞ্জারো অভিযান সফল হয়েছে তাঁর। ফেব্রুয়ারি মাসে। ওটা ছিল ফ্রি স্ট্যান্ডিং মাউন্টেন। উচ্চতা ১৯৮০০ ফুট। কঠিন ছিল অভিযান। এবার হয়ে গেল এলব্রুসও। আগামীতে জয় করবেন আরও অনেক শৃঙ্গ। সেই লক্ষ্যেই চলছে জোরদার অনুশীলন। পর্বতারোহণের প্রতি আকৃষ্ট হলেন কীভাবে? শুভম জানালেন, ‘আমি বেড়াতে খুব ভালবাসি। ছোটবেলায়, দুই বছর বয়স থেকেই পরিবারের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছি। দার্জিলিং দিয়ে শুরু। তারপর আরও অনেক জায়গায়। একটু বড় হওয়ার পর ভাবলাম, ঘোরাঘুরি তো হচ্ছেই, এবার নেচারকে আরও একটু কাছ থেকে দেখতে হবে। ২০১২ সাল নাগাদ আমাকে ট্রেকিংয়ের নেশা ধরিয়েছিলেন আমার এক বন্ধুর বাবা। প্রথমে যাই সান্দাকফু। বুঝলাম ঘোরাটা একরকমের ব্যাপার, ট্রেকটা আরেকরকম। সত্যি বলতে কী, ট্রেকটা আমার সোজাই লাগছিল। তারপর কঠিন কিছু চেষ্টা করার কথা ভাবলাম। মাথায় এল পর্বতারোহণের কথা।’ কোন সময়? শুভম জানালেন, ‘২০২০ সালে। আমি ট্রেনিং নিয়েছি অরুণাচল প্রদেশের একটি কেন্দ্রে। ট্রেনিংয়ের কারণেই আমি বড় বড় শৃঙ্গ অভিযানের অনুমতি পাচ্ছি। একে একে জয় করেছি ভারতের বিভিন্ন শৃঙ্গে। বেশিরভাগই হিমালয় পর্বতমালার।’
আরও পড়ুন-কালীঘাটকে সমীহ ডায়মন্ড হারবারের
কিলিমাঞ্জারো জয় করে ফেরার পর শুভম প্র্যাকটিসে গিয়েছিলেন হিমাচলের কয়েকটি জায়গায়। এগারো জনের মধ্যে তাঁদের পাঁচজন উঠতে পেরেছিলেন বিভিন্ন শৃঙ্গে। ভারতের মধ্যে হিমাচলের ৬১০০ মিটারের মাউন্ট ইউনামে উঠেছেন শুভম। তারপর প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন ইউরোপের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এলব্রুস অভিযানের জন্য। শৃঙ্গটি জয় করার পর কীরকম অনুভূতি হচ্ছিল? শুভম বললেন, ‘যখন রাশিয়া তথা ইউরোপের সর্বোচ্চ শৃঙ্গটি জয় করলাম, তখন অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছিল। সেটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। ওখানে তাপমাত্রা ছিল মাইনাস টেন। সেই মুহূর্তে এতটাই উত্তেজিত ছিলাম যে, প্রচণ্ড গরম লাগছিল। ওই চূড়ায় দুটো দিক থেকে ওঠা যায়। আমি প্রথম ভারতীয় হিসেবে উত্তর দিক থেকে উঠে উত্তর দিক থেকেই নেমেছি। আরেকটা পথ আছে দক্ষিণ দিক দিয়ে। সেইদিক দিয়ে ওঠা অনেক সহজ। দড়িপথ আছে, হোটেল আছে। অনেক সুবিধা। তুলনায় উত্তর দিকের পথ অনেক কঠিন। নদী পেরোতে হয়, তাঁবু খাটাতে হয়, নিজেকে রান্না করে খেতে হয়। আসলে পর্বতারোহণ ব্যাপারটাই বিপজ্জনক। রাস্তা দুর্গম। আছড়ে পড়ে তুষার ঝড়। পরিবেশ পরিস্থিতি যে কোনও সময় প্রতিকূল হতে পারে। ঘটে যেতে পারে বিপদ। যতই ক্লান্তি আসুক, শরীর খারাপ লাগুক, ওঠার সময় প্রতি মুহূর্তে সজাগ থাকতে হবে। রাশিয়ার অভিযানের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা ছিল বরফের অবরণে ঢাকা-পড়া গর্ত, গুহা। তার উপরে পা পড়লেই তলিয়ে যাওয়ায় প্রবল সম্ভবনা। খুব সতর্কতার সঙ্গে এগোতে হয়েছে।’
স্থানীয়দের সহযোগিতা
সঙ্গে কারা ছিলেন? শুভম জানালেন, ‘ভারত থেকে আমি একাই গিয়েছিলাম। আমার সঙ্গে ছিলেন তিনজন রাশিয়ান। ওঁরা খুব ভাল। যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন। যেহেতু ওদের কাছে আমি বিদেশি, তাই পেয়েছি বিশেষ সম্মান। তবে পর্বতারোহণের বিষয়ে ওঁরা আমাদের তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে। আমি পৃথিবীর কয়েকটি দেশে গেছি। সব জায়গায় স্থানীয়দের সহযোগিতা পেয়েছি।’
