অভিজিৎ ঘোষ: চোরের মায়ের বড় গলা। সিপিএম আর বিজেপির জন্যই বোধহয় শব্দব্রহ্মটি তৈরি হয়েছিল। আরজি করের ছাত্রীমৃত্যুর প্রকৃত দোষীদের শাস্তি হোক, শুভবুদ্ধিসম্পন্নরা চান। সিপিএম-বিজেপি কিন্তু চায় না দোষীদের তদন্তকারী সংস্থা দ্রুত খুঁজে বের করুক। কারণ, দোষীরা ধরা পড়ে গেলে ওরা রাস্তায় নামবে কোন ইস্যু নিয়ে? আবার তো ঘরে ঢুকে যেতে হবে! দীনতা, শূন্যতা, ডায়ালগ সর্বস্ব, অন্তর্কলহে জড়িত পার্টির চেহারাটা কঙ্কালসার দেহের মতো বেরিয়ে পড়বে!
আরও পড়ুন-হিমাচলে মেঘভাঙা বৃষ্টি, হড়পা বানে মৃত ৩১
তদন্ত নিয়ে সিপিএম প্রায় বলশেভিক বিপ্লবের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে। যাঁরা এইসব বিপ্লব করেন আর ভোটের বাক্সে শূন্য পান, তাঁদের যদি বুকের পাটা থাকে, সাহস থাকে, সততা থাকে, তাহলে বলুন আরজি করে ‘খুন’ হয়ে যাওয়া ডাক্তার সৌমিত্র বিশ্বাসের মৃত্যুরও তদন্ত চাই। সিবিআই তো তদন্ত করতে এসেছে। এটার দায়িত্বও তাদের দেওয়া হোক। এক ঢিলে দুই পাখি মারা হয়ে যাবে। তাই না?
সৌমিত্রকে চেনেন? ২০০১ সাল। আরজি করের পড়ুয়া ছিল সৌমিত্র। কেন তাকে মরতে হল? কেমন ছিল সেদিনের আরজি কর? বাম জমানা। হাসপাতাল জুড়ে চলে সেক্স র্যাকেট, সঙ্গে পর্নোগ্রাফি তৈরির নোংরা চক্রান্ত। মেধাবী, সৎ সৌমিত্র এই চক্রের কথা জেনে ফেলেছিল। হাত মেলাতে চায়নি। প্রতিবাদ করেছিল। কমরেড, সৌমিত্র তৃণমূল করত না। ওখানে অন্য কোনও ছাত্র সংগঠনের ঢোকা ‘নিষিদ্ধ’ ছিল। সন্ত্রাস চালিয়ে সন্ত্রস্ত করে রাখত। সৌমিত্রকে প্রতিবাদের চরম মূল্য চোকাতে হয়েছিল। কীভাবে? এসএফআই নেতা আর সিপিএম নেতারা এক রাতে বেধড়ক মেরে অচৈতন্য করে ফেলে সৌমিত্রকে। এখানেই থেমে থাকেনি। এরপর হস্টেলের ঘরে তার দেহ ঝুলিয়ে দিয়ে পরের দিন বলা হয়েছিল, সৌমিত্র আত্মহত্যা করেছে। সেটা অগাস্টেরই ২৫ তারিখ। বামেদের পুলিশ আত্মহত্যা বলে তদন্তের খাতা বন্ধ করে দিয়েছিল। কমরেড, এবার সেই বন্ধ খাতাটা খোলার কথা বলুন। সাহস থাকলে বলুন, সেদিনের ঘটনারও তদন্ত হোক। সিবিআই চাই। উই ওয়ান্ট জাস্টিস।
আরও পড়ুন-মোদি-ম্যাজিকের বেহাল ছবি, উদ্বেগ
শুনবেন আরজি করে কী চলত তখন? প্রাক্তনীদের মুখেই শুনুন। পরীক্ষায় পাশ করতে গেলে হাসপাতালের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতাকে অনুগ্রহ দিতে হত। এক সুন্দরী ছাত্রী তা দিতে অস্বীকার করেছিলেন। বাম নেতার দাবি ছিল, রোজ সন্ধ্যায় বন্ধ ঘরে তাঁর সঙ্গে সময় কাটিয়ে যেতে হবে। ছাত্রীটিকে সেমেস্টারে ফেল করিয়ে দেওয়া হয়। নিরুপায় পড়ুয়া টানা দু’মাস সেই চিকিৎসক নেতার ঘরে ‘গোপন ডিউটি’ দেওয়ার পর স্পেশাল সাপ্লিমেন্ট পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছিলেন। প্রাক্তনীরা বলছেন, সেই সময় হস্টেলে নিষিদ্ধপল্লির মেয়েরাও এসে রাতে ঘুমিয়ে যেত। একবার সেক্স ও পর্নো র্যা কেটের একজন গ্রেফতার হলে, তাকে জামিন করাতে বিদেশ থেকে লোক এসেছিল। জাল এতটাই বিস্তৃত ছিল। জাল ওষুধ বিক্রি, ভুয়ো বিল, ভর্তি নিয়ে টাকার খেলা, টেন্ডার থেকে টাকা কামাই, সবই চলত। জেলায় জেলায় ছিল তার শাখা-প্রশাখা। এমনকী রাজ্যের বাইরেও। জানত আলিমুদ্দিন। আলিমুদ্দিনের বিশ্বাসভাজনরাই তো সেখানে ছড়ি ঘোরাত।
মনে হচ্ছে বানানো কাব্য-কাহিনি? বেশ। কমরেড, সাহস থাকলে বলুন, সৌমিত্র বিশ্বাসের রহস্যমৃত্যুর শাস্তি চাই। সিবিআই বর্তমান ঘটনার তদন্ত করছে। আরজি করের ঘটনার তদন্ত হবে। দোষীরা শাস্তি পাবে। কিন্তু যে নরকের কীটেরা সৌমিত্রের মতো আরও অনেকের জীবন নষ্ট করে মৃত ছাত্রীর লাশের উপর নোংরা রাজনীতি করতে চাইছে, তাদের মুখোশ পারলে খুলে দিক সিবিআই। অবশ্য সিবিআই তো আবার কমরেডদের বন্ধুদের কথাতেই ওঠবোস করে।