সংবাদদাতা, নয়াদিল্লি : আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে কোনও রাজনীতি নয়। দেশের সব রাজনৈতিক দলগুলির উদ্দেশ্যে কড়া বার্তা দিল সুপ্রিম কোর্ট৷ বৃহস্পতিবার দেশের শীর্ষ আদালতে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে দায়ের করা মামলার শুনানিতে এই মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়৷ তাঁর পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, আইন তার নির্দিষ্ট পথেই চলবে৷ আমরা সবাই চিকিত্সকদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। শুধু গাইডলাইন তৈরি করেই থামব না আমরা। তাঁদের সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে৷ এসব নিয়ে কোনওভাবে রাজনীতি করা যাবে না৷ রাজনৈতিক দলগুলিকেও বুঝতে হবে এই বিষয়টি৷
আরজি কর-কাণ্ডে সোশ্যাল মিডিয়ায় যেভাবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, ভুয়ো ও বিকৃত তথ্য উঠে আসছে, তা নিয়েও বৃহস্পতিবার তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি৷ এদিনের শুনানিতে জনৈক আইনজীবী সওয়াল করতে গেলে প্রধান বিচারপতি তাঁকে বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ার উদাহরণ তুলে ধরে এখানে সওয়াল করবেন না৷ আমরা জানি ১৫০ গ্রাম দেহরস বলতে কী বোঝানো হয়েছে৷ আমাদের সামনে আসল রিপোর্ট আছে৷ আরজি কর-কাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মবিরতি পালন করা সরকারি হাসপাতালের চিকিত্সকদের অবিলম্বে কাজে ফেরারও নির্দেশ দিয়েছেন দেশের প্রধান বিচারপতি৷ তাঁর সাফ কথা, ন্যায়বিচার এবং ধর্মঘট একযোগে চলতে পারে না। একই সঙ্গে প্রধান বিচারপতি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিবকে সব রাজ্যের মুখ্যসচিব ও ডিজিপির সঙ্গে বৈঠকে বসারও নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সব সরকারি হাসপাতালে কর্মরত চিকিত্সকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই হবে৷ দু’সপ্তাহের মধ্যে এর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে হবে৷ ধর্মঘটি চিকিত্সকেরা কাজে ফিরলে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনওরকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না বলে তারও সুনির্দিষ্ট আশ্বাস দিয়েছেন ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়৷ গতদিনের শুনানিতে যে ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে, তাদের রিপোর্ট দেখেই চূড়ান্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে শীর্ষ আদালত, বৃহস্পতিবার তাও স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।
আরও পড়ুন-কড়া আইন করে ১৫ দিনের মধ্যে ধর্ষকদের শাস্তি, প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি মুখ্যমন্ত্রীর
তাৎপর্যপূর্ণ হল, এদিনের শুনানির শুরুতেই রাজ্য সরকার এবং সিবিআই শীর্ষ আদালতের কাছে আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে আলাদা ভাবে স্টেটাস রিপোর্ট পেশ করে৷ স্টেটাস রিপোর্টে রাজ্যের তরফে টাইমলাইন তুলে ধরে গোটা ঘটনাক্রম ব্যাখ্যা করা হয়৷ তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুর পরে মধ্যরাতে হাসপাতালে যে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছিল তার পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা পুলিশ যেভাবে তদন্ত করছে তার সংক্ষিপ্ত বিবরণও উল্লেখ করা হয়েছে এই রিপোর্টে৷ এদিন রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিবাল দাবি করেন, তাঁদের পেশ করা স্টেটাস রিপোর্ট সিলকরা অবস্থায় রাখতে হবে এবং কোনওভাবেই তা শেয়ার করা যাবে না সিবিআইয়ের সঙ্গে৷ শীর্ষ আদালত সিবালের এই দাবিকে মান্যতা দিয়েছে৷ এর পাশাপাশি কপিল সিবাল দাবি করেন, আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে কীভাবে রাজনীতি করছে রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপি৷ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা বলছেন গুলি ছোঁড়া হবে, অ্যাসিড বোমা ছোঁড়া হবে৷ এইভাবে তিনি রাজনীতি করতে পারেন না৷ তাঁর এই কথার সূত্র ধরেই প্রধান বিচারপতি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দেন, আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে কোনওভাবেই রাজনীতি করা যাবে না৷ প্রধান বিচারপতি এদিন নির্দেশ দিয়েছেন শুক্রবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে এই ঘটনায় ধৃতের পলিগ্রাফ টেস্ট নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে এসিজেএম শিয়ালদহকে৷ আগামী ৫ সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানি। সেদিন ফের স্টেটাস রিপোর্ট জমা দেবে সিবিআই ও রাজ্য সরকার। এমনই নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়৷