বাড়ির সমর্থন কতটা পেয়েছেন? তিনি জানালেন, ‘শুরু থেকেই আমি বাড়ির সমর্থন পেয়েছি। খুব ভালভাবেই। মা টেনশন করেন খুব। বেরোনোর আগে কান্নাকাটি করেন। বাবা তুলনায় মানসিকভাবে শক্ত। ভিতরে ভিতরে হয়তো টেনশন করেন, তবে বাইরে দেখান না।
বরাবরই বলেন এগিয়ে চলার কথা। আমি একটা ব্যবসা করি। বাইরে গেলে বাবা পুরো ব্যবসাটা দেখাশোনা করেন। উৎসাহ দেন পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবরাও। আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন আমার ছোটবেলার স্কুলের শিক্ষক-ছাত্ররা, সেন্টারের সবাই, শুভেচ্ছা জানিয়েছেন স্থানীয় পুরসভার চেয়ারম্যান দিলীপ যাদব-সহ অনেকেই।’
টার্গেট এভারেস্ট
শৃঙ্গ জয়ের নেশায় মেতে উঠেছেন শুভম। কোনও প্রতিষ্ঠান কি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে? তিনি জানালেন, ‘এখনও পর্যন্ত আমি যেসব জায়গায় গেছি, সব ব্যক্তিগত খরচে। অন্য কোনও সংস্থার সহযোগিতা নিইনি। কোনও স্পনসরের কাছেও যাইনি। যতদিন নিজের খরচে পারব যাব, ভবিষ্যতে হয়তো স্পনসরের কথা ভাবব। এই মুহূর্তে অন্য কোনও দিকে মনোনিবেশ করতে চাই না।’
টার্গেট কী? আর কোন কোন শৃঙ্গ জয় করতে চান? শুভম জানালেন, ‘জানুয়ারি মাসে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সবথেকে কম সময়ের মধ্যে পৃথিবীর সাতটি মহাদেশের সাতটি সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ও সাতটি সর্বোচ্চ আগ্নেয়গিরি আরোহণ করব। নাম তুলব গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডে। ইউরোপ এবং আফ্রিকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ দুটো ইতিমধ্যেই জয় করেছি। ২০২৪-এ ওশিয়ানিয়া মহাদেশের এবং ২০২৫-এর মধ্যে বাকি মহাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গগুলো জয় করতে চাই। ওশিয়ানিয়ার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কার্সটেন্স পিরামিডে পৌঁছনোর জন্য প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছি বাড়ি ফেরার পর থেকেই। কে-টু বা গডউইন অস্টিন পাকিস্তানে অবস্থিত। তাই ভারতীয়দের জন্য নিষিদ্ধ। নাহলে একবার ট্রাই করতাম। কাঞ্চনজঙ্ঘায় ওঠার ইচ্ছে আছে। ২০২৬-এ জয় করতে চাই মাউন্ট এভারেস্ট। পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গে আরোহণ করা আমার বহুদিনের স্বপ্ন। আশা করি সেই স্বপ্ন সফল হবে।’
অদম্য এক নারী
কম সময়ে এভারেস্টে
পর্বতারোহণ নিয়ে যাঁরা খোঁজখবর রাখেন, এই মুহূর্তে তাঁদের মুখে মুখে ফিরছে একটি নাম। ফুঞ্জো ঝাংমু লামা। কী করেছেন তিনি? সবথেকে কম সময়ে মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন। নেপালের এই নারী বর্তমানের পর্বতারোহীদের অনুপ্রেরণা। মাত্র ১৪ ঘণ্টা ৩১ মিনিটে এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছে নারীদের মধ্যে দ্রুততম আরোহণের রেকর্ড গড়ে বিশ্বকে বিস্মিত করেছেন। মাউন্ট এভারেস্টের বেসক্যাম্পের পর্যটন বিভাগের ফিল্ড অফিসের প্রধান খিম লাল গৌতম সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ফুঞ্জো লামা ২০২৪-এর ২২ মে স্থানীয় সময় বেলা ৩টা ৫২ মিনিটে মাউন্ট এভারেস্টের বেসক্যাম্প থেকে তাঁর যাত্রা শুরু করেন। পরদিন ২৩ মে সকাল ৬টা ২৩ মিনিটে তিনি বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্ট চূড়ায় পৌঁছান। ৮ হাজার ৮৪৯ মিটার উচ্চতায় পৌঁছতে তিনি সময় নিয়েছেন মাত্র ১৪ ঘণ্টা ৩১ মিনিট। এই ঘটনায় রীতিমতো সাড়া পড়ে গিয়েছে সারা বিশ্বে। প্রশ্ন জাগছে সবার মনে, কী করে পারলেন তিনি? কীভাবে করলেন অসাধ্যসাধন।
সাধারণত পর্বতারোহীদের মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছাতে কয়েক দিন সময় লাগে। উচ্চতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য এবং কম বায়ুচাপে শরীরকে বিশ্রাম দিতে পর্বতারোহীরা পর্বতের বিভিন্ন উচ্চতায় অবস্থিত ক্যাম্পগুলোয় আশ্রয় নেন। বিশ্রাম নিয়ে আবার পর্বতারোহণ শুরু করেন। কিন্তু ৩০ বছর বয়সি ফুঞ্জো লামা সবাইকে হতবাক করে দিয়ে কম সময়ে জয় করলেন মাউন্ট এভারেস্ট।
আরও পড়ুন-আরজি কর-কাণ্ডে দোষীদের ফাঁসির দাবি, রাম-বাম চক্রান্ত নিয়ে হুঁশিয়ারি, প্রতিবাদে উত্তাল বাংলা
আগেও গড়েছিলেন রেকর্ড
পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক রচিত হয়েছে বহু আগেই। ২০১৮ সালে ফুঞ্জো লামা ৩৯ ঘণ্টা ৬ মিনিটে এভারেস্টে আরোহণ করে নারীদের মধ্যে দ্রুততম সময়ে শীর্ষে পৌঁছানোর রেকর্ড গড়েছিলেন। তাঁকে সহযোগিতা করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান বন্ধু সামান্থ ম্যাকমোহন। এই মানুষটির অবদানের কথা ফুঞ্জো বারবার স্মরণ করেছেন। তাঁর রেকর্ড গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডে জায়গা পেয়েছিল। যদিও নিজের রেকর্ডের কথা জেনেছেন পরে। নিজের সময়সীমা নিয়েও খুব একটা সন্তুষ্ট ছিলেন না।
ফুঞ্জো লামার সেই রেকর্ড অক্ষত ছিল প্রায় তিন বছর। ২০২১ সালে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছিলেন হংকংয়ের আদা সাং ইয়িং-হং। তিনি ২৫ ঘণ্টা ৫০ মিনিটে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয় করেছিলেন। সেই রেকর্ড ভেঙে দিলেন ফুঞ্জো লামা। নারীদের দ্রুততম এভারেস্ট আরোহণের রেকর্ড আবারও নিজের নামে করে নিয়েছেন তিনি। সফল অভিযানের পর কাঠমান্ডুতে ফিরে ফুঞ্জো লামা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘আমি নতুন রেকর্ড গড়ার জন্য এভারেস্টে যাইনি। রেকর্ড আপনা-আপনি হয়ে গেছে। নেপাল পর্বতারোহণের জন্য বিখ্যাত। আমি আমার দেশের জন্য গর্বিত। আমার সৌভাগ্য, পর্বতারোহী হিসেবে আমি এই দেশের ঐতিহ্যের অংশ হতে পেরেছি।’
ঘুরে বেড়াতেন রুক্ষ পাহাড়ে
খুব সহজে সাফল্য পাননি। যথেষ্ট লড়াই করে এগোতে হয়েছে তাঁকে। সুমের ছোকাংপাড়ো গ্রামে জন্ম। বেড়ে উঠেছেন বারোজনের একটি বর্ধিত পরিবারে। তাঁর শৈশবের বেশিরভাগ সময় কেটেছে দাদার সঙ্গে। দাদা মি নরবু একজন পশুপালক। তিনি পালন করতেন ইয়াক, ড্রিস (মহিলা ইয়াক) এবং ডিজো (ইয়াক এবং গরুর মধ্যে হাইব্রিড)। পশুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতেন রুক্ষ পাহাড়ে। যেতেন ফুঞ্জো লামাও। এইভাবেই কম বয়সে পাহাড়ের সঙ্গে তাঁর বন্ধুতা তৈরি হয়। তাঁর মাতৃভাষা সুম কে (চিন-তিব্বতি) পড়াশোনার প্রতি ছিল গভীর আগ্রহ। কাঠমান্ডুতে প্রধানত ইংরেজি এবং নেপালি ভাষা শিখে নেন। অল্প সময়ের মধ্যেই ইংরেজিতে হয়ে ওঠেন তুখোড়। ২০১৫ সালে পর্বতারোহণের বিষয়ে তাঁর আগ্রহ জন্মায়। প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করেন অভিযান। সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, স্লোভেনিয়া, ফ্রান্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রিয়া, অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ভারত এবং চিনের তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে ঘুরে বেড়িয়েছেন। উঠেছেন বহু পর্বত শৃঙ্গে। একটা সময়ের পর তিনি একটি বড় দলকে গাইড করতে শুরু করেন, যাঁরা প্রধানত সুম এবং মানাসলু অঞ্চলে এবং তার আশেপাশে চূড়ায় আরোহণ করতে উৎসাহী। তিনি মাউন্ট এভারেস্ট ছাড়াও মাউন্ট মানাসলু, আমাদাব্লাম, লোবুচে অভিযান পরিচালনা করেন। হিমালয় এবং বিশ্বের অন্যান্য অনেক অনাবিষ্কৃত শৃঙ্গে অভিযান করেছেন।
আরও পড়ুন-ফাইনালের আগে বিনেশের মৃত্যু হতে পারত, দাবি কোচের
অক্সিজেন ছাড়াই আরোহণ
ফুঞ্জো লামা হলেন সুইস আল্পস এবং নেপালি হিমালয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রথম নেপালি মহিলা শেরপা। দীর্ঘ-লাইন স্লিং উদ্ধারকারী। তিনি প্রথম মহিলা এবং মা, যিনি সুম উপত্যকা এবং মানাসলু অঞ্চল থেকে মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় উঠেছেন। বিস্ময়কর ঘটনা, তিনি মাউন্ট চো ওযুথ অক্সিজেন ছাড়াই একা আরোহণ করেছিলেন।
বর্তমানে তিনি বহু পর্বতারোহীর আদর্শ। নারী হলেও, তাঁর মধ্যে রয়েছে পুরুষের তেজ। বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি কারও থেকে কম নন। দীর্ঘ সময় ধরে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। মহিলা শেরপারা তাঁকে দেখে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত হন। তিনি সবাইকে বলেন, ‘পর্বত হল প্রকৃতির দেওয়া এক আশ্চর্য উপহার। তাকে রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। আমাদের বুঝে চলা উচিত। পার্বত্য অঞ্চল যেন আমাদের কারণে দূষিত না হয়।’
যিনি রাঁধেন, তিনি চুলও বাঁধেন। এক শৃঙ্গ থেকে আরেক শৃঙ্গে ঘুরে বেড়িয়েই শুধুমাত্র তাঁর দিন কাটে না। তিনি কিন্তু ঘোরতর সংসারী। তিন সন্তানের মা। তাঁর বারো বছর বয়সি কন্যাকে বলে রেখেছেন, পর্বতারোহণ অত্যন্ত বিপজ্জনক। নানারকম প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়। এমন হতেই পারে, কোনও এক অভিযানে গিয়ে আর ফেরা হল না। তিনি মানসিকভাবে কতটা শক্ত সেটা তাঁর বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে বোঝা যায়।
ফুঞ্জো লামা জানেন, তাঁর রেকর্ড বেশিদিন অক্ষত থাকবে না। নতুন কোনও মহিলা এসে আরও কম সময়ে মাউন্ট এভারেস্টে উঠে তাঁর রেকর্ড ভেঙে দেবেন। সেই দিনের প্রতীক্ষায় আছেন তিনি। সবাইকে পরামর্শ দেন, উঁচু শৃঙ্গ জয় করতে হলে মনটা উঁচু করতে হবে। চাইতে হবে দেশ ও দশের মঙ্গল। তাঁর পরিচালনায় ২০২৫ এবং ২০২৬ সালে মাউন্ট এভারেস্ট অভিযানে যাবেন নতুন কয়েকজন পর্বতারোহী। এই মুহূর্তে তিনি দারুণ ব্যস্ত এবং উত্তেজিত। আরও এক সাফল্য অপেক্ষা করছে নেপালের অদম্য এই নারীর জন্য